Saturday , 11 May 2024
শিরোনাম

প্রেমিকার মায়ের অতিরিক্ত লোভ ও প্রেমিকার প্ররোচনায় অভিমানে আত্মহত্যা- আদালতে মামলা

মোঃজিলহাজ বাবু

স্কুলে পড়ার সুবাদে দীর্ঘ ২-৩ বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক। ছেলের পরিবার ছেলের প্রেমের সম্পর্ক মেনে নিতেও চেয়েছেন। কিন্তু মেয়ের মায়ের অতিরিক্ত লোভ ও সম্পর্ক মেনে না নেয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে অভিমানে আত্মহত্যা করেছে তরুন এরাজ আলী (২৪) নামে এক ছাত্র। গত ১০ মার্চ সকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলার বারঘরিয়া ইউ‌নিয়নের চামাগ্রাম-ভুট্টিপাড়া গ্রামে নিজ বাড়ির সয়নকক্ষে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে রেজাউল করিমের ছেলে এরাজ আলী।

মেয়ে ও তার পরিবারকে মৃত্যুর প্ররোচনা দেয়ার অভিযোগ এনে আদালতে মামলা দায়ের করেছে নিহত এরাজ আলীর মা মোসা. জুলেখা বেগম। মামলায় প্রধান আসামী করা হয়েছে প্রেমিকা একই ইউনিয়নের লক্ষীপুর মাস্টারপাড়া এলাকার রওনক আফরোজ হিয়াকে। অন্যান্য আসামীরা হলেন হিয়ার মা মোসা. আকলিমা বেগম, বড় বোন লিজা খাতুন ও চাচাতো ভাই বদরুল ইসলাম।

মামলার নথি, স্থানীয় বাসিন্দা, নিহত ও হিয়ার পরিবার এবং পুলিশ সুত্রে জানা যায়, গত কয়েক বছর ধরে একই এলাকার সদর উপজেলার লক্ষীপুর-মাষ্টারপাড়া গ্রামের একরামুলের মেয়ে রওনক আফরোজ হিয়ার সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিলো এরাজের। সম্পর্কের সূত্র ধরে সেনাবাহিনীর চাকুরি দেয়ার নাম করে ৭ লাখ টাকা নেয় হিয়ার মা। পরে টাকা দিতে ও হিয়ার সাথে এরাজের বিয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানালে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয় এরাজ। অভিমান ও বিপুল পরিমাণ টাকার মানসিক চাপে সে আত্মহত্যা করেছে বলে জানান, এরাজের পরিবার।

জানা যায়, গত ১০ মার্চ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে এরাজের মা ও খালা ঘরে ডাকাডাকি করে সাড়াশব্দ না পেয়ে ভেন্টিলেশনের ফুটো দিয়ে তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পেয়ে চিৎকার দেয়। তাদের চিৎকারে এরাজের বাবা রেজাউল করিম সেখানে গিয়ে ছেলেকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পেয়ে কান্না ও চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন ছুটে আসে। পরে দরজা ভেঙে ঝুলন্ত অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত হয়ে আত্মহত্যার আগে লিখে রাখা একটি নোট উদ্ধার করে। এতে যা লেখা আছে তা হুবহু তুলে ধর হলো- “তুই আমার জীবন নষ্ট করলি। তোর কারনে আজ এই পৃথিবী থেকে আমাকে বিদায় নিতে হচ্ছে। সবার কাছে খারাপ হয়ে দুনিয়া ছাড়তে হলো। কিন্তু মরেও তোকে ছাড়ব না। তোর মা-ভাই কাউকে না। মা-বাবা আমি তোমাদেরকে অনেক ভালোবাসি। হিয়া অনেক খারাপ মেয়ে, কিন্তু আমি তা বুঝতে পারিনি। তার প্রেমে অন্ধ হয়ে গেছিলাম। আমায় ক্ষমা করে দিও তোমরা। তাদেরকে কঠোর শাস্তি দিতে হবে। তোমাদেরকে পাথর হতে হবে, কারো কথা শুনবে না। আই লাভ ইউ মা।”

নিহত এরাজের বাবা রেজাউল করিম বলেন, রওনক আফরোজ হিয়া এবং তার পরিবারের প্ররোচনার কারনেই আমার ছেলে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে। সারারাত আমার ছেলে এরাজের সাথে হিয়া ম্যাসেজে এরাজকে আত্মহত্যা করায় প্ররোচিত করেছে। এমনকি তার ফোনে এখনও সমস্ত ম্যাসেজ রয়েছে। আমার ছেলেকে বারবার বলেছে, তুই মরে যা, তাহলে আমরা ৭ লাখ টাকা দেয়া থেকে রক্ষা পাব।

এরাজের মা জুলেখা বেগম কান্না বিজড়িত কন্ঠে জানান, আমার ছেলে এরাজের সাথে হিয়ার কয়েক বছর আগে পরিচয় হয় এবং গড়ে উঠে প্রেমের গভীর সম্পর্ক। আমরা উভয় পরিবার বিষয়টি অবগত হলে এরাজ পাগলের মতো হয়ে হিয়াকে বিয়ে করতে চাই। এই সুযোগে এরাজের নিকট গোপনে ৭ লাখ টাকা দাবী করে বিয়ের জন্য হিয়ার পরিবার। ৭ লাখ টাকা দেয়ার পরেও বিয়ে দিবো না বলে সাফ জানান হিয়ার মা-বোন ও ভাই। আর তাতেই আত্নহত্যা করে আমার ছেলে। আদালতে মামলা করেছি আইনের মাধ্যমে আমার ছেলের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক স্বাস্তি ফাঁসি চাই।

অভিযুক্ত হিয়াকে তার বাসায় গিয়েও পাওয়া যায়নি। তার মা আকলিমা বেগম জানান, দুইজনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এর সূত্র ধরে আমাদের বাড়িতে একাধিকবার এসেছে নিহত এরাজ আলী। এনিয়ে স্থানীয়ভাবে শালিসও হয়েছে। আমরা এখনও ৪৬ হাজার টাকা পাব৷ তবে কি কারনে, কেন এরাজ আত্মহত্যা করেছে, এবিষয়ে আমরা কিছুই জানি না।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার অফিসার-ইন-চার্জ (ওসি) মোজাফফর হোসেন জানান, ঘটনার দিন খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়। এবিষয়ে থানায় একটি জিডি করা হয়েছে। তবে শুনেছি মৃত এরাজের মা বাদি হয়ে আদালতে মামলা করেছেন। এবিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Check Also

ঈদুল আজহায় ছুটি মিলবে যে কয়দিন

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে এবার ঈদুল আজহা উদযাপিত হতে পারে ১৭ জুন (সোমবার)। সরকারি ছুটির তালিকা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

x