কুষ্টিয়ার মিরপুরে যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনে মনিরা খাতুন মীম (২৩) নামে এক গৃহবধূকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। রবিবার (১৪ আগস্ট) সকালে মীমের শ্বশুরবাড়ি মিরপুর উপজেলার সদরপুর ইউনিয়নের নওদাআজমপুর থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার পর থেকে নিহতের স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি পলাতক রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
নিহত মনিরা খাতুন মিম (২৩) কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার সদরপুর ইউনিয়নের কাতলামারী এলাকার দিনমজুর মনিরুল ইসলামের মেয়ে। এবং একই ইউনিয়নের নওদা আজমপুর এলাকার সজিব মোল্লা অনিকের স্ত্রী।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের টাকার জন্য প্রায়ই মীমকে মারধর করতো স্বামী সজিব। এ নিয়ে পারিবারিক কলহ লেগেই থাকতো। গত ২ দিন ধরে মীমকে খেতে না দিয়ে শনিবার বিকেলে তাকে মারধর করে শ্বশুর বাড়ির লোকজন। এতে অতিষ্ট স্থানীয়রাও তাদেরকে বাধা দেয়। পরে রাতে আবার চিৎকার শুনতে পান প্রতিবেশীরা। পরদিন সকালে আশপাশের লোকজন জানতে পারে রাতে গলায় দড়ি দিয়ে মারা গেছে মীম।
মীমের বাবা মনিরুল ইসলাম জানান, “শনিবার (১৩ আগস্ট) রাত ৮টার দিকে ফোন করে মীম। ফোন দিয়ে বলে “আব্বা এরা আমাকে মেরে ফেলবে। আমাকে এসে নিয়ে যাও, আমাকে বাঁচাও। তাৎক্ষনিক জামাই অনিক মীমের কাছ থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে বলে, আমার ২০ হাজার টাকা দরকার। কোথায় পাবেন তা জানি না। যদি আমাকে টাকা না দেন, তাহলে আপনার মেয়েকে মারতে মারতে মেরে ফেলবো।” তখন আমি তাকে বলি, আমি গরিব মানুষ টাকা কোথায় পাবো? মেয়েকে মেরে ফেললেও এখন টাকা দিতে পারবো না।”
তিনি আরও জানান, পরিবারের অমতে পাঁচ বছর আগে প্রেমের সম্পর্ক করে বিয়ে করে মীম ও অনিক। পরে জামাইকে তিনি এক লাখ টাকা নগদ দেন। কিছুদিন বাদে বাদেই টাকা চাইলে আরও ৮০ হাজার টাকার মতো দেন। কিন্তু মেয়ের সুখ আসে না। এর আগেও টাকার জন্য মীমকে মারধর করে অনিক। মাঝে মাঝে এমন মারধর করলে তিনি একাধিকবার মেয়েকে তার বাড়িতেও নিয়ে গেছেন। গতকাল এসে যদি মেয়েকে নিয়ে যেতেন তাহলে আজ হয়তো মেয়ের লাশ দেখতে হতো না। মেয়ের হত্যার বিচার চাই। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই যাতে আর কোন বাবার বুক এভাবে খালি না হয়।
নিহত মীম ও সজিবের সংসারে তিন বছরের একটি মেয়ে এবং মাত্র আট মাসের আরেকটি মেয়ে শিশু রয়েছে।
ঘটনাস্থলের নিকটস্থ আমলা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (এসআই) হাফিজুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে পারিবারিক কলহের জন্য এ ঘটনা ঘটতে পারে। তবে ঘটনাটি হত্যা না কি আত্মহত্যা তা জানা যাবে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট আসলে। ঘটনার পর থেকে মীমের স্বামী, শশুর ও শাশুড়ি পলাতক রয়েছেন।