Monday , 13 May 2024
শিরোনাম

ডিজিটাল ব্যাংকে বিনিয়োগে আগ্রহী ৫২ প্রতিষ্ঠান

সম্প্রতি দেশে ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় অনুমতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এ জন্য আগ্রহীদের কাছ থেকে আবেদনও আহ্বান করা হয়। নগদ টাকার ব্যবহার কমিয়ে আনা ও লেনদেন আরও সহজ করতে সরকারের ‘ক্যাশলেস সোসাইটি’ গড়ার উদ্যোগে ডিজিটাল ব্যাংক চালু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই প্রেক্ষিতে প্রথমবারের মত চালু হতে যাওয়া ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স পেতে রেকর্ড ৫২টি আবেদন জমা পড়েছে।

রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাত ১২টা পর্যন্ত অনলাইনে আবেদন করার সুযোগ ছিল। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের খোলা ওয়েবপোর্টালে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আবেদন গ্রহণ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়। দুই দিনের সাপ্তাহিক ছুটি শেষে আজ সার্ভারের লক খোলা হয়। দেখা যায়, যৌথ ও এককভাবে মোট ৫২টি আবেদন জমা পড়েছে।

আবেদনকারীদের মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিমা প্রতিষ্ঠান, মোবাইল আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এছাড়াও আছে বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটর, তথ্য প্রযুক্তি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান, এমনকি ওষুধ কোম্পানি ও ঢেউশিট উৎপাদনকারী কোম্পানিও।

জানা যায়, বেসরকারি খাতের ১০টি ব্যাংক, রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের ৪টি ব্যাংক, নগদ, বিকাশ, বাংলালিংক ও পাঠাওসহ আরও বেশকিছু প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে।

বেশ কয়েক বছরের প্রস্তুতি শেষে বাংলাদেশ ব্যাংক লাইসেন্সের জন্য আবেদন গ্রহণ শুরু করে গত জুন থেকে। শুরুতে আবেদন করার শেষ সময় ছিল গত ১ আগস্ট। সে সময়ের মধ্যে কোনো আবেদন জমা না পড়ায় পরে তা বাড়িয়ে ১৭ আগস্ট করা হয়।

সবার আগে ‘ডিজি টেন পিএলসি’ নামে ১০ ব্যাংকের জোট ডিজিটাল ব্যাংকে বিনিয়োগের ঘোষণা দেয়। এই ১০টি ব্যাংক মিলিয়ে ১২৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকা বিনিয়োগের কথা জানিয়েছে। মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক (এমটিবি), ব্যাংক ডাচ্-বাংলা, ইস্টার্ন ব্যাংক (ইবিএল), ট্রাস্ট ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক (এনসিসিবি), প্রাইম ব্যাংক ও মিডল্যান্ড ব্যাংক রয়েছে এই উদ্যোগে।

এছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত চার বাণিজ্যিক ব্যাংক সোনালী, রূপালী, অগ্রণী ও জনতা মিলে জোটবদ্ধভাবে ডিজিটাল ব্যাংক গঠনের আবেদন করেছে।

বেসরকারি ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক ইউসিবির মোবাইল আর্থিক সেবাদানকারী কোম্পানি উপায়ের নেতৃত্বে যে জোট আবেদন করেছে, তার নাম ঠিক করা হয়েছে ‘উপায় ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি’। এই জোটে আছে বেসরকারি ব্যাংক এনআরবিসি ও মেঘনাও।

আবেদনকারীদের মধ্যে আছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি আরামিট, যারা মূলত ঢেউশিট উৎপাদন করে। আরও আছে ওষুধ খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানি নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালস ও তথ্য প্রযুক্তি সেবাদানকারী কোম্পানি জেনেক্স ইনফোসিস, মোবাইল ফোন অপারেটর বাংলালিংক।

‘সঞ্চয় ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি’ নামে ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার আবেদন করেছে বেসরকারি ঢাকা ব্যাংক। তাদের জোটেও বেশ কয়েকটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান আছে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্র্যাক ব্যাংক তাদের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান বিকাশ ডিজিটাল ব্যাংকের ৫১ শতাংশ শেয়ার পেতে বিনিয়োগ করার কথা জানিয়েছে।

রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান পাঠাও-ও ডিজিটাল ব্যাংক পেতে আবেদন করেছে। তাদের প্রস্তাবিত ব্যাংকের নাম ‘পাঠাও ডিজিটাল ব্যাংক।’ পাশাপাশি মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান নগদ ডিজিটাল ব্যাংক চেয়ে আবেদন করেছে ডিজিটাল আর্থিক সেবাদানকারী কোম্পানি নগদও।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, ডিজিটাল ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন হবে ন্যূনতম ১২৫ কোটি টাকা, যেখানে প্রচলিত ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন হচ্ছে ৫০০ কোটি টাকা। আর পরিচালক হতে লাগবে কমপক্ষে ৫০ লাখ টাকা।

নীতিমালায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, ডিজিটাল ব্যাংকের কোনো শাখা, উপশাখা, এটিএম বুথ বা কোনো স্থাপনা থাকবে না। মোবাইল বা অ্যাপ ব্যবহার করে গ্রাহকরা লেনদেন করতে পারবেন। তাদের সশরীরে ব্যাংকের কোনো শাখায় যেতে হবে না। ব্যাংক কোম্পানি আইন ও নীতিমালা অনুযায়ী এ ব্যাংক চলবে।

নীতিমালায় আরও বলা হয়, ডিজিটাল ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের মূলধন সংরক্ষণ চুক্তি করতে হবে। কোনো ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে পড়লে তা উদ্যোক্তাদের জোগান দিতে হবে। ঋণখেলাপি কেউ ডিজিটাল ব্যাংকের উদ্যোক্তা হতে পারবেন না। এমনকি ডিজিটাল ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের কারও বিরুদ্ধে ঋণ খেলাপি সংক্রান্ত কোনো মামলা আদালতে চলমান থাকলে তারা আবেদন করার জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না।

প্রসঙ্গত, বেশ কয়েক বছরের প্রস্তুতি শেষে গত ১৪ জুন বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ‘ডিজিটাল ব্যাংক’ চালুর অনুমোদন দেয়। ১৫ জুন এ বিষয়ে নীতিমালা জারি করে। এরই ধারাবাহিকতায় ‘ডিজিটাল ব্যাংক’ -এর জন্য অনলাইনে আবেদন জমা দিতে গত ২১ জুন একটি ওয়েব পোর্টাল চালু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আবেদনের জন্য ১ আগস্টের মধ্যে আগ্রহীদের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে বলা হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময় কেউ আবেদন না করায় ১৭ আগস্ট পর্যন্ত আবেদনের সময় বাড়ানো হয়।

Check Also

পাটবীজের আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে আনা সম্ভব: বিজেআরআই মহাপরিচালক

পাটবীজের আমদানি নির্ভরতা অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই) মহাপরিচালক …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

x