জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক:
প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেছেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের কর্মীদের চাহিদা থাকলেও প্রয়োজন মতো দক্ষ শ্রমিক পাঠানো যাচ্ছে না। ফলে অদক্ষ শ্রমিকদের ওপর নির্ভর হতে হচ্ছে আমাদের।
আজ রবিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস-২০২২ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী বলেন, নতুন শ্রমবাজারের কথা বলা হয়েছে, অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। শ্রম বাজার খুলছে। পুরান নিয়মে কিন্তু নতুন শ্রমবাজার চলবে না। নতুন শ্রমবাজার নতুন নিয়মে আসতে হবে। আমরা আগে যে অদক্ষ শ্রমিকদের ওপর নির্ভরশীল ছিলাম, এখন পর্যন্ত বলতে গেলে আমরা কিন্তু সংখ্যা হিসেবে অদক্ষ শ্রমিকের ওপরেই নির্ভরশীল আছি। কিন্তু সেই অবস্থাও খুব তাড়াতাড়ি সরে যাচ্ছে। দক্ষের দিকেই যাচ্ছে। আমরা যতো তাড়াতাড়ি বুঝবো এবং গ্রহণ করবো, সেটা দেশ ও জাতির জন্য সঠিক হবে। আজকের আলোচকরাও কিন্তু এই লাইনেই কথা বলে গেছেন। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দক্ষতা উন্নয়নে কিন্তু যা কিছু করার তা আমরা করে যাচ্ছি। আর শুধু দক্ষতা উন্নয়ন ছাড়াও সিস্টেমটাও যে আমাদের উন্নয়ন করতে হবে এটাও কিন্তু আমরা করে যাচ্ছি।
শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়ন নিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমাদের দরকার লাখে লাখে। কিন্তু উৎপাদন মাত্র হাজারে হাজারে। আমাদের যে বায়রা (জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি) মেম্বাররা আছেন, অনেকের নিজের ট্রেনিং সেন্টার আছে। আমরা যদি এই ট্রেনিং সেন্টারগুলোকে এক হিসাবে নিয়ে আসতে পারি, তাহলে আমাদের আউটপুটটা হাজারে থেকে লাখে নিয়ে যেতে পারবো।
প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী আরও বলেন, আমরা কিন্তু এখন বিএমইটিসহ (জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো) সব কাজ নিয়ে ডিজিটাল সিস্টেম বা পর্যায়ে চলে এসেছি। প্রবাসী যে অ্যাপ বিএমইটিতে ব্যবহার হচ্ছে, তা ডিজিটালাইজড করে নিয়েছি। এটা করাতে অনেক হয়রানি কমে গেছে। যেহেতু এটা সরাসরি হয়েছে, এখন আর আমার হাত ছুঁয়ে যেতে হবে না। আমরা রেজিস্ট্রেশনও খুব শিগগির ডিজিটালাইজড করে নেবো। মালয়েশিয়ার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, মালয়েশিয়ার তো নিজেরই একটা প্ল্যাটফর্ম আছে। আমরা কিন্তু বলতে গেলে ওদের প্লাটফর্মের ওপর বন্দি। আমাদের মাঝে বোঝাপড়া আছে, সেটার মাধ্যমে আমরা চলতে পারি। কিন্তু ওই বোঝাপড়ার মধ্যে আমাদের প্ল্যাটফর্মেরও কথা আছে। তাই আমাদের যদি একটা নিজস্ব প্ল্যাটফর্ম থাকে, তাহলে কন্ট্রোল থাকবে নিজের হাতে।
দালাল নিয়ে বায়রার উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, যেকোনও কর্মীকে বিদেশ যেতে কয়েক দালালের মাধ্যমে কাজ করলে তারাই (দালাল) বেশি লাভবান হয়। মনে রাখতে হবে, বিভিন্ন দেশ, সৌদি আরব-কাতার বলেন, তাদের নিজস্ব প্ল্যাটফর্ম আছে। আমাদেরও আছে। এ কারণে এই কাজটিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।
রিক্রটিং এজেন্সিগুলো দালালদের কাছে জিম্মি জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো এক হিসেবে দালালদের কাছে জিম্মি। এটা হলো বাস্তবতা। এই জিম্মিদশা থেকে বের করতে হবে। সবাই যদি আমরা মিলেমিশে কাজ করি, তাহলে কস্ট অব মাইগ্রেশন অনেকটা কমে আসবে।
প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী মনে করেন, নিজের একটা সিস্টেম চালু করা গেলে প্রবাসে যেতে কর্মীদের খরচ অনেকটা কমে আসবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রবাসীকল্যাণ সচিব আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন। এসময় ৬৭ জনকে সিআইপি ও ১৬৮৮ জনকে প্রবাসী কর্মীর সন্তানদের শিক্ষা বৃত্তি প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন প্রবাসীরা ও মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. শফিকুল ইসলাম। এতে আরও বক্তব্য রাখেন আইএলও’র প্রতিনিধি টুমো পটেনিন, আইওএম এর চিফ অব মিশন আব্দুসাত্তার ইসোয়েভ, ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক মো. হামিদুর রহমান, জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. শহীদুল আলম এনডিসি, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিস (বায়রা) এর সভাপতি আবুল বাশার এবং এনআরবি সিআইপি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. মাহতাবুর রহমান প্রমুখ।