*রাজধানীর পল্লবীর চাঞ্চল্যকর এসএসসি পরীক্ষার্থী রাকিব’কে সশস্ত্র হামলায় গুরুতর আহত মামলার আসামী চিহ্নিত কিশোর গ্যাং লিডার রমজান ও আল আমিনসহ ০৫ জনকে যশোর, ঝালকাঠি, আশুলিয়া এবং রাজধানীর মিরপুর ও যাত্রাবাড়ী থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৪।*
১। র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, র্যাব এলিট ফোর্স হিসেবে আত্মপ্রকাশের সূচনালগ্ন থেকেই বিভিন্ন ধরনের অপরাধ নির্মূলের লক্ষ্যে অত্যন্ত আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে আসছে। খুন, ডাকাতি, দস্যুতা, ধর্ষণ, অপহরণ, চাঁদাবাজি, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসী গ্রেফতার এবং জঙ্গীবাদের মত ঘৃণ্যতম অপরাধ নির্মূল ও রহস্য উদঘাটনের পাশাপাশি মাদকদ্র্রব্য উদ্ধার, মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার সহ নেশার মরণ ছোবল থেকে তরুন সমাজকে রক্ষা করার জন্য র্যাবের জোড়ালো তৎপরতা অব্যাহত আছে। র্যাব-৪ বিগত দিনগুলোতে কিশোর গ্যাং অপরাধ নির্মূলে সাফল্যজনক অভিযান পরিচালনা করেছে যার মধ্যে আশুলিয়ার চাঞ্চল্যকর খাদেমের পায়ের রগ কাটা মামলার আসামী কিশোর গ্যাং রাকিব-ইমন গ্রুপের লিডার রাকিব ও ইমনকে বিদেশী পিস্তলসহ গ্রেফতার এবং পল্লবীর চাঞ্চল্যকর জাহিদ হত্যা মামলার আসামী কিশোর গ্যাং ইফরান গ্রুপের লিডার ইফরানসহ ০৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়াও র্যাব-৪ কর্তৃক বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ৫০ জন কিশোর গ্যাং সদস্যকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
২। গত ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখ সন্ধ্যা আনুমানিক ০৬.১৫ ঘটিকার সময় পল্লবীর সি-ব্লকে ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী রাকিব(১৬) এর উপর এলাকার চিহ্নিত কিশোর গ্যাং জুনিয়র গ্রুপের প্রধান রমজান ও আল-আমিনসহ অন্যান্য সহযোগীরা হামলা করে। হামলাকারীরা পেছন থেকে ভিকটিমের শরীরের পিছনের অংশ পিঠে চাকু দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে গুরুতর আহত করে মোবাইল ও মানিব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যায়। এ হামলায় ভিকটিম রাকিব এর অবস্থা সংকটাপন্ন হলে এলাকাবাসী ও পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। হামলায় আহত হওয়ার পূর্বে ভিকটিম ০৫ টি পরীক্ষা দিয়েছিল এবং ৬ষ্ঠ পরীক্ষার দিন হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে দিতে আসলে পরীক্ষা চলাকালে সম্পূর্ণ অচেতন হয়ে পড়লে তাকে পরীক্ষার হল থেকে পূনরায় হাসপাতালে প্রেরণ করতে হয়। পরবর্তীতে সে আর অবশিষ্ট পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেনি। এ হামলায় বর্তমানে ভিকটিমের মেরুদন্ড ক্ষতিগ্রস্থসহ শরীরের নিচের অংশ পুরোপুরি অবশ হয়ে যায়। বর্তমানে সে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সিসিইউ বিভাগে জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন। এ ঘটনায় ভিকটিমের পিতা আব্দুল্লাহ বাদী হয়ে পল্লবী থানায় আসামী রমজান, আল আমিন, বিজয়, ছোট রমজান, পপকন এবং হাসিবসহ অজ্ঞাতনামা আরো ১০/১২ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করেন যার মামলা নং-৬৭, তারিখঃ ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ধারাঃ ১৪৩/৩২৩/৩২৬/৩০৭/৫০৬ দন্ডবিধি। উক্ত সংবাদটি বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রচার-প্রচারণা হলে দেশব্যাপী ব্যাপক ভীতি ও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এছাড়াও সংশ্লিষ্ট এলাকার লোকজন কিশোর গ্যাং গ্রুপের প্রধান রমজান ও আল আমিনসহ অন্যান্যদের গ্রেফতারের জন্য এলাকাবাসি ব্যাপকভাবে মানববন্ধন করে। এরই প্রেক্ষিতে র্যাব-৪ উক্ত ঘটনার ছায়া তদন্ত শুরু করে ও জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।
