কুষ্টিয়া প্রতিনিধিঃ
বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখেছিলেন সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। কিন্তু তিনি তা বাস্তবায়ন করে যেতে না পারলেও বঙ্গবন্ধুর শুরুটা ছিল স্বপ্নের বীজ বপণ। শেখ হাসিনার শুরুটা সেই স্বপ্নের অগ্রযাত্রা ও এক সাফল্যের রুপকল্প।
মঙ্গলবার কুষ্টিয়াতে স্বল্পোন্নত দেশ হতে উন্নয়শীল দেশে উত্তরণ : বঙ্গবন্ধু থেকে শেখ হাসিনা শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথা বলেছেন।
দেশব্যাপী জাতিয় পর্যায়ে বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ হতে উন্নয়শীল দেশে উত্তরণ উদযাপনের অংশ হিসেবে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম।
সভায় কি-নোট উপস্থাপন করে বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক ড. আমানুর আমান।
কি-নোটে ড. আমানুর আমান তুলে ধরেন দেশ স্বাধীন করে বঙ্গবন্ধু শুরু করেছিলেন সামাজিক সমতা ও ন্যায়বিচার চিন্তাকে অগ্রভাগে ধারণ করে। একটি বিপন্ন অবস্থায় দাঁড়িয়ে সামাজিক সমতা ও ন্যায়বিচার চিন্তাকে অর্থনীতি পুনর্গঠনের লক্ষ্যে নির্ধারণ করার পরিকল্পনা এবং তা বাস্তবায়ন খুবই চ্যালেঞ্জ ছিল। কারন এসব ক্ষেত্রে সমাজের ধনিক শ্রেণী লক্ষ্যে-অলক্ষ্যে নানা ধরনের অস্পষ্ট প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। বঙ্গবন্ধুর আমলেও সেটি হয়েছিল। এটি বঙ্গন্ধু জানতেন। তাই তিনি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কৌশল পরিবর্তন করেছিলেন। তিনি উন্নয়ন চর্চা ও চিন্তা-চেতনায় ব