আগে থেকেই ধর্ষণসহ, চুরি-ছিনতাইয়ের নানা অভিযোগ ছিল রাজা মিয়ার (২৬) বিরুদ্ধে। সর্বশেষ বছর চারেক আগে এক গৃহকর্মীকে ধর্ষণের অপরাধে তাকে তাড়িয়ে দেয় এলাকাবাসী। এরপর টাঙ্গাইল শহরের নতুন বাসস্ট্যান্ডে বাসা ভাড়া নিয়ে ঝটিকা পরিবহনের চালক হিসেবে চাকরি নেন।
বৃহস্পতিবার কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী বাসে ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনায় আসামি হয়ে রিমান্ডে আছেন সেই রাজা মিয়া।
টাঙ্গাইল জেলা গোয়েন্দা পুলিশ বৃহস্পতিবার ভোরে ভাড়া বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। রাজা মিয়া কালিহাতী উপজেলার বল্লা গ্রামের অধিবাসী বলে জানা যায়।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রাজা মিয়ার সঠিক কোনো পিতৃপরিচয় নেই। তার মা বাসিন্দা ছিলেন। বছর বিশেক আগে পাঁচ বছর বয়সী রাজা মিয়াকে সঙ্গে নিয়ে এসে বল্লা গ্রামের একজনকে বিয়ে করেন তার মা।
বৃহস্পতিবার বিকেলে কালিহাতীর বল্লা গ্রামে রাজা মিয়ার বাড়ি গিয়ে জানা যায়, তার কথিত বাবা বছর চারেক আগে এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। এর তিন মাস পর এক গৃহকর্মীকে ধর্ষণের অপরাধে স্থানীয় এলাকাবাসী রাজা মিয়া ও তার মাকে ওই গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দেয়।
রাজা মিয়ার চাচা বলেন, এলাকায় চুরি-ছিনতাইসহ হেন কোনো অপরাধ নেই যে সে করেনি। বছর দশেক আগে একটি ফোন চুরির অপরাধে স্থানীয় সালিশি বৈঠকে তাকে পেটানো হয়। সর্বশেষ ধর্ষণের ঘটনায় তার মাসহ রাজাকে এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।
বল্লা ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মিজানুর রহমান বলেন, রাজা মিয়ার পিতৃপরিচয় না থাকায় এলাকায় ছোটখাটো অপরাধ করে পালিয়ে যেত। আবার কয়েক মাস পর পেছনের অপরাধ ভুলে এলাকায় আসত। সর্বশেষ গৃহকর্মীকে ধর্ষণের ঘটনায় এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে তাকে এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেয়।
বাসে ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনায় রাজা মিয়ার জড়িত থাকার বিষয়টি এলাকাবাসী সবাই বিশ্বাস করেছে।
রাজা মিয়ার সৎ মা বলেন, রাজা ছোটবেলা থেকেই দুষ্টু ছিল।
জানা গেছে, চলন্ত ওই বাস মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থেকে নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশে যাত্রা করে। গভীর রাতে বঙ্গবন্ধু সেতু পার হওয়ার পর যাত্রীবেশী ডাকাত দল অস্ত্রের মুখে বাসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে যাত্রীদের হাত, চোখ, মুখ বেঁধে ফেলে। যাত্রীদের ফোন, টাকাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে। এ সময় ধর্ষণের ঘটনাও ঘটে। তিন ঘণ্টা ধরে চলে ডাকাতি ও ধর্ষণ। এরপর মধুপুরে রাস্তার পাশে খাদে পড়ে গেলে ডাকাতরা পালিয়ে যায়। খাদে পড়ে যাওয়ার পর আশপাশের লোকজন উদ্ধারে এগিয়ে আসে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছান।
পুলিশ জানায়, মধুপুরে বাসে ধর্ষণ ও ডাকাতি ঘটনার পর থেকে জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান শুরু করে পুলিশ। এরই অংশ হিসাবে বৃহস্পতিবার ভোরে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল শহরের নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অভিযান চালায়। এ সময় তাকে তার ভাড়া বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, ঈগল পরিবহনের যে বাসটি ডাকাতের কবলে পড়ে, সেই বাসের চালককে সরিয়ে দিয়ে রাজা চালকের সিট দখল করে। ধর্ষণ ও ডাকাতির সময়ে রাজা বাসটি চালাচ্ছিল। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এ ঘটনায় কে কে জড়িত ছিল রাজা পুলিশকে জানিয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের জোর চেষ্টা চলছে।সূত্র -দেশ রূপান্তর