পাটের পোকা মাকড় দমন করুন
- নানা রকম পোকা মাকড় পাট গাছের ক্ষতি করতে পারে। এদের মধ্যে সাদা মাকড়, বিছাপোকা, ঘোড়াপোকা ও চেলেপোকা মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে। সময় মত এদের দমন করুন।
পাটের হলুদ বা সাদা মাকড়
- হলুদ বা সাদা মাকড় পাট গাছের কচি পাতার উল্টো দিকে বসে পাতার রস চুষে খায়। পাতা তামাটে রং ধারণ করে। একটানা অনাবৃষ্টির ফলে আক্রমণ ব্যাপক হয়। ক্রমে পাতা ঝরে যায় ও ডগা মরে যায়। ফলে পাট গাছে শাখা প্রশাখা বের হয়।
- হলুদ বা সাদা মাকড়ের আক্রমন দেখা দিলে সাথে সাথে আধা কেজি নিম পাতা ১০ কেজি পানিতে ৫ থেকে ১০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। ১০ মিনিট পর নিম পাতার নির্যাস ছেকে নিন। এ নির্যাস উপরোক্ত নিয়মে (ডগার ১০ম পাতা পর্যমত্ম) পাট গাছে ছিটিয়ে হলুদ মাকড় দমন করা যায়।
- মাকড়নাশক থায়োভিট ৮০ ডবিস্নউপি, রনোভিট ৮০ ডব্লিউপি বা কুমুলাস ৮০ ডবিস্নউপি ২.৫ গ্রাম প্রতি লিটার পানি এবং সানমেক্টিন ১.৮ইসি ১মিলি প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে একর প্রতি স্প্রে মেশিনের সাহায্যে এমনভাবে ছিটাতে হবে যেন ডগার উপরের কচি পাতাগুলো (১০ম পাতা পর্যমত্ম) ভালভাবে ভিজে যায়। প্রথম বার স্প্রে করার দ্বিতীয় দিন একইভাবে ঔষধ আবার ছিটালে ভাল ফল পাওয়া যায়। মনে রাখতে হবে যে ডগার পাতায় ঔষধ ছিটালেই যথেষ্ট।
পাটের বিছা পোকা
- বিছা পোকা বাচ্চা অবসহায় দলবদ্ধভাবে থাকে এবং পাতার সবুজ অংশ খেয়ে পাতা ঝাঝড়া করে ফেলে। এ অবস্থায় পাতা সহ বিছা পোকাগুলো তুলে অল্প কেরোসিন মিশ্রিত পানিতে ডুবিয়ে অথবা পায়ে মাড়িয়ে অতি সহজে দমন করা যায়। আক্রমণ ব্যাপক হলে এবং বিছা পোকাগুলো হাতে তুলে মেরে ফেলা সম্ভব না হলে হেজিনন ৬০ইসি ১.৫মিলি লিটার পানি, ইমিডাকোলর ১০ডবিস্নউপি ১.৫গ্রাম প্রতি লিটার পানি, সেভিন ৮৫এসপি ০.৫মিলি প্রতিলিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করলে এই পোকা দমন করা যায়।
পাটের ঘোড়া পোকা
- ঘোড়া পোকা গাছের কচি পাতা খেয়ে গাছের ক্ষতি করে। আক্রমণের প্রকোপ বাড়লে এরা গাছের ডগা পর্যন্ত খেয়ে ফেলে। ঘোড়া পোকার আক্রমণ দেখা দিলে ক্ষেতে বাঁশ বা গাছের ডাল পুতে পাখি বসার ব্যবস্থা করম্নন। পাখিরা পোকা খেয়ে পোকা দমনে সাহায্য করে। পোকার আক্রমণ অধিক হলে ক্ষেতে কীটনাশক ঔষধ যেমন হেজিনন ৬০ইসি ১.৫মিলি লিটার পানি, ইমিডাকোলর ১০ডবিস্নউপি ১.৫গ্রাম প্রতি লিটার পানি, সেভিন ৮৫এসপি ০.৫মিলি প্রতিলিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করলে এই পোকা দমন করা যায়।
পাটের চেলে পোকা
- বৈশাখের প্রথম হতে চারা পাট গাছে এদের আক্রমণ দেখা দেয় এবং তা ফসল কাটা পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। পূর্ণ বয়স্ক পোকা চারা গাছের পাতা ছিদ্র করে খায়, এবং চারা গাছের কচি ডগায় ছিদ্র করে ডিম পাড়ে। ডিম থেকে বাচ্চা বের হয়ে ডগার ভিতরে চলে যায়, ফলে গাছের ডগা মারা যায়। দূর থেকে মরা শুকনা ডগা সনাক্ত করা যায়। পরবর্তীতে ঐ স্থান থেকে শাখা প্রশাখা বের হয়।
