Saturday , 4 May 2024
শিরোনাম

নাতির সুন্নাতে খাৎনার অনুষ্ঠান দেখা হলোনা কৃষক নান্নু ফকিরের দু’ উপজেলার সংঘর্ষে নিহত

এসএম রুবেল (ফরিদপুর) প্রতিনিধি: নাতির সুন্নাতে খাৎনা অনুষ্ঠান ঈদুল ফিতরের পরের দিন। গরু কেনা হয়েছে বিভিন্ন স্থানের আত্মীয় স্বজনদের দাওয়াত দেয়া কমপ্লিট। এর ভেতরে ২৭ এপ্রিল বুধবার রাতে ফরিদপুরের সালথা উপজেলার যদুনন্দী ও বোয়ালমারী উপজেলার রুপাপাতের কালিনগর বাজারে দুই পাড়ের মধ্যবর্তী সংযোগ স্থল ব্রিজের উপর সংঘর্ষে নিহত হয় কৃষক দাদা মো. নান্নু ফকির।
সালথা উপজেলার যদুনন্দী ও বোয়ালমারী উপজেলার রূপাপাত ইউনিয়নের কদমী এলাকার লোকজনের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ চলাকালে নান্নু ফকির (৬৫) নামের ওই কৃষক মারা যান। বুধবার রাতে রুপাপাতের কালিনগর ও কুমার নদের ওপার যদুনন্দী দুই বাজারের মাঝ খানের ব্রিজে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। বন্ধ রয়েছে কুমার নদের দুই পাড়ের যদুনন্দী ও রূপাপাতের কালিনগর বাজার। দুইপাড়েই পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। বন্ধ রয়েছে লোকজন ও যানবাহন চলাচলও। ঈদের সময় বাজার বন্ধ থাকায় লোকশানের মুখে রয়েছে ব্যবসায়ীরা।

বুধবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, যদুনন্দী গ্রামের ইলিয়াসের ছেলে মেহেদী বিকেলে রূপাপাত বাজারে গেলে রূপাপাত ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমানের লোকজন তাকে মারধর করে। এ ঘটনা শোনামেলা চলাকালে যদুনন্দীর আরও কয়েকটি ছেলেকে রূপাপাত ময়রার মাঠে নিয়ে চেয়ারম্যানের লোক বলে পরিচিত মুরাদ, রাকিবুল, আব্দুল্লাহ, চয়ন মারপিট করে। এ ঘটনা জানার জন্য রাত ৮টার দিকে যদুনন্দীর লোকজন কুমার নদের পাড়ের ব্রিজ পার হয়ে রূপাপাত বাজারে ঢুকতে গেলে কদমীর লোকজন তাদের ধাওয়া করে। এ সময় দুই পক্ষ ইটপাটকেল ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় ব্রিজের দুইপাশ থেকে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও দফায় দফায় সংঘর্ষ চলতে থাকে।

দুই পাশ থেকেই ইটের খোয়া ছোড়া হয়। ইটের খোয়ায় অনেকে আহত হয়। সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে এ সময় সালথা থানার পুলিশ ২০ রাউন্ড রাবার বুলেট, টিয়ার সেল, সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। বোয়ালমারী থানা পুলিশও ৩০-৩৫ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। বোয়ালমারী থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ নুরুল আলম এবং সালথা থানার এসআই মো. আওলাদ হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সংঘর্ষ চলাকালে ব্রিজের উপর ভারী কোন কিছুর আঘাতে কৃষক নান্নু ফকির লুটিয়ে পড়েন। আহত নান্নু ফকিরকে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার সময় পথেই তার মৃত্যু হয়। এ ব্যাপারে মুকসুদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রায়হান ইসলাম সুমন মোবাইল ফোনে বলেন, মৃত অবস্থায় নান্নু ফকিরকে হাসপাতালে আনা হয়। কি কারণে তার মৃত্যু হয়েছে সে বিষয়টি পুলিশের সুরতহাল রিপোর্ট ও লাশের ময়না তদন্তের পর স্পষ্ট হবে। শরীরের আঘাতের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শরীরে আঘাত আছে তবে মৃত ব্যক্তি শরীরের আঘাতের বিষয়ে কিছু বলা যাবেনা। থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠিয়েছে।

