ওমিক্রন বিএফ.৭
ওমিক্রনের অন্যান্য সাবভেরিয়েন্টের ক্ষেত্রে আমরা যেমনটা দেখেছি যে টিকা বা আগের সংক্রমণ থেকে অনাক্রম্যতা নতুন ভেরিয়েন্টের আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। ‘বিএফ.৭’ তাদের থেকে আলাদা নয়। এই ভেরিয়েন্টের স্পাইক প্রোটিনে একটি নির্দিষ্ট মিউটেশন ‘আর৩৪৬টি’ বহন করে। স্পাইক প্রোটিন হলো ভাইরাসের পৃষ্ঠে থাকা একটি প্রোটিন, যা আমাদের কোষের সঙ্গে সংযুক্ত এবং সংক্রমিত হতে দেয়।
এই মিউটেশনটি আমরা ‘বিএফ.৫’ ভেরিয়েন্টেও দেখেছি। এটি ভ্যাকসিন বা পূর্ববর্তী সংক্রমণের দ্বারা উৎপন্ন অ্যান্টিবডিগুলোকে নিরপেক্ষ বা নিষ্ক্রিয় করে ভাইরাসের ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে।
শরীরের অ্যান্টিবডি নিষ্ক্রিয় করে সহজেই আক্রমণ করতে পারে এরা। সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে, তিনটি টিকা দেওয়া মানুষ এই সাবভেরিয়েন্ট প্রতিরোধক্ষম। তাদের অ্যান্টিবডিকে বিএফ.৭ অতটা নিরপেক্ষ বা নিষ্ক্রিয় করতে পারেনি। এটি একজন থেকে ১৮ জনকে সংক্রমিত করতে পারে। অন্য ভেরিয়েন্টের তুলনায় এটির সংক্রমণ ক্ষমতা চার গুণ বেশি। নতুন এই ভেরিয়েন্টের ভয়ানক দিক হচ্ছে, এটির ইনকিউবিশন পিরিয়ড অনেক কম। অর্থাৎ খুব কম সময়ের মধ্যে একজন মানুষ আক্রান্ত হতে পারে এবং এটি অনেক বেশিসংখ্যক মানুষকে সংক্রমিত করবে। বিএফ.৭ ভেরিয়েন্টের মিউটেশন নিয়ে আরও তথ্য জানা যাবে দ্য কনভারসেশন.কম থেকে।
সাধারণ উপসর্গ কী কী?
কভিডের এই নতুন ভেরিয়েন্টের কিছু সাধারণ উপসর্গ হচ্ছে :
– গলা ব্যথা।
– সর্দি।
– নাক বন্ধ থাকা।
– হাঁচি।
– কফ ছাড়া কাশি।
– মাথা ব্যথা।
– কফসহ কাশি।
– কর্কশ কণ্ঠ।
– পেশিতে ব্যথা।
– গন্ধের পরিবর্তন/বাজে গন্ধ অনুভূত হওয়া।
জটিলতা আছে?