- বীজ বপনের সময় ক্ষেতের আশে পাশে যদি অবাঞ্ছিত আগাছা থাকে তা পরিস্কার করে ফেলতে হবে। মৌসুমের প্রথমেই পাটের পরিচর্যার সময় ঐ সকল ডগা আক্রান্ত গাছগুলি তুলে ধ্বংস করতে হবে। এতে পোকার উপদ্রব কমে যাবে। প্রয়োজনবোধে রাসায়নিক ঔষধ ছিটিয়ে দিলে ভাল ফল পাওয়া যাবে।
- পোকার আক্রমণ অধিক হলে ক্ষেতে কীটনাশক ঔষধ যেমন হেজিনন ৬০ইসি ১.৫মিলি লিটার পানি, সিমবুশ ১০ইসি ০.৫মিলি প্রতিলিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করলে এই পোকা দমন করা যায়।
পাটের রোগবালাই দমন করুন
- নানা রকম রোগবালাই পাট গাছের ক্ষতি করতে পারে। এদের মধ্যে ঢলেপড়া, কান্ডপচা কালো-পট্রি, শুকনো ক্ষত, আগা শুকিয়ে যাওয়া, গাছের গোড়া পঁচা, শিকড়র গিট, পাতার হলদে-সবুজ ছিট পড়া বা পাতার মোজাইক রোগ, পাতায় সাদা গুঁড়ো পড়া ইত্যাদি মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে। সময় মত এদের দমন করম্নন।
পাটের ঢলেপড়া রোগ
- এ রোগে গোটা পাট গাছ ঢলে পড়ে ও মরে যায়, তোষা পাটের চেয়ে দেশী পাটে এ রোগ কম দেখা দেয়। ছোট ও বড় উভয় অবস্থায় পাট গাছ এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। ফুল আসার সময় থেকে তোষা পাটে এ রোগ বেশী হয়।
- জমি আগাছা মুক্ত রাখতে হবে। আক্রামত্ম জমিতে ২-৩ বছর তোষা পাটের আবাদ না করে দেশী পাটের আবাদ করা যেতে পারে। পাট কাটার পর গাছের গোড়া, শিকড় ও অন্যান্য পরিত্যাক্ত অংশ সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। কেনাফ এবং মেস্তাতেও এ রোগ হয়।
- আক্রান্ত জমিতে পানি জমা থাকলে তা সরিয়ে ফেলতে হবে।
পাটের কান্ডপচা রোগ
- চারা যখন ৬-৮ ইঞ্চি লম্বা হয় তখন থেকে শুরু করে পূর্ণ বয়স পর্যন্ত পাট, কেনাফ ও মেসত্মা গাছ এ রোগে আক্রান্ত হয়। মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এই রোগের বিসত্মৃতি দেখা যায়। পাতা ও কান্ডে গাঢ় বাদামী রং-এর দেখা দেয়। এ দাগ গোড়া থেকে গাছের আগা পর্যন্ত যে কোন অংশে দেখা দিতে পারে। ভালভাবে লক্ষ্য করলে দাগী জায়গা গুলোতে অসংখ্য কালো বিন্দু দেখা যায়। এ কালো বিন্দু গুলোতে ছত্রাক জীবাণু থাকে, এরা বাতাসে বা বৃষ্টির পানির মাধ্যমে আশে পাশের গাছে সংক্রমিত হয়। কখনও কখনও আক্রান্ত স্থানে গোটা গাছই ভেঙ্গে পড়ে। অর্থ্যাৎ গাছের চারা অবস্থা থেকে আরম্ভ করে পাট কাটা পর্যন্ত এ রোগের প্রকোপ দেখা যায়। কেনাফ ও মেসত্মা ফসলেও এ রোগে আক্রামত্ম হয়।
- আক্রান্ত গাছগুলোকে তুলে দূরে মাটিতে পুতে ফেলে কিংবা পুড়ে ফেলে এ রোগ দমন করা যায়। ডাইথেন এম-৪৫, ম্যানার এম-৪৫, এনডোফিল এম-৪৫ ১০ লিটার পানিতে ২০ গ্রাম ঔষধ মিশিয়ে গাছের গোড়ার মাটিতে ২/৩ দিন পর পর স্প্রে মেশিনের সাহায্যে ছিটিয়ে এ রোগের আক্রমন কমানো সম্ভব।