নিহত নান্নু ফকিরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির সবাই নিথর হয়ে বসে আছে। বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে স্ত্রী ছেলে-মেয়ে। নিহতের ছেলে মাহফুজ ফকির (৩৫) বলেন, টেটা বা ফুলকুচি (কোচ) দিয়ে কুপিয়ে তার পিতাকে হত্যা করা হয়েছে। সে বিকাশ থেকে টাকা উঠানোর জন্য বাজারে গিয়েছিল। এ সময় সংঘর্ষ শুরু হলে তার পিতা তাকে খুঁজতে বাজারে গিয়েই সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে যায়। সংঘর্ষে পুলিশসহ কমপক্ষে ৩০জন আহত হয়েছে। আহতদের মুকসুদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
সংঘর্ষের বিষয়ে অভিযোগের তীর রূপাপাত ইউনিয়নের চেয়াম্যান মো. মিজানুর রহমানের দিকে গেলেও তাঁর বক্তব্যের জন্য তাঁকে পাওয়া যায়নি। একাধিকবার ফোন দিয়ে তাঁর মোবাইল (০১৭১৫৯১০১৪৫) বন্ধ পাওয়া যায়। রূপাপাত বাজারের নিকট অবস্থিত তাঁর বাস ভবনে গেলে চেয়ারম্যানের স্ত্রী ইশরাত জাহান (৩৩) বলেন, চেয়ারম্যান এসব ঘটনা কিছুই জানেনা। সে মঙ্গলবার সারাদিন ফরিদপুর ছিলো। সন্ধ্যার পর বাড়িতে আসে। তারপর বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। বুধবার দুপুর পর্যন্ত বাড়িতে ফিরে নাই। তাঁর দুটো ফোনই বন্ধ রয়েছে।

সালথা থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ সাদী যদুনন্দী বাজারে কর্তব্যরত অবস্থায় ছিলেন। সাংবাদিক পরিচয় পেয়েই তিনি বলে ওঠেন, এ এলাকার লোকজন খুবই খারাপ। তবে আর বেশি দিন খারাপ থাকবেনা। সব সোজা করে ফেলবো। একটা করে ধরবো আর ঘাড় মটকে দিবো। সংঘর্ষের বিষয়ে কিছু বলতে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন।
বোয়ালমারী থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ নুরুল আলম দুপুর পর্যন্ত নিহত নান্নু ফকিরের বাড়িতে রয়েছেন। তিনি বলেন, যদুনন্দী ও রূপাপাত ইউনিয়নের দুই চেয়ারম্যানের মধ্যে আধিপত্য নিয়ে দ্ব›দ্ব রয়েছে। সংঘর্ষের আগে যদুনন্দীর কোন ছেলেকে রূপাপাত বাজারে মারধর করেছে। তার জের ধরে উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে ফরিদপুর থেকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এ সময় দুই থানার পুলিশ রাবার বুলেট, টিয়ার সেল, সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে।
অপরদিকে একই রাতে পরমেশ্বরদী ইউনিয়নের জয়পাশা গ্রামে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই গ্রæপের সংঘর্ষে প্রায় ১৫জন আহত হয়। গুরুতর আহত মরিয়মকে ফরিদপুর শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। লিপিকা ও সিরাজকে বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। অপরদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।

Check Also

বড় জয়ে শুরু বাংলাদেশের বিশ্বকাপ প্রস্তুতি

ম্যাচ শুরুর আগেই চট্টগ্রামের আকাশে ছিল মেঘের আনাগোনা। আগেরদিন সেখানে হয়েছে বৃষ্টি। উইকেটেও অনেকটা সবুজ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

x