৩। এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-৪ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল ০৬ অক্টোবর ২০২২ রাতে রাজধানীর মিরপুর, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা জেলার আশুলিয়া, যশোর এবং ঝালকাঠি’তে অভিযান পরিচালনা করে উক্ত চাঞ্চল্যকর হত্যাচেষ্টা মামলার আলোচিত কিশোর গ্যাং জুনিয়র গ্রুপের প্রধানসহ নিম্নোক্ত আসামীদেরকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়ঃ
ক। মোঃ রমজান (২০), জেলা- মাদারীপুর।
খ। আল আমিন (২০), জেলা- যশোর।
গ। ইসমাইল হোসেন @ পপকন (১৮), জেলা- ঝালকাঠি।
ঘ। বিজয় (১৭), জেলা- ঢাকা।
ঙ। মোঃ ইয়াসিন আরাফাত @ সাইমন (১৭), জেলা- পটুয়াখালী।
৪। গ্রেফতারকৃত আসামীদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, ভিকটিম রাকিব ও গ্রেফতারকৃত আসামীরা মিরপুর-১২ এলাকার বাসিন্দা। উক্ত এলাকায় আধিপত্য বিস্তার এবং মাদকের অপব্যবহারসহ গ্যাং কালচারের প্রবণতা আছে। সেখানে সিনিয়র গ্রুপ জুনিয়র গ্রুপ নামে দুটি পৃথক কিশোর গ্যাং রয়েছে যারা এলাকায় ইভটিজিং, ছোটখাট ছিনতাইসহ মাদক সেবন ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তারে লিপ্ত থাকে। উক্ত দুইটি গ্রুপ এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সার্বক্ষনিক দাঙ্গা হাঙ্গামায় লিপ্ত থাকে। ভিকটিম রাকিব সিনিয়র গ্রুপের সাথে চলাফেরা ছিল এবং গ্রেফতারকৃত আসামীরা জুনিয়র গ্রুপের সদস্য। ঘটনার কয়েকদিন পূর্বে জুনিয়র গ্রুপের সদস্য আসামী রমজান, আল আমিন, বিজয়, ইয়াসিনসহ আরো ৫/৬ জন মিলে মিরপুর-১২, ডি ব্লকে ধুমপানকালীন তাদের পাশ দিয়ে সিনিয়র গ্রুপের কয়েকজন সদস্য গেলে আসামীরা তাদেরকে কোন প্রকার সম্মান প্রদর্শন করেনি বিধায় ঐসময় সিনিয়র গ্রুপের সদস্যরা তাদেরকে বিভিন্ন প্রকার হুমকিসহ ধস্তাধস্তি ও চর-থাপ্পর মারে। পরবর্তীতে এই ঘটনার রেশ ধরে গত ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখ সন্ধ্যা আনুমানিক ০৬.১৫ ঘটিকার সময় পল্লবী থানাধীন সেকশন-১২, ব্লক-সি এর কাটা গলি’তে জুনিয়র গ্রুপের ১২/১৫ জন সদস্য দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র (ছুরি, সুইস গিয়ার, হকি স্টিক, এসএস পাইপ, লোহার রড) নিয়ে ভিকটিম রাকিবকে একা পেয়ে পথরোধ করে। আসামী রমজান হত্যার উদ্দেশ্যে ভিকটিম রাকিবকে পেছন থেকে পিঠে উপূর্যপুরি চাকু দিয়ে আঘাত করে, আল আমিন, বিজয়, ইয়াসিনসহ অন্যান্য আসামীরা তাকে চর, কিল-থাপ্পরসহ উপূর্যপুরি আঘাত করে গুরুতরভাবে জখম করে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় ভিকটিম রাকিবের পরিবার ভিকটিম’কে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করায়। বর্তমানে ভিকটিম ঢাকা মেডিকেল কলেজে অত্যান্ত গুরুতর অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছে। গ্রেফতারকৃত আসামীরা সকলেই উক্ত ঘটনায় ভিকটিম রাকিব’কে মারমিট এবং ছুরিকাঘাতের সাথে জড়িত মর্মে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে।
৫। গ্রেফতারকৃত প্রধান আসামী রমজান (২০), রাজধানীর পল্লবী থানাধীন সেকশন ১২, রোড নং-০৩ এ পরিবারের সাথে বসবাস করে। তার বাবা এলাকায় ফেরি করে মুরগী বিক্রয় করে। আসামী রমজান ৭ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করে এখন জুনিয়র কিশোর গ্যাং গ্রুপের প্রধান হিসেবে প্রকাশ্যে ইভটিজিং, ছিনতাই, মাদক সেবনসহ এলাকায় আধিপত্য বিস্তারে মারামারিসহ অন্যান্য অপরাধে জড়িত। মাদকসেবী হওয়ায় মূলত মাদকের অর্থ যোগানের জন্য নানাবিধ অপকর্মে লিপ্ত।
