স্টাফ রিপোর্টার: ১৯৫৬ সালে স্থাপিত কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার শিমুলবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালটির অখন্ড জমির পরিমাণ ২ একর ৩২ শতাংশ জমি থাকার পরও খেলার মাঠ নষ্ট হবার অজুহাত তুলে বার বার পিছিয়ে যাচ্ছে শহীদ মিনার নির্মাণের কাজ। ইতিমধ্যে উপজেলার সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শহীদ মিনার নির্মাণের কাজ চলমান ও শেষ হলেও এ বিদ্যালয়ে তা এখন পর্যন্ত শুরু করা সম্ভব হয়নি এক অদৃশ্য মৌলবাদী অপশক্তির কারণে।
সরেজমিনে গিয়ে জানাগছে,শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য প্রথমবার স্থান নির্ধারণ করা হয় বিদ্যালয়ের মাঠের পশ্চিম প্রান্তে। সেখানে স্থানীয় কতিপয় ছেলে বাধা দিলে দ্বিতীয়বার বিদ্যালয়ে এর ম্যানেজিং কমিটি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শরিফুল আলম মিয়া সোহেল দুজন সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও সহকারী শিক্ষা অফিসার হৃদয় কৃষ্ণ বর্মন এর উপস্থিতি ও সিদ্ধান্তে খেলার মাঠের পশ্চিম প্রান্তে শহীদ মিনার নির্মাণের স্থান পুনরায় নির্ধারণ করে কাজ শুরু করলে আবারও একইভাবে বাঁধা আসে। বিষয়টি ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে জানালে পরবর্তীতে তাঁরা সরেজমিনে গিয়ে খেলার মাঠ ঠিক রেখে ম্যানেজিং কমিটির সাথে নিয়ে বিদ্যালয়ের পতাকা স্ট্যান্ডের পাশে শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য ঐক্যমত পোষণ করেন ও প্রধান শিক্ষককে তা নির্মাণের নির্দেশ প্রদান করেন। প্রধান শিক্ষক রুমা বেগম কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মতো গত ২৯ জুন পতাকা স্ট্যান্ডের পাশে শহীদ মিনার নির্মাণের কাজ শুরু করলে একটি স্বার্থান্বেষী মহল এলাকার তরুণ ও এলাকাবাসীকে উস্কিয়ে দিয়ে পুনরায় নির্মাণ কাজে বাধা প্রদান করেন। এক পর্যায়ে বাধা প্রদানকারী ছেলেরা মিস্ত্রি ও শিক্ষকদের সাথে চড়াও হলে ফুলবাড়ী থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি শান্ত করে। পরে ফুলবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ ফজলুর রহমান বাধা দানে সত্যতা যাচাই করে বাধা দানকারীদের কিছু নাম সংগ্রহ করে এবং তাদেরকে সতর্ক করেন ,এ সময় বাধা দানকারী ছেলেরা বিদ্যালয়ের দুই ভবনের মাঝখানে নির্ধারিত ভবন এক্সটেনশন স্থানে শহীদ মিনার নির্মাণ করতে বলে, যা শহীদ মিনারকে অবমাননা করার শামিল। বিদ্যালয়ে অখন্ড ২ একর ৩২ শতাংশ জমির উত্তরের সীমানা ঘেঁষে দুটি ভবনের পিছনে ১০ শতাংশ জমির ব্যয় হয়ে সম্মুখে পড়ে আছে এক বিশাল মাঠ। জানা গেছে উপজেলার মোট ১৪৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে সর্বোচ্চ জমি এ প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে অথচ একটি শহীদ মিনার নির্মাণের জায়গা হচ্ছে না।
শহীদ মিনার নির্মাণে বাধা দানকারী কায়ুমসহ একাধিক এলাকাবাসী জানান,খেলার মাঠ রক্ষা করার জন্য এলাকাবাসী সহ আমরা শহীদ মিনার নির্মাণের বাধা দিচ্ছি,আমাদের কথা না শুনে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা চেয়ারম্যান পতাকা স্ট্যান্ডের পাশে শহীদ মিনার নির্মাণের জায়গা নির্ধারণ করেছে। বিদ্যালয়ের দুই ভবনের মাঝে আমারা শহীদ মিনার চাই।
শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল লতিফ জানান, এই বিদ্যালয়টিতে কয়েকবার শহীদ মিনার নির্মাণে বাধা এসেছে, সর্বশেষ যে স্থানটিতে শহীদ মিনার নির্মাণের জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে সেটি মাঠ থেকে বাইরে একটি স্বার্থান্বেষী মহল খেলার মাঠ নষ্টের অজুহাত তুলে এলাকাবাসীকে উসকে দিয়ে বার বার শহীদ মিনার নির্মাণে বাধা প্রদান করছেন। আমি একজন বীর মুক্তিযুদ্ধ হয়ে দ্রুত শহীদ মিনারটি নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।
শিমুলবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি নজির হোসেন জানান, এলাকার একটি স্বার্থন্বেষী মহল অত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের নিকট সুযোগ সুবিধা নেয়ার প্রস্তাব দিলে প্রধান শিক্ষক তা প্রত্যাখ্যান করেন। তারই ধারাবাহিকতায় খেলার মাঠ নষ্ট হওয়ার অজুহাত তুলে এলাকার কিছু জামাত-শিবিরের লোকজনকে নিয়ে বার বার শহীদ মিনারটি নির্মাণে বাধা প্রদান করছেন। দ্রুত শহীদ মিনারটি নির্মাণে কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপের জোর দাবি জানাচ্ছি।
শিমুল বাড়ির সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুমা বেগম জানান, বার বার শহীদ মিনার নির্মাণে বাধা প্রাপ্ত হলে সর্বশেষে আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা শিক্ষা অফিসার মহোদয়কে জানালে , উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান , উপজেলা শিক্ষা অফিসার সরজমিনে এসে পতাকা স্ট্যান্ডের পাশে শহীদ মিনার নির্মাণের জায়গা নির্ধারণ করে দেন সেই স্থানে শহীদ মিনার নির্মাণ করতে ধরলে সেটিতেও একটি কুচক্রী মহল ও এলাকাবাসী বাধা প্রদান করেন। বর্তমানে শহীদ মিনারের কাজ বন্ধ রয়েছে ।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার ভারপ্রাপ্ত আশরাফুজ্জামান জানান,শিমুলবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে খেলার মাঠ নষ্ট হওয়ার অজুহাতে তুলে বার বার স্থানীয় ছেলে বাধা প্রদান করার প্রেক্ষিতে, ২৯ জুন সরেজমিনে গিয়ে খেলার মাঠ ঠিক রেখে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ মিলে ওই বিদ্যালয়ের পতাকা স্ট্যান্ডের পাশে শহীদ মিনার নির্মাণের জায়গা নির্ধারণ করলে আবারো স্থানীয় ছেলেরা বাধা প্রদান করেন। শহীদ মিনার নির্মাণের বাধা দেয়ার কথা উপজেলা নিবার্হী অফিসার শুনেছেন ওই স্থানে শহীদ মিনার নির্মাণ হলে খেলার মাঠের নষ্ট হবে না তিনি মত দিয়েছেন। ঈদের পরে বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।