নদী খাল দখল ও জলাশয় ভরাট করছে হাউজিং কোম্পানি।
মো. আহসানুল ইসলাম আমিন:
নদী দখল করা, নদী দূষণ ফৌজদারি অপরাধ। এ জন্য রয়েছে ১০ বছরের কারাদণ্ডের বিধান। পাশাপাশি নদী রক্ষায় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য রয়েছে আদালতের রায় ও নির্দেশনা। তবুও মুন্সীগঞ্জের নদীর ওপর নির্যাতন বেড়েই চলছে দিনদিন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখে গেছে , মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলা ৫০ টির বেশি হাউজিং কোম্পানি রয়েছে। প্রতিটি কোম্পানি জলাশয় ও কৃষি জমি ভরাট করছে। উপজেলার লতব্দী ইউনিয়নের দোসর পড়া গ্রামের খেয়া ঘাট থেকে নদী ভরাটের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন ধলেশ্বী সমবায় সমিতি লিঃ নামের একটি হাউসিং কোম্পানি। জানা গেছে এই হাউসিং জলাশয়সহ তিন ফসলী কৃষি জমি ভরাট করেছে কয়েকশ বিঘা। এলাকাবাসী জানিয়েছেন ধলেশ্বরী সমবায় সমিতি লিঃ হাউসিং কোম্পানি এতটাই প্রভাবশালী তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস পায় না কেউ। এখানে এলাকার কিছু প্রভাবশালী লোককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তারা প্রচার করে থাকে এ হাউজিং কোম্পানিতে ডিসি, সচিব এবং দেশের ঊর্ধ্বতন প্রশাসনের কর্মকর্তা জড়িত রয়েছে তাই কেউ কথা বলতে সাহস পায় না।
এলাকার অনেকেই জানিয়েছেন জিম্মি করে রেখেছেন জমির মালিকদের তাদের দেওয়া নির্ধারিত মূল্যেই তাদের কাছে জমি বিক্রি করতে হয়। তাই অসহায় হয়ে পরেছে জমির মালিকরা।
দক্ষিন কেরানীগঞ্জের কোন্ডা ইউনিয়নে চরবাক্তা ও সিরাজদিখানের চরপাইনা মৌজার কৃষি জমি ভরাট করে গড়ে তোলা হয়েছে এ্যাপোলো হাউজিং কোম্পানীর আবাসন প্রকল্প ‘এ্যাপোলো লেক সিটি কোম্পানী গড়ে তোলার অভিযোগও উঠেছে। কৃষি জমির পাশাপাশি প্রকল্পের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া পাইন খালের তীর ও খাস জমি ভরাট করে নিজেদের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছে এই এ্যাপোলো হাউজিং কোম্পানীটি। তবে কৃষি জমি ভরাটের কথা স্বীকার করলেও খালের তীর ও খাস জমি ভরাটের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন এ্যাপোলো হাউজিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুজাত মোস্তফা।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পাইনা খাল ঘেঁষে গড়ে তোলা হয়েছে বেশ কয়েকটি আবাসন কোম্পানী। এসব কোম্পানীর বেশিরভাগই কৃষি জমি ও নদীর জায়গা ভরাট করেছে। ফলে এক সময়ের প্রমত্তা পাইনা খাল এখন কোনরকমে টিকে আছে। স্থানীয়রা জানান, এই এলাকায় আবাসন কোম্পানীর আগ্রাসন বন্ধ না হলে কৃষি জমি ও পাইনা খাল রক্ষা করা যাবে না।
ঘোষকান্দার বাসিন্দা আসলাম জানান, আবাসন কোম্পানীগুলোর কারনে এই এলাকার কৃষি জমির প্রায় সবাই ভরাট হয়ে গেছে। ফলে আগের মতো রবি শস্য পাওয়া যায় না। তিনি বলেন, এ্যাপোলো হাউজিং লেক সিটি নদী তীরের অন্তত ৫ বিঘা জায়গা ভরাট করে ফেলেছে। চর বাক্তার কৃষক মুল্লুক চান বলেন, ছোট বেলায় দেখেছি পাইন খাল অনেক বড় ছিল। কিন্তু আবাসন কোম্পানীগুলো ভরাট করতে করতে এখন খালটি নামমাত্র টিকে আছে। বর্ষা মৌসুমে খালে কিছুটা পানি থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে পানি পাওয়া যায় না। খালের দুই তীর আবাসন কোম্পানীর দখলে থাকায় এবং ভরাট্ করে ফেলায় আশপাশের কৃষি জমিতে চাষের জন্য সেচের পানি পাওয়া যায় না।
খাল ভরাটের বিষয়ে জানতে চাইলে এ্যাপোলো হাউজিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুজাত মোস্তফা বলেন, দক্ষিন কেরানীগঞ্জের চর বাক্তা ও সিরাজদিখানের চর পাইনা মৌজায় দেড়শ বিঘার মতো জমি আমরা ক্রয় করে এ্যাপোলো লেক সিটি গড়ে তুলেছি। প্রকল্পের বেশিরভাগই কৃষিজমি ছিল। সেগুলো ভরাট করে প্লট আকারে তা বিক্রি করা হচ্ছে। তবে খালের তীর ও খাস জমি ভরাট বা দখলের বিষয়টি ঠিক নয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, চর বাক্তা মৌজা কেরানীগঞ্জ উপজেলায় আর চর পাইনা সিরাজদিখান উপজেলায়। চর বাক্তা মৌজায় যদি খাল বা খাস জমি ভরাট হয়ে থাকে তাহলে তদন্ত করে এব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।