ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে রমজানের রোজা রাখা যেমন উত্তম, তেমন শারীরিক সুস্থতার জন্য কার্যকরী একটি ব্যবস্থাপনা।
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সাহরি এবং ইফতারে পরিমিত খাবার খান।
অতি ভোজন এড়িয়ে চলেন, তারা রোজা রাখার ফলে শুধু শারীরিকভাবেই উপকৃত হন না, বরং মানসিকভাবেও প্রশান্তি ও প্রফুল্লতা অনুভব করতে থাকেন।
বিশ্বজগতের মহান চিকিৎসক হজরত মোহাম্মদ মুস্তফা (সা.) বলেছেন, প্রতিটি বস্তুর জাকাত আছে; শরীরের জাকাত রোজা। অতএব, আমাদের রোজা রাখা উচিত।
রোজা রাখার ক্ষেত্রে কয়েকটি সহজ ফর্মূলা যদি অনুসরণ করা হয়, তাহলে রোজার সমস্ত উপকার এবং কল্যাণ অর্জন করা সম্ভব।
আমরা জানি, শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এবং শিরা-উপশিরাগুলো সচল রাখতে খাবারের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু এই খাবারই যদি নিয়মিত এবং পরিমিত না হয়, তাহলে শরীরে শক্তি জোগানোর পরিবর্তে রোগ সৃষ্টি করে।
স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে, অসময়ে, অসম ভক্ষণ, হজম প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে । চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা এ ব্যাপারে একমত যে, শরীরের অধিকাংশ রোগ সৃষ্টি হয় অস্বাভাবিক খাদ্য গ্রহণের কারণে।
আশ্চর্যের বিষয় হল, এই রোগের উপসর্গ ও কারণগুলো নবীজী (সা.) বহু শতাব্দী পূর্বেই বলে গেছেন। তিনি বলেন, রোগের কেন্দ্রবিন্দু হল পেট, অতিরিক্ত খাদ্যাভ্যাস এড়িয়ে চলা রোগের আরোগ্যতা।
এই বিবেচনায় রোজা আমাদের আধ্যাত্মিক ও শারীরিকভাবে কিছু বিষয় পরিত্যাগ করার শিক্ষা দেয়।
বছরব্যাপী অপরিমিত খাদ্যাভ্যাসের কারণে শরীরে যে অতিরিক্ত মেদ জমে থাকে তা রোজা রাখার ফলে দূরীভূত হয়। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, মানুষের শরীরে এইচডিএল (high-density lipoprotein) এবং এলডিএল (low-density lipoprotein) পাওয়া যায়।
এইচডিএল এমন ফ্যাট, যা বহু রোগ থেকে মানুষকে রক্ষা করে এবং এর পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে তা স্বাস্থ্যের পক্ষে মোটেও ক্ষতিকারক নয়। রোজা রাখার ফলে এইচডিএলের পরিমাণ বহুগুণে বেড়ে যায়। বিপরীতে এলডিএল, যা মানুষের স্বাস্থ্যের পক্ষে চরম ক্ষতিকারক।
রোজা রাখার ফলে এটা হ্রাস পেতে থাকে এবং রক্ত সঞ্চালনের ক্ষেত্রে অস্বাভাবিকত্ব এবং উচ্চ রক্তচাপের মতো বিভিন্ন রোগ থেকে আমাদের রক্ষা করে।
রোজা রাখার ফলে ইউরিক অ্যাসিড এবং রক্তের ইউরিয়ার ঝুঁকিও হ্রাস পায়। যা শরীরে অধিক পরিমাণে বিদ্যমান থাকলে স্ট্রোক, হৃদরোগ, কিডনি রোগ এবং ডায়াবেটিসের মতো রোগের কারণ হয়ে থাকে।
আসল কথা হল রোজা কেবল সারাদিন উপোস থেকে নির্ধারিত সময়ে খাদ্য ও পানীয় গ্রহণের নাম নয়। বরং এর দ্বারা আল্লাহ তায়ালা শারীরিক বহুবিধ রোগব্যাধি থেকেও আমাদের রক্ষা করেন।
স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের মতে ১৬-১৭ ঘণ্টা ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত থাকার ফলে শরীরের অঙ্গগুলো স্বাভাবিক হতে থাকে এবং পাচনতন্ত্রের উন্নতি হয় এবং গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল রোগ, যেমন- গ্যাস, বদহজম, লিভারের রোগ, জয়েন্টে ব্যথার ঝুঁকি ইত্যাদি কমে যায়।
কিন্তু আমাদের দেশের মানুষেরা না জানার কারণে কিংবা অসতর্কতাবসত সাহরি ও ইফতারে অপরিমিত খাবার খেয়ে থাকেন। যা রোগব্যাধি হ্রাসের পরিবর্তে বাড়ার দিকে ধাবিত করে।
সাহরি ও ইফতার রোজার একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। আমরা যদি এটিকে সুন্নাত অনুসারে পালন করি তবে তা কেবল শারীরের পক্ষেই ভালো নয় বরং প্রভূত কল্যাণ ও পুরস্কার লাভের কারণও হয়ে থাকে।
সময় মতো সাহরি খাওয়া যেমন সুন্নত তেমন সময় মতো ইফতার করাও সুন্নত। নবীজী (সা.) এমনই করতেন। তিনি বলেন, তোমরা সাহরি খাও; কারণ এতে বরকত রয়েছে । খেজুর দিয়ে ইফতার করা নবীজীর (সা.) সুন্নত।
আধুনিক গবেষণা অনুসারে, খেজুরে ভিটামিন এ, বি, সি এবং ডির পাশাপাশি ক্যালসিয়াম, স্টিল, ফসফরাস এবং আরও অনেক দরকারী খনিজ রয়েছে যা কেবল হৃদ, মস্তিষ্ক, লিভার, পেট এবং স্নায়ুকেই মজবুত করে না, বরং শরীরে প্রচুর পরিমাণে শক্তিও সঞ্চার করে।
গ্রীষ্মকালের রোজায় আপনি যদি তৃষ্ণার্ত বোধ করেন, তাহলে প্রাচীন চিকিৎসকদের গবেষণা অনুসারে আপনি যদি সাহরির সময় ঘুম থেকে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে দু’চামচ খাঁটি মধু পানির সঙ্গে মিশিয়ে পান করেন তাহলে আপনি সারা দিন প্রশান্ত থাকবেন। পানির তৃষ্ণা কম হবে।
কারণ মধুর মতো বরকতময় খাবার এবং চিকিৎসা মাল্টিভিটামিনের খনিজ হওয়ার কারণে এটি রোজার সময় শারীরিক শক্তি পুনরুদ্ধার করে থাকে।
সূত্র: জিয়ো উর্দু নিউজ