গ্রেফতারকৃত আসামী আল আমিন (২০) রাজধানীর পল্লবী থানাধীন সেকশন ১২, রোড নং-০৩ এ পরিবারের সাথে বসবাস করে। সে স্থানীয় একটি স্কুল হতে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে এবং বর্তমানে জুনিয়র কিশোর গ্যাং গ্রুপের নেতৃত্বস্থানীয় সদস্য হিসেবে প্রকাশ্যে ইভটিজিং, ছিনতাই এবং মাদক কারবারির সাথে জড়িত আছে বলে জানা যায়। সে বিভিন্ন মাদকদ্রব্য সেবন করে থাকে।
গ্রেফতারকৃত আসামী ইসমাইল হোসেন @ পপকন (১৮), রাজধানীর পল্লবী থানাধীন সেকশন ১২, সি ব্লকে, বাবা মৃত, সে তার মায়ের সাথে মামার বাসায় বসবাস করে। সে স্থানীয় একটি স্কুলের ৮ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। এলাকায় সে জুনিয়র কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্য হিসেবে ইভটিজিংসহ অন্যান্য অপরাধের সাথে জড়িত আছে বলে জানা যায়।
গ্রেফতারকৃত আসামী বিজয় (১৭), রাজধানীর পল্লবী থানাধীন সেকশন ১২, ডি ব্লকে পরিবারের সাথে বসবাস করে। তার বাবার এলাকায় ভাঙ্গারীর ব্যবসা রয়েছে। আসামী বিজয় ৩য় শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করে এখন জুনিয়র কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্য হিসেবে প্রকাশ্যে ইভটিজিং, ছিনতাই এবং মাদক কারবারির সাথে জড়িত আছে বলে জানা যায়। সে নিজেও একজন নিয়মিত মাদকসেবী।
গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ ইয়াসিন আরাফাত @ সাইমন (১৭), রাজধানীর পল্লবী থানাধীন সেকশন ১২, সি ব্লকে পরিবারের সাথে বসবাস করে। তার বাবা এলাকায় ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। সে স্থানীয় একটি স্কুলের ১০ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। এলাকায় সে জুনিয়র কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্য হিসেবে ইভটিজিংসহ এলাকায় প্রকাশ্যে মাদক সেবন করে থাকে।
৬। *কিশোর গ্যাং প্রতিরোধে র্যাব-৪ এর কার্যক্রমঃ* বর্তমানে রাজধানীতে বহুল আলোচিত বিপদগামী কিশোর গ্যাং বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী, চাদাবাজী, ছিনতাই, নারীদের ইভটিজিংসহ মাদক সেবন ও ব্যবসায় ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়ছে। শিশু-কিশোরদের মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ, ধর্মীয়, নৈতিক শিক্ষাসহ পারিবারিক বন্ধন জোরদারের বিষয়ে আরো যতœবান হওয়ার লক্ষ্যে র্যাব-৪ তার দায়িত্বপূর্ণ এলাকার স্কুল-কলেজে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন পরিচালনার পাশাপাশি কিশোর-তরুণদের গ্যাং কালচারের বিরুদ্ধে সামাজিকভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। কিশোর গ্যাং কালচার রোধে র্যাব-৪ এর এরুপ জনকল্যাণমূলক কার্যক্রম এবং এ ধরনের বিপথগামী কিশোর অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য র্যাব সদা সচেষ্ট।
৭। গ্রেফতারকৃত আসামীদের’কে প্রয়োজনীয় আইনানুগ কার্যক্রমের জন্য পল্লবী থানায় হস্তান্তর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। এছাড়াও উক্ত হত্যাচেষ্টার সাথে জড়িত অন্যান্য পলাতক আসামীদেরকে গ্রেফতাররের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। কিশোর গ্যাং এর অন্যান্য গ্রুপের বিষয়েও অনুসন্ধান চলমান, কোন অভিযোগ পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এই ধরনের কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে র্যাবের জোড়ালো অভিযান অব্যাহত থাকবে।