খুলনা ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট সোমবার (১২ জুন)। এদিন সকাল ৮টা থেকে ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। ইভিএমে ভোট চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। ভোটগ্রহণের সব প্রস্তুতি এরইমধ্যে শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন। ভোটের সরঞ্জাম পৌঁছে দেয়া হয়েছে প্রতিটি কেন্দ্রে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, জাকের পার্টি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থীসহ স্বতন্ত্র প্রার্থী এই দুই সিটিতে ভোটের লড়াইয়ে থাকলেও বিএনপি না থাকায় অনেকটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন আরেকটি নির্বাচন হতে যাচ্ছে। তবে বিএনপি আগেই ঘোষণা করেছিলো তারা এ নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবে না।
সুষ্ঠু ভোটের সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। প্রস্তুত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। খুলনায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ ও র্যাবের পাশাপাশি ১১ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। বরিশাল সিটি করপোরেশনে কড়া নিরাপত্তাবলয় তৈরি করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। খুলনা ও বরিশাল থেকে পাঠানো প্রতিবেদন।
খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন বলেন, রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় খুলনা বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স থেকে ভোটকেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তার কাছে নির্বাচনী সরঞ্জাম হস্তান্তর করা হয়। পরে তা প্রতিটি কেন্দ্রে নিয়ে যান সংশ্লিষ্টরা।
এ নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক (নৌকা), জাতীয় পার্টি মনোনীত মো. শফিকুল ইসলাম মধু (লাঙল), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত মো. আব্দুল আউয়াল (হাতপাখা) ও জাকের পার্টি মনোনীত এস এম সাব্বির হোসেন (গোলাপফুল) এবং একমাত্র স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম শফিকুর রহমান মুশফিক (দেওয়াল ঘড়ি)।
এছাড়া সাধারণ ৩১টি ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর পদে ১৩৬ জন, ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৩৯ জন কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে নগরীর ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে এস এম খুরশিদ আহমেদ টোনা এবং ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে জেড এ মাহমুদ ডন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
নগরীতে টহল দিচ্ছে বিজিবির ১১ প্লাটুন সদস্য। নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্র ও নগরীর নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করবেন পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় ৮ হাজার ৩০০ সদস্য। নির্বাচনী মাঠে থাকবেন ৪৪ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ১০ জন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট।
ভোটগ্রহণের দায়িত্বে থাকবেন ৫ হাজার ৭৬০ জন কর্মকর্তা। ভোটকেন্দ্রগুলোতে স্থাপন করা হয়েছে ২ হাজার ৩০০টি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা। ইভিএম মেশিন প্রয়োজন হচ্ছে প্রায় ৩ হাজারটি। পর্যবেক্ষক থাকবেন বেসরকারি দুটি সংস্থার ২০ জন ও নির্বাচন কমিশনের ১০ জন প্রতিনিধি।
এদিকে বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) নির্বাচন সোমবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের ১২৬টি কেন্দ্রের সবটিতেই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) চলবে ভোট। এই ১২৬টি কেন্দ্রের মধ্যে ১০৬টিকেই অতি গুরুত্বপূর্ণ বলে ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন সাতজন। ভোটের শুরুতেই প্রার্থীরা নিজ নিজ কেন্দ্রে ভোট দেবেন।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত নগরীর কালিবাড়ি রোডের সরকারি বরিশাল কলেজ কেন্দ্রে, জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস গোরস্থান রোডের সৈয়দ আব্দুল মান্নান ডিডিএফ আলিম মাদরাসা কেন্দ্রে, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম বরিশাল নগরীর রূপাতলী হাউজিং আ. রব সেরনিয়াবাত মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে, জাকের পার্টির গোলাপফুল প্রতীকের মেয়র প্রার্থী মো. মিজানুর রহমান বাচ্চু ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের চহুতপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেবেন।
এছাড়া টেবিলঘড়ি প্রতীকের স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী কামরুল আহসান রুপন কালুশাহ সড়কের আলেকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে, হরিণ প্রতীকের স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মো. আলী হোসেন হাওলাদার ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের চহুতপুর ইস্কান্দার শরীফ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, হাতি প্রতীকের স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মো. আসাদুজ্জামান বরিশাল নগরীর সদর রোডের সিটি কলেজ কেন্দ্রে ভোট দেবেন।
এবারের নির্বাচনে বরিশাল সিটিতে ভোটার সংখ্যা দুই লাখ ৭৬ হাজার ২৯৮। এর মধ্যে মহিলা ভোটার এক লাখ ৩৮ হাজার ৩০৯। মোট প্রার্থী হয়েছেন ১৬৭ জন, যার মধ্যে মেয়র পদে সাতজন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১১৮ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৪২ জন। নির্বাচনে ১০ প্লাটুন বিজিবি ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাড়ে চার হাজার সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন।