ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাবের কারণে প্লাটিলেট বা অণুচক্রিকা আমাদের কাছে খুব পরিচিতি পেয়েছে। রোগীর প্লাটিলেট কমে গেলে পরিবার পরিজনের মাঝে আতঙ্ক তৈরি হচ্ছে। এটি বাড়ানোর জন্য নানা উপায়-উপকরণ কাজে লাগানোর প্রয়াস চলছে। এমন পরিস্থিতিতে আলোচনায় স্থান পেয়েছে পেঁপে পাতার রস। আমাদের আশে পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য উদ্ভিদের ভেষজগুণ রয়েছে। এসব উদ্ভিদ থেকে তৈরি হয়েছে বিভিন্ন জীবন রক্ষাকারী ওষুধ। সিনকোনা গাছের বাকল থেকে তৈরি কুইনাইন ম্যালেরিয়া নিরাময়ে এখন পর্যন্ত কার্যকরী দাওয়াই। ডেঙ্গু জ্বরের প্রতিক্রিয়ায় প্লাটিলেট কমে যাওয়াতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পেঁপে পাতার রস সেবন করা হচ্ছে। ফলাফল ইতিবাচক। ডেঙ্গু রোগের একটা অন্যতম প্রধান জটিলতা হচ্ছে রক্তে প্লাটিলেটের পরিমাণ কমে যাওয়া। অনুচক্রিকা হচ্ছে রক্ত জমাট বাঁধার জন্য সহায়তাকারী একটি রক্তকণিকা। এটি কমে গেলে কখনো হতে পারে ভয়াবহ রকমের রক্তক্ষরণ। সে জন্য ডেঙ্গুর রোগীদের রক্তে প্লাটিলেটের পরিমাণ নিয়মিত পরখ করা এবং এর বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।
পেঁপে পাতার রস কতটা গুরুত্বপূর্ণ
অণুচক্রিকা বৃদ্ধির জন্য পেঁপে পাতার রস একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পেঁপে পাতা রস সেবনের ফলে প্লাটিলেট ধরনের লাইপোক্সিজিনেজ নামক একটি উপাদান বেড়ে যায় পনেরো গুণ। যা রক্তের অণুচক্রিকা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এ ছাড়া পেঁপে পাতার মাঝে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যেটি ডেঙ্গু ভাইরাসের বিরুদ্ধেও কার্যকর। ডেঙ্গু জ্বরে প্লাটিলেট কমতে থাকলে পেঁপে পাতার রস খাওয়ানো যেতে পারে। ডেঙ্গু জ্বরের তৃতীয় দিন থেকেই প্লাটিলেট কমতে শুরু করে। সাধারণত ৫-৭ দিন পর এর পরিমাণ বাড়তে থাকে। তখন এটি বন্ধ করা যায়। বর্তমানে বিভিন্ন ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা পেঁপে পাতার রস থেকে ক্যাপসুল এবং সিরাপ তৈরি করছে। রসের বিকল্প হিসাবে এগুলো খাওয়ানো যেতে পারে। এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। এটি বিস্বাদ, তেতো। এটি খাওয়ার পর অনেকের বমি হতে পারে। এ ছাড়া বেশি পরিমাণ খেলে অনেক সময় পাতলা পায়খানা হতে পারে, এমনকি লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। পেঁপে পাতার রস বানানো সহজ। তিন-চারটি পেঁপের পাতা ভালো করে ধৌত করার পর টুকরো টুকরো করে কেটে নিতে হবে। এক কাপ বলক ওঠা পানিতে এগুলো ছেড়ে দিন। পানির রং সবুজ বর্ণ ধারণ করলে নামিয়ে ফেলুন। এরপর ছেঁকে রস আলাদা করুন। এর কটু স্বাদ দূর করার জন্য সঙ্গে মধু কিংবা চিনি মিশাতে পারেন। তারপর দুই চামচ করে দিনে দুই-তিন বার পরিবেশন করুন। তবে মনে রাখা দরকার এটি ডেঙ্গু রোগ নিরাময়কারী কোনো ওষুধ নয়। ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত রোগ। এর বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো চিকিৎসা এখন পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি।
লেখক: মেডিসিন স্পেশালিস্ট ও এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট, সিএমএইচ, ঢাকা।