র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে সব ধরণের অপরাধীকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকে। জঙ্গী, সন্ত্রাসী, সংঘবদ্ধ অপরাধী, ছিনতাইকারী, মাদক ব্যবসায়ী, খুন এবং অপহরণসহ বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর মামলার আসামী গ্রেফতারে র্যাব নিয়মিত অভিযান চালিয়ে আসছে। গোয়েন্দা নজরদারী ও আভিযানিক কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় অপরাধ নিয়ন্ত্রণে র্যাব ইতিমধ্যেই জনগণের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে।
বিগত ১২ বছর পূর্বে ভিকটিম রেশমা আক্তার (২৫) এর সাথে একই গ্রামের মোঃ নুরুল ইসলাম (৩৫) এর ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক বিবাহ হয়। বিবাহিত জীবনে তাদের একটি পুত্র সন্তান জন্ম গ্রহণ করে। বিবাহের কিছুদিন পর জীবিকার তাগিদে স্বামীর অনুমতিতে রেশমা আক্তার জর্ডান গমন করেন। জর্ডানে থাকাবস্থায় রেশমার সাথে নুরুল ইসলামের সাংসারিক জীবনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিবাদ লেগেই থাকত। এরই ধারাবাহিকতায় তাদের সাংসারিক বনিবনা না হওয়ায় গত ০৩ মাস পূর্বে রেশমা আক্তার জর্ডানে থাকা অবস্থায় তার স্বামী নুরুল ইসলামকে তালাক প্রদান করে।
গত ২৮/০৪/২২ খ্রিঃ তারিখে রেশমা আক্তার জর্ডান হতে বাংলাদেশে আসে। সংবাদ পেয়ে রেশমার স্বামী নুরুল তালাক হওয়া সত্তে¡ও তাকে নিয়ে সংসার করার জন্য রেশমা ও তার মা-বোনসহ অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনদের নিকট বিভিন্ন ভাবে আকুতি-মিনতি করতে থাকে। একপর্যায়ে রেশমাসহ সবাই নুরুলের কথায় রাজি হয়ে গত ১৫/০৫/২২ খ্রিঃ তারিখ হতে পুনরায় তাদের সংসার জীবন শুরু করে রেশমাদের বাড়ীতে অবস্থান করতে থাকে।
গত ১৭/০৫/২২ খ্রিঃ তারিখ সকালে রেশমা ও নুরুল ইসলাম দুজন তাদের একমাত্র পুত্র মোঃ ইয়াসিন @ আল-আমিন (১০)’কে মাদ্রাসায় ভর্তি করানোর জন্য যায়। মাদ্রাসা হতে ফেরার পথে ইয়াসিন’কে একা তার নানার বাসায় পাঠিয়ে দিয়ে তারা দুজনে পাসপোর্ট ফটোকপি করার জন্য যায়। একই তারিখ দুপুর ১২:৪৫ ঘটিকায় নুরুল একা তার শ্বশুর বাড়িতে এসে তার ছেলেকে জানায় তার মাকে কেরাণীগঞ্জ মডেল থানাধীন বরিশুর এলাকায় (নুরুল ইসলামের ভাড়া করা মেসে) আটক করে রেখেছে। একথা শুনে রেশমার মা এবং রেশমার ছেলে দ্রুত সেখানে গিয়ে মেসের দরজা তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখতে পায়। জানালার পাশে রাখা চাবি দিয়ে রুম খুলতেই তারা অর্ধ গলা কাটা রক্তাক্ত অবস্থায় রেশমার লাশ ফ্লোরে পড়া অবস্থায় দেখতে পায়। পরবর্তীতে মৃত রেশমার বোন বাদী হয়ে কেরাণীগঞ্জ মডেল থানায় উক্ত হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত মোঃ নুরুল ইসলামসহ অজ্ঞাতনামা ২/৩ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নম্বর-৩৬, তারিখ-১৭/০৫/২০২২ খ্রিঃ, ধারা- দঃ বিঃ আইনের ৩০২/৩৪ ধারা।
উক্ত হত্যাকান্ডের সংবাদ প্রাপ্তির পর র্যাব-১০ এর আভিযানিক দল পলাতক আসামীদের গ্রেফতারের লক্ষে তাদের গোয়েন্দা কার্যক্রম শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-১০ এর উক্ত আভিযানিক দল গত ২২ মে ২০২২ খ্রিঃ তারিখ আনুমানিক ২২:০০ ঘটিকায় রাজধানী ঢাকার পল্টন থানাধীন কাকরাইল এলাকায় একটি অভিযান পরিচালনা করে কেরাণীগঞ্জের চাঞ্চল্যকর স্বামীর হাতে প্রবাসী স্ত্রী হত্যা মামলার প্রধান আসামী স্বামী মোঃ নুরুল ইসলাম’কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। জিজ্ঞাসাবাদে নুরুল উক্ত হত্যাকান্ডের সাথে তার সংশ্লিষ্টতার সত্যতা স্বীকার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত মোঃ নুরুল ইসলাম তার স্ত্রী রেশমা আক্তারের সাথে পুনরায় সংসার জীবন শুরু করার দুদিনের মাথায় তাদের মধ্যে রেশমা আক্তারের সাথে কাতার প্রবাসী এক যুবকের সম্পর্কের সন্দেহসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিবাদের সৃষ্টি হয় এতে নুরুল ক্ষুব্ধ হয়ে পরিকল্পিতভাবে তার স্ত্রী রেশমা আক্তার’কে তার ভাড়া করা বাসায় নিয়ে ধারালো চাকু দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে বলে জানা যায়। অত্র হত্যাকান্ডের পরপরই নুরুল ইসলাম নিজেকে আত্মগোপন করার জন্য প্রথমে বরিশাল গমন করে। সেখানে একদিন অবস্থান করার পর সে লঞ্চযোগে ঢাকা ও চাঁদপুর হয়ে চট্টগ্রাম যায়। চট্টগ্রামে দুইদিন অবস্থান করার পর সেখানেও সে নিজেকে নিরাপদ মনে না করে পুনরায় ঢাকা হয়ে বরিশাল যাওয়ার সময় র্যাবের নিকট গ্রেফতার হয়।
গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।