বিএফ.৭-এর কারণে শ্বাসনালির ওপরের অংশ আক্রান্ত হয়। এর ফলে বুকের ওপরের দিক এবং কণ্ঠনালিতে কফ জমে। অন্যদিকে এই উপরূপে আক্রান্তদের পেটেও সমস্যা হতে পারে। কারো কারো পেট খারাপ, বমি, ডায়রিয়াও হতে পারে। এই সমস্যাগুলো হলে করোনা পরীক্ষা করিয়ে নেওয়াই ভালো। একটি ভুল ধারণা আগে ছিল, সাধারণ সর্দিকে করোনার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলত কেউ কেউ। ঠাণ্ডা লেগেছে মানে যেমন কভিড নয়, তেমনি ঠাণ্ডা লাগলেও তা এড়িয়ে যাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়। সামান্য উপসর্গ দেখা দিলেই চিকিত্সকদের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। নতুন এই ভেরিয়েন্ট নিয়ে বড় আশঙ্কা এটির সংক্রমণক্ষমতা। একসঙ্গে নিমেষে বহু মানুষকে সংক্রমিত করতে পারে ওমিক্রনের এই উপরূপ। তাই দ্রুত রোগ নির্ণয় করে কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে রোগীকে। এতে সংক্রমণ কমবে। কিন্তু এই প্রজাতি বেশি দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে মৃত্যুর হার বাড়বে। একটি তথ্য অনুযায়ী এই ভেরিয়েন্টের সংক্রমণের ক্ষেত্রে সুস্থতার হার অনেক বেশি।
নতুন ভেরিয়েন্ট টিকা না নেওয়া ব্যক্তিদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। তাই যারা টিকা নেয়নি, তাদের দ্রুত টিকা নেওয়া উচিত। ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কার, প্রেগন্যান্ট নারী ও ষাটোর্ধ্ব যাঁরা আছেন, তাঁদের দ্বিতীয় বুস্টার ডোজ দ্রুততম সময়ে নিয়ে নেওয়ার কথা বলছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ ছাড়া যাদের কোমরবিড কন্ডিশন রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রটেক্টিভ কেয়ার, যেমন—মাস্ক ব্যবহার করা, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা, নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করা এবং আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকা উচিত।
সতর্কতা
– সামাজিক দূরত্ব ভাইরাসের বিস্তারের বিরুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা। তাই যেকোনো ধরনের ভিড় এড়িয়ে চলাই ভালো। তবে একান্ত যেতে হলে ভিড়ের মধ্যে সঠিক শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
– বাজারে যাওয়ার সময় তিন স্তরের মাস্ক পরতে হবে। জনাকীর্ণ এলাকায় একটি মাস্ক সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারে।
– একটি বুস্টার ডোজসহ কভিড-১৯ ভ্যাকসিন নিয়ে নিতে হবে, যা আপনাকে বিএফ.৭ সংক্রমণ থেকে রক্ষা করবে। আপনি যদি এখনো বুস্টার ডোজ না পান, তাহলে নিকটস্থ টিকাকেন্দ্র থেকে টিকা নিয়ে ফেলুন।
– জনাকীর্ণ এলাকায় যাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত। আপনি সহজেই নতুন ভেরিয়েন্টে সংক্রমিত হতে পারেন এমন কারো কাছ থেকে, যিনি এর মধ্যেই নতুন ভেরিয়েন্টে আক্রান্ত।
– আপনি যখনই ঘরের বাইরে যাবেন, তখন সব সময় আপনার হাত পরিষ্কার রাখুন এবং স্যানিটাইজার রাখুন।
– ধুলাবালি এড়িয়ে চলুন। ধূমপান, তামাকজাত জর্দা, মদ্যপান থেকে বিরত থাকুন। বাসার আসবাব জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করুন।
– ঠাণ্ডা খাবার, আইসক্রিম ও চিনির তৈরি খাবার বাদ দিন। এই খাবারগুলো আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধক্ষমতায় বাধা দিয়ে ফুসফুসে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। সেই সঙ্গে এই খাবারগুলো ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ক্ষেত্রেও সহায়তা করে।
ব্যায়াম
ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বাড়াতে ব্যায়াম বেশ কার্যকর। তাই নিয়মিত কিছু ব্যায়াম করার পরামর্শ রইল। সকালে ঘুম থেকে উঠে মেরুদণ্ড সোজা করে বসুন। চোখ বন্ধ করে গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস নিন। ধীরে ধীরে গতি কমিয়ে আনুন। এভাবে প্রতিদিন কয়েক মিনিট ব্যায়াম করতে পারেন। এতে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বাড়বে। আবার বুকে বালিশ দিয়ে উপুড় হয়ে শুয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে কিছুক্ষণ ধরে রাখবেন। তারপর ছেড়ে দেবেন। উপুড় হয়ে শোবার এ পদ্ধতির নাম ‘প্রোন পজিশন’। এই ব্যায়াম দিনে দুইবার করতে পারেন। নিয়মিত হাঁটুন। সুস্থ ও স্বাস্থ্যকর জীবনধারা মেনে চলুন। এছাড়া আরও কিছু ব্যায়ামের কৌশল দেখে নিতে পারেন ওয়েবএমডি.কম থেকে।
অনুলিখন : জুবায়ের আহম্মেদ