পাটের কালো-পট্রি রোগ
- কালো পট্রি রোগের লক্ষণ প্রায় কান্ড পচা রোগের মতই। তবে এতে কান্ডে কাল রং এর বেষ্টনীর মত দাগ পড়ে। আক্রান্ত স্থানে ঘষলে হাতে কালো গুড়ার মত দাগ লাগে। সাধারণতঃ গাছের মাঝামাঝি বয়স থেকে রোগ বেশী দেখা দেয়। এ রোগে গাছ ভেঙ্গে পড়ে না তবে গোটা গাছটি শুকিয়ে মরে যায়, ফলে আঁশ নিম্নমানের হয় ও ফলন কম হয়। সাধারণত তোষা পাটে এ রোগের প্রকোপ বেশী দেখা যায়। খরার সময় এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশী হয়। সাধারণত জুন মাস থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত এ রোগের প্রকোপ দেখা যায়।
- নীরোগ গাছ হতে বীজ সংগ্রহ করে শোধন করে নিলে এ রোগের প্রাদুর্ভাব কমে। ডাইথেন এম-৪৫, ম্যানার এম-৪৫, এনডোফিল এম-৪৫ ১০ লিটার পানিতে ২০ গ্রাম ঔষধ মিশিয়ে গাছের গোড়ার মাটিতে ২/৩ দিন পর পর স্প্রে মেশিনের সাহায্যে ছিটিয়ে এ রোগের আক্রমন কমানো সম্ভব।
পাটের শুকনো ক্ষত রোগ
- এ রোগ শুধু দেশী পাট, কেনাফ ও মেস্তায় দেখা যায়। চারা অবস্থায় এ রোগ চারা মড়কের সৃষ্টি করে। বড় গাছের কান্ডে কালচে দাগ পড়ে। আক্রান্ত স্থান ফেটে যায়, ফাটা অংশ থেকে কখনও কখনও আঁশ ছিকড়ের মত বের হয়ে আসে। ক্ষতস্থানে জীবাণু সৃষ্টি হয়। এ জীবাণুগুলো বাতাসে উড়ে ফল আক্রমন করে। আক্রামত্ম ফল কালো ও আকারে ছোট হয়। এ ছত্রাকের বীজের স্থিতিশীলতা অনেক বেশী। বীজের অভ্যমত্মরে গভীরভাবে এ রোগের জীবাণু প্রবেশ করে এবং বীজকে প্রায় নষ্ট করে ফেলে। এ রোগে গাছ মরে না তবে আক্রান্ত অংশ শক্ত হয়। তাই পাট পচানোর পরেও আক্রান্ত স্থানের ছাল পাট কাঠির সাথে লেগে থাকে। এর ফলে আঁশ নিম্নমানের হয় এবং পাটের দামও অনেক কমে যায়। তোষা পাটে এ রোগ হয় না বলে জমিতে পর্যায়ক্রমে তোষা ও দেশী পাটের চাষ করলেও এ রোগের প্রকোপ অনেক কমে যায়। কান্ড-পচাঁ, শুকনো-ক্ষত ও কাল পট্রি এ তিনটি রোগই বীজ, মাটি বায়ুবাহী। এদের প্রতিকারের ব্যবস্থাও একই রকমের।
- পাট কাটার পর জমির আগাছা, আবর্জনা ও পরিত্যক্ত গাছের গোড়া উপরে পুড়ে ফেলতে হবে।
- বীজ বপনের আগে বীজ শোধন করে নিতে হবে। বীজ শোধনের জন্য প্রোভেক্স-২০০ (০.৪%) এর ব্যবহারে যথেষ্ট সুফল দেয়। পাটের প্রধান ছত্রাকজনিত রোগগুলো বীজ ও মাটি বাহী। বপনের আগে বীজ শোধনের ফলে রোগের প্রকোপ অনেক কমে যায়। শোধন করা সম্ভব না হলে বপনের আগে বীজ রোদে ভালভাবে শুকাতে হবে।
- জমিতে চারা অবস্থা থেকে শুরম্ন করে ফসল কর্তন পর্যন্ত যখনই রোগের প্রকোপ দেখা দিবে তখনই রাসায়নিক ঔষধ ছিটানোর ব্যবস্থা করতে হবে। প্রথমে রোগাক্রামত্ম গাছ উঠিয়ে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। পরে বেগতিক দেখলে প্রতি ১০ লিটার পানিতে ২০ গ্রাম ডাইথেন এম-৪৫ অথবা ম্যানার এম-৪৫ গুলে ৩-৪ দিন অমত্মর ২-৩ বার করে জমিতে ছিটাতে হবে। গাছের বয়স অনুসারে একর প্রতি ৩৫০-৪৫০ লিটার ঔষধ মিশানো পানি ছিটানো যেতে পারে।
- পাট পরবর্তী শস্য হিসাবে ধান, গম, আখ, সর্ষে, পিঁয়াজ, মটর, রসুন, মশুরী প্রভৃতির চাষ করা যেতে পারে। তিল, চিনাবাদাম, বরবটি, টমেটো, গোল আলু, পুঁইশাক, মূলা প্রভৃতি পাটের জমিতে পরবর্তী শস্য হিসাবে চাষ না করে রোগ দমনের জন্য সুপারিশকৃত শস্যক্রম পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে।
- নীরোগ পাট গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হবে। গাছের ৭০% ফল পাকলেই বীজ কেটে ফেলা উচিত। দেরী করলে ছত্রাক সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- জমিতে সর্বদা পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
পাট গাছের আগা শুকিয়ে যাওয়া রোগ
- সাধারণতঃ তোষা ও কেনাফ পাটে এ রোগ দেখা যায়। খরার পর ঝড়ে বা অন্য কোন কারণে গাছে আঘাত লাগলে এ রোগ বেশী হতে পারে। রোগে আক্রান্ত অংশ বাদামী রং এর হয় এবং আগা থেকে নীচের দিকে শুকাতে থাকে। ফুল আসার পর সচরাচর এ রোগ দেখা দেয়।
- কান্ড পঁচা রোগের প্রতিকারের যে ব্যবস্থা অবলম্বন করা হয় এ ক্ষেত্রেও সেই একই ব্যবস্থা অবলম্বন করতে হবে। তবে তোষা পাটের জমিতে পর্যায়ক্রমে দেশী পাটের চাষ করলে এ রোগের প্রকোপ কম হতে পারে। রোগ দেখা দিলেই ডাইথেন এম-৪৫ নামক ছত্রাকনাশক ঔষধ ১৮.৫ গ্রাম প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ২/৩ দিন পরপর অমত্মত ২ বার গাছে স্প্রে করতে হবে।
পাট গাছের গোড়া পঁচা রোগ
- যে সমসত্ম দেশী পাটের ক্ষেতে পানি নিষ্কাশন করা যায় না, সে সমসত্ম ক্ষেতের পাট গাছের গোড়ায় সাদা তুলার আঁশের মত এক প্রকার ছত্রাক রাতারাতি বেড়ে উঠে। কয়েকদিন পর সরিষার দানার মত বাদামী রংয়ের জীবাণুর দানা দেখা যায়। এ রোগের ফলে গাছের গোড়া পঁচে যায় এবং গাছ ভেঙ্গে পড়ে। জুন থেকে অক্টোবর মাস পর্যমত্ম এই রোগের প্রকোপ দেখা যায়। জমিতে এ রোগ দেখা দিলে গাছ কেটে আঁশ সংগ্রহ করা উচিত। দেশী ও তোষা উভয় পাটেই এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়।
- এ রোগের প্রতিকারের জন্য জমি পরিষ্কার পরিছন্ন এবং আর্বজনামুক্ত রাখতে হবে। পানি নিষ্কাশনের উপযুক্ত ব্যবস্থা করতে হবে। ডাইথেন এম-৪৫ প্রতি ১০ লিটার পানিতে ২০ গ্রাম মিশিয়ে গাছের গোড়ায় পর পর দু’দিন প্রয়োগ করলে রোগের ব্যাপকতা কমে যায়।
পাট গাছের শিকড়ের গিট রোগ
- এ রোগে আক্রান্ত গাছের শিকড়ে ছোট বড় অনেক গিট দেখা যায়। এ গিটের ভিতর এক প্রকার কৃমিকীট (নিমোটোড) অবস্থান করে এবং গাছের ক্ষতি সাধন করে। এরা বিশেষ করে গাছের শিকড়ে ছত্রাক আক্রমণের অনেক সুবিধা করে দেয়। গাছের বাড় কমে যায় এবং ফুল কম ধরে। বালিযুক্ত হালকা মাটি বেশী দিন ভিজা থাকলে জমিতে পাটের শিকড় গিট রোগ দেখা যায়। দেশী ও তোষা উভয় পাটেই এই রোগের প্রকোপ দেখা যায়।
- যে সমস্ত পাটের জমিতে এ রোগ দেখা দেয়, পরবর্তী রবি মৌসুমে ঐ সব জমিতে সরিষা, গম, যব, ভুট্রা, চিনা প্রভৃতি এবং খরিফে ধান, কাউন, শন, জোয়ার ইত্যাদি বপন করা হলে রোগ জীবাণু কমতে থাকে। রাসায়নিক ঔষধ ফুরাডান-৫ জি, ৪০ কেজি প্রতি হেক্টরে প্রয়োগ করে নিড়ানী এবং চুড়ামত্মভাবে গাছ পাতলা করে দিতে হবে। সম্ভব হলে জমি পতিত বা পর্যায়ক্রমে মেসত্মার চাষ করা যেতে পারে, বপনের বেশ কিছু দিন আগে চাষ করে জমি রোদে ফেলে রাখতে হবে।
পাটের পাতার হলদে-সবুজ ছিট পড়া বা পাতার মোজাইক রোগ
- মোজাইক আক্রান্ত পাট গাছের সংগৃহীত বীজ বপনের ফলে এ রোগ হয়ে থাকে। গাছ বড় হওয়ার সাথে সাথে পাতায় হলদে সবুজ ছিট দাগ পড়ে, আক্রান্ত গাছের বাড় কমে যায় এবং আঁশের পরিমাণ শতকরা ৫০% পর্যমত্ম কমে যাওয়ার আশংকা থাকে। মোজাইক আক্রান্ত পাট গাছের সংগৃহীত বীজ বপনের ফলে এ রোগ হয়ে থাকে। পরাগায়ণের মাধ্যমে এবং হোয়াইট ফ্লাই (সাদা মাছি) নামক এক প্রকার ক্ষুদ্র মাছি দ্বারা এ রোগ বিস্তার লাভ করে। সাদা মাছি আক্রান্ত গাছের রস খেয়ে সুস্থ গাছের পাতার রস খাওয়ার সময় এ জীবাণু সুস্থ গাছে সংক্রমিত হয়।
- প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসাবে নীরোগ গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করা উচিত। জমিতে আক্রান্ত চারা দেখা মাত্র তা তুলে ফেলতে হবে। কোন ক্রমেই হলদে সবুজ ছিট পড়া আক্রান্ত গাছ জমিতে রাখা যাবে না। সুস্থ গাছের জন্য মাঝে মাঝে পাট ক্ষেতে ডায়াজিনন বা হেমিথ্রিন প্রতি ১০ লিটার পানিতে ১৫ মিলি পরিমাণ ঔষধ মিশ্রণ তৈরী করে ৩০-৪০ দিন বয়সের গাছে ৭ দিন পর পর ২-৩ বার ছিটানো উচিত। পাট গাছের মাঝামাঝি বয়সের বাড়ন্তকালে যদি এ রোগ ব্যাপকভাবে দেখা দেয় তা হলে ঐ ক্ষেতের পাট গাছ থেকে আঁশ সংগ্রহ করা চলতে পারে। কিন্তু বীজ সংগ্রহ করা একেবারেই নিষিদ্ধ। আক্রান্ত গাছের বীজ সংগ্রহ করে বপন করলে পরবর্তী বছর ব্যাপকভাবে এ রোগ দেখা দেবে।
পাটের পাতায় সাদা গুঁড়ো পড়া রোগ
- পাতার উপর হালকা পাউডারের মত অসংখ্য ছাতা রোগের জীবাণু থাকে। এ রোগ পাট মৌসুমের শেষে বীজ সংগ্রহের জন্য রাখা পাট গাছে দেখা যায়। দেশী পাটে এ রোগের প্রকোপ বেশী।
- রোগের লক্ষণ দেখা মাত্রই থায়োভিট বা কোন গন্ধক জাতীয় ঔষধ ৩২.৫ গ্রাম প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ছিটানো উচিত।
পাটের ক্ষেতে টানা বাছ
- পাটগাছের বয়স যখন ৭০-৮০ দিনের মধ্যে তখন যে কচি পাটেরচারা হাতের সাহায্যে টেনে তুলে পাতলা করা হয় তা টানা বাছ নামে পরিচিত। এ সময় কচি পাটের গাছ না ফেলে পচিয়ে খুব উন্নত মানের পাটআঁশ পাওয়া যায়, যা সুক্ষ সুতা তৈরী করার জন্য ব্যবহ্নত হতে পারে। পুর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে, পাট গাছের প্রতিটি দিন বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপুর্ণ। তাই নিড়ানী ও পাতলা করনে অবহেলা করলে গাছের বৃদ্ধির যে ক্ষতি হয় তা কোন ভাবেই পুরণ হয় না এবং ফলন কমে যায়।
সূত্রঃ বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই)