আনোয়ার সাদত জাহাঙ্গীর,ময়মনসিংহঃ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের বাংলাদেশে আসার প্রেক্ষাপট বর্ণণা করে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখর সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ১৯৭২ সালের মধ্য জানুয়ারিতে সিদ্ধান্তের পর মাত্র চার মাসের মাথায় বঙ্গবন্ধু কাজী নজরুল ইসলামকে ঢাকায় নিয়ে আসতে সক্ষম হন। এখানে ‘সক্ষম’ শব্দটির ব্যবহার করা হলো এ কারণে যে, কাজটি খুব সহজ ছিল না এবং বঙ্গবন্ধু না হলে নজরুলকে ঢাকায় আনা বোধ করি সম্ভবপরও হতো না।
সোমবার (২৩ মে) দুপুরে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের কনফারেন্স কক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কথাগুলো বলেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগে নজরুলের বাংলাদেশে আগমনের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষ্যে সংবাদ সম্মেলনটি আয়োজন করা হয়।
প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখর আরও বলেন, ১৯৭২ সালে কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন সম্পূর্ণ বাকরহিত অসুস্থ ব্যক্তি; তাঁর কোনো পাসপোর্ট ছিল না; তিনি ঢাকায় এসে কোথায় ও কিভাবে থাকবেন সেটি তাঁর আত্মীয়জনদের কাছে স্পষ্ট ছিল না। এই পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরাসরি আলোচনা করেনক ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে। পরবর্তীতে পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের নাতি সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় বঙ্গবন্ধুর অভিপ্রায়ের কথা শুনে সানন্দে সহযোগিতা ও অনুমোদনের হাত বাড়িয়ে দেন। আর সে কারণেই মাত্র দুদিনের মধ্যে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে কাজী নজরুল ইসলামকে ঢাকায় আনা সম্ভবপর হয়। সেই মাহেন্দ্র দিবসটি ছিল ১৯৭২ সালের ২৪ মে।
নজরুলের দেশ প্রত্যবর্তনের দিবসটির গুরুত্ব তুলে ধরে উপাচার্য বলেন, আজ একটি বিশেষ কারণে আমরা আপনাদের সামনে এসেছি। কারণটি জাতীয়ভাবেও গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সেটি অনালোচনার অন্ধকারেই থেকে যাচ্ছে। জাতীয়ভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ দিনটি হলো: আগামীকাল ২৪ মে। ১৯৭২ সালের ২৪ মে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পশ্চিমবঙ্গে বসবাসরত কবি কাজী নজরুল ইসলামকে স্বাধীন বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। আগামীকাল তার ৫০ বছর বা সুবর্ণজয়ন্তী। এরপর কবি আর বাংলাদেশ ছেড়ে যাননি। এ দেশের মাটিতেই তাঁর সমাধি হয়েছে। আমার জানা মতে, এই গুরুত্বপূর্ণ দিনটি নিয়ে কোথাও কোন অনুষ্ঠান হচ্ছে না; কোন প্রতিষ্ঠান কোন কার্যসূচিও গ্রহণ করেনি। নজরুলের নামাঙ্কিত বলে শুধু নয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় নজরুল চেতনা ধারন করে এবং লালন করে বলেই নজরুলকে বাংলাদেশে আনার সেই ঐতিহাসিক দিনটির কথা আমরা বিশেষভাবে মনে রেখেছি এবং দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করার কার্যসূচিও গ্রহণ করেছি।
প্রফেসর ড. সৌমিত্র বলেন, বকাজী নজরুল ইসলাম যা চিন্তা করেছিলেন, বঙ্গবন্ধু সে চিন্তার ধারাবাহিকতা এনেছেন আর বাঙালিকে যথযোগ্য নেতৃত্ব দিয়েছেন। সে-সূত্রেই বাঙালি পেয়েছে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ এবং ১৯৭২ সালের ঐতিহাসিক সংবিধান। বঙ্গবন্ধুর ভাবনায় কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন আদর্শিক ধ্রুব তারার মতো।
উপাচার্য জানান, নজরুল জয়ন্তী উপলক্ষ্যে কাল ২৪ মে মঙ্গলবার পালন করা হবে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশে আনয়ন করার সুবর্ণজয়ন্তী, ২৫ মে বুধবার পালন করা হবে নজরুলের জন্মোৎসব ও ২৬ মে পালন করা হবে ‘অগ্নি-বীণা’ কাব্যপ্রকাশের শতবর্ষ।
সংবাদ সম্মেলনে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন ট্রেজারার প্রফেসর মো. জালাল উদ্দিন, রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. মো: হুমায়ুন কবীরসহ অন্যরা।
নজরুল পদক ঘোষণা: সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্য প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখর নজরুল পদক-২০২২ ঘোষণা করেন। এবারে সাহিত্যে পদক পেয়েছেন অধ্যাপক ড. প্রীতিকুমার মিত্র (মরনোত্তর) ও সংগীতে পেয়েছেন শিল্পী সুজিত মোস্তফা। আগামিকাল অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে পদকপ্রাপ্তদের সম্মাননা তুলে দেওয়া হবে বলে জানান প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখর।