ন্যায়বিচার সবার জন্য, তবু গ্রামীণ দরিদ্ররা এখনো বঞ্চিত
সংবিধান বলে, ন্যায়বিচার সকল নাগরিকের মৌলিক অধিকার। কিন্তু বাস্তবে দেশের প্রান্তিক গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠী এখনো সেই ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত। সরকারি লিগ্যাল এইড কার্যক্রম থাকলেও সেবার সীমাবদ্ধতা, জনবল ঘাটতি ও আইনি জটিলতার কারণে বহু মানুষ ন্যায়বিচার পাচ্ছেন না।
জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার কৃষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “একটা জমি নিয়ে ঝামেলা ছিল। শুনলাম সরকার বিনা পয়সায় আইনজীবী দেয়। কিন্তু কোথায় গেলে পাবো, কাকে বলবো—কেউ জানায় নাই। তিন মাস ঘুরেও বিচার পাই নাই।”
তার অভিজ্ঞতা গ্রামীণ দরিদ্র মানুষের বাস্তব চিত্রই তুলে ধরে। তথ্য-অভাব ও প্রশাসনিক জটিলতা অনেককে ন্যায়বিচার থেকে দূরে রাখছে।
জামালপুর জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার আল-মামুন বলেন, “আমরা দরিদ্র জনগণের জন্য বিনা খরচে আইনজীবী সরবরাহ করি। কিন্তু জনবল ও বাজেটের সীমাবদ্ধতা আছে। তাছাড়া অনেক মানুষ জানেই না তারা এই সেবা পেতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সচেতনতা বাড়ানো গেলে লিগ্যাল এইড কার্যক্রম আরও কার্যকর হবে।
জামালপুর আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট লতিফা সুলতানা লাকি বলেন,“গ্রামীণ নারীরা সামাজিক ভয় ও লজ্জার কারণে মামলা করতে দ্বিধা করে। আদালতের ভাষা ও প্রক্রিয়া তাদের কাছে কঠিন মনে হয়। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য আলাদা সহায়তা কাঠামো দরকার।”
তিনি মনে করেন, আদালত ও থানায় নারী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য পৃথক কাউন্টার চালু করা উচিত।
জামালপুর আইন কলেজের অধ্যক্ষ মো. নুরুল করিম চটন বলেন,“আইনের ভাষা ও প্রক্রিয়া সাধারণ মানুষের জন্য অনেক জটিল। গ্রামীণ মানুষ আইনজীবীর কথাই ঠিকমতো বুঝে না। তাই আইনি ভাষা সহজ করতে হবে, পাশাপাশি আইনি শিক্ষা ছড়িয়ে দিতে হবে।”
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বাস্তবায়ন ও প্রশিক্ষণ হিট ফাউন্ডেশনের পরিচালক অপারেশন বাংলাদেশ মুশফিকুর রহিম রনি বলেন,“আমরা প্রতি মাসে গ্রামে আইনি সচেতনতা সভা করি। কিন্তু সরকারি-বেসরকারি সমন্বয় না থাকায় অনেক সময় মানুষ সেবার সুযোগ হারায়।”
























