শহিদুল ইসলাম, নিজস্ব প্রতিবেদক: উত্তরের সীমান্ত ঘেঁষা উপজেলা হলো কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী। আদমশুমারি ২০১১ সালের তথ্যমতে এ উপজেলায় জনসংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার ২৫০ জন। বর্তমানে এ সংখ্যা তো অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বৃহৎ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্ সেবা নিশ্চিত করার জন্য রয়েছে একটি ৫০ শয্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। কিন্তু সেই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ঠিকঠাক সুফল নিতে পারছে না অনেকেই।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, গ্যারেজে তিনটি অ্যাম্বুলেন্স আছে। দুইটি সচল ও একটি একদম অচল অবস্থা। সেখানে অনেকের সাথে কথা বলে জানা যায়, দুটি অ্যাম্বুলেন্স সচল থাকলেও, চালক না থাকায প্রায় দেড় বছর থেকে এভাবেই পড়ে আছে। চালক না থাকলে তো কেউই এর সুফল ভোগ করতে পারবে না।
রোগীর স্বজনরা বলছেন উন্নত চিকিৎসার জন্য জেলাসহ বিভাগে যেতে সরকারি ভাড়ার চেয়ে বেশি গুণতে হয় আড়াইগুন টাকা। এছাড়াও অনেক রকমের ভোগান্তি পোহাতে হয়। নিজ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও চালক না থাকায় সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন অনেকেই। অল্প খরচে রোগী আনা নেওয়ার দুর্ভোগ নিরসনে দ্রুত অ্যাম্বুলেন্স চালক চান উপজেলাবাসী।
জানা গেছে, ২০২১ সালের ১৩ জানুয়ারি তৎকালীন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সামছুন্নাহারসহ অপর একজন ডাক্তারের সরকারি কোয়াটারে চুরি সংঘটিত হয়। কোয়াটারের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে চুরির সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে ৪ জনকে আটক করে পুলিশ। নির্দেশ দাতা হিসাবে হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স চালক একাব্বর আলীকেও আটক করে পাঁচ জনের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে জেলে পাঠায় পুলিশ। সেদিনই অ্যাম্বুলেন্স চালক একাব্বর আলীকে সাময়িক বরখাস্ত করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সেই থেকে অ্যাম্বুলেন্সের গ্যারেজে রয়েছে তালাবদ্ধ। ২০২১ সালের ১১ই এপ্রিল অ্যাম্বুলেন্স চালক একাব্বর আলী কারাগার থেকে জামিনে বেরিয়ে আসলেও বরখাস্তকৃত চালক দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স চালাননোর নিয়ম নেই বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এরপর আর কোনো চালকও নিযুক্ত করা হয়নি। যার ফলে উপজেলার প্রায় ৩ লক্ষাধিক মানুষ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সরকারি অ্যাম্বুলেন্স সেবা থেকে বঞ্চিত।
হাসপাতালে ভর্তি রোগী রহিম উদ্দিন, হাসানুর রহমান, আরো অন্য রোগীর স্বজন আফজাল হোসেন ও মোমেনা বেগম সহ বেশ কয়েকজন জানান, রোগীদের উন্নত চিকিৎসার জন্য তো জেলা সদর হাসপাতাল বা বিভাগের উপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্সে চালক না থাকায় রোগী পরিবহনে চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। অতিরিক্ত টাকা দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করার সামর্থ্য তো সবার হয় না। সরকার এত টাকা খরচ করে অ্যাম্বুলেন্স দিয়েছে অথচ চালক না থাকায় আমরা তার সুফল পাচ্ছিনা। তারা সকলে কমপ্লেক্সে দ্রুত অ্যাম্বুলেন্স চালক দেয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সুমন কান্তি সাহা জানান, আমি এই হাসপাতালে আসার চার মাস হয়েছে। মামলা জনিত কারণে আমাদের অ্যাম্বুলেন্সের চালক নেই। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ চলছে।
সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ মন্জুর এ-মুর্শেদ জানান, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। এখানে রেপুটেশনে একজন চালক দেয়া যায় কিনা, সে বিষয়ে আমরা জোর চেষ্টা চালাচ্ছি।