আব্দুর রহিম, সাতক্ষীরা জেলা প্রতিনিধি: হাবিবুল ইসলাম হাবিব একজন সাংসদ হয়ে ওই সময়ের জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেত্রী এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর সফর সঙ্গীদের উপর আগ্নেয়াস্ত্রসহ হামলার ঘটনায় নেতৃত্ব দেওয়া সন্দেহাতীতভাবে প্রমানিত হয়েছে। আপীলকারী আসামী হাবিবুল ইসলাম হাবিব জেনে ও বুঝে দেশের প্রচলিত আইন-কানুন লংঘন করেছেন-যা একেবারেই অনভিপ্রেত।
জেলার কলারোয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা মামলায় জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আপীলকারী প্রধান আসামী সাবেক সাংসদ মো: হাবিবুল ইসলাম হাবিবের আপীল মামলার রায়ের পর্যবেক্ষনে এমন মন্তব্য করেছেন সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমান।
বুধবার প্রকাশ্য আদালতে তিনি উক্ত আপলি মামলার রায় ঘোষনা করেন এবং রায়ে হাবিবুল ইসলাম হাবিবের নিন্ম আদালতের দেয়া সাজা বহাল রাখেন। রায়ে তিনি আরও উল্লেখ করেন, হাবিবুল ইসলাম হাবিবেকে নিন্ম আদালত (সাতক্ষীরার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত) হতে আইনের যে সমস্ত ধারায় যে পরিমাণ দন্ড প্রদান করা হয়েছে তা বাংলাদেশে প্রচলিত ফৌজদারী কার্যবিধি ও পেনাল কোডকে পুরোপুরি সমর্থন করে। উক্ত রায় ও দন্ডাদেশ প্রদানে বিচারিক আদালত তথ্য ও আইনগত কোন ভুল করেননি। ফলে, বিচারিক আদারতের রায় ও দন্ডাদেশে হস্তক্ষেপের কোন কারন নাই। সেজন্য ক্রিমিনাল আপীল ৪০/২১ মামলাটি না-মঞ্জুর করা হল। একই সাথে আরও একজন আসামী কলারোয়া উপজেলার রায়পুর গ্রামের আক্তার আলীর পুত্র ইয়াছিন আলীর ক্রিমিনাল আপীল ১১৮/২১ মামলাটিও না-মঞ্জুর করেন বিচারক শেখ মফিজুর রহমান। আদালত উল্লেখিত আপীল মামলাদুটির রায়ের এক পর্যায়ে আরও উল্লেখ করেন, হামলা মামলার প্রধান ভিকটিম শেখ হাসিনা ঘটনার সময় রাষ্ট্রের সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী, তৎকালীন সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেত্রী ছিলেন, স্বাভাবিক ভাবেই তাঁর অফিস ও কার্যালয় রাজধানী ঢাকাতে অবস্থিত। রাজধানী ঢাকা হতে ৩শ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মফস্বল শহরে একটি মানবিক কাজ শেষে (সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার ধর্ষিত স্ত্রীকে দেখতে আসেন) ফেরার পথে আসামীদের দ্বারা সংঘটিত এমন ঘটনা ধিক্কারজনক ও চরমভাবে নিন্দনীয়।
এটি কেবলই একটি দন্ডনীয় অপরাধ নয় বরং দেশের রাষ্ট্রাচার, মানবিকতা, নৈতিকতা ও সৌজন্যবোধের ক্ষেত্রে চরম কুঠারাঘাত। আসামীরা সাংবাদিকদেরকেও ঘটনার সময় লাঞ্চিত করেছিল যা সাক্ষীগন একে অপরকে হুবহু সমর্থন করে সাক্ষ্য প্রদান করেন। জানা যায়, ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট কলারোয়ায় সাবেক বিরোধী দলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত দ্রুত বিচার আইনের একটি মামলায় ২০২১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারী সাতক্ষীরার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের এক রায়ে সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাতক্ষীরার তালা-কলারোয়া আসনের সাবেক এমপি, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ৫০ জন আসামীর সকলকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়।
এর মধ্যে সাজাপ্রাপ্ত আসামী সাবেক সাংসদ হাবিবুল ইসলাম হাবিব বিচারিক আদালতের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল আপীল ৪০/২১ এবং অপর আসামী ইয়াছিন আলী ক্রিমিনাল আপীল ১১৮/২১ নম্বর মামলা দায়ের করেন জেলা ও দায়রা জজ আদালতে। মামলা দুটি চুড়ান্ত শুনানী শেষে বিচারক সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমান আপীল মামলা দু’টি না মঞ্জুর করে বিচারিক আদালতের দেয়া সাজা বহাল রাখার আদেশ দেন। রাষ্ট্র পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি এড. আব্দুল লতিফ ও আসামী পক্ষের মামলা পরিচালনা করেন এড. আব্দুল মজিদ। উল্লেখ্য: ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট তৎকালিন বিরোধী দলীয় নেতা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাতক্ষীরায় মুক্তিযোদ্ধার ধর্ষিতা স্ত্রীকে হাসপাতালে দেখে ফিরে যাবার পথে কলারোয়ায় সন্ত্রাসীদের হামলা শিকার হন। এতে শেখ হাসিনা অক্ষত থাকলেও তার সফরসঙ্গী ফাতেমা জাহান সাথী, জোবায়দুল হক রাসেল, ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুজিবর রহমান, শহিদুল হক জীবন, আবদুল মতিনসহ অনেকেই আহত হন। এ সময় বেশ কয়েকজন সাংবাদিকও হামলার শিকার হন। এ ঘটনায় কলারোয়া মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো: মোসলেমউদ্দিন ২৭ জনকে আসামী করে একটি মামলা করেন। এ মামলা থানায় রেকর্ড না হওয়ায় তিনি নালিশী আদালত সাতক্ষীরায় মামলাটি করেন। পরবর্তীতে মামলাটি খারিজ হয়ে গেলে ২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর ফের মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করা হয়। এসময় তদন্তকারী কর্মকর্তা সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন। সাতক্ষীরার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার বিচার হয়। বিচারক মো: হুমায়ূন কবীর সাক্ষ্য-প্রমানের আলোকে সকল আসামীকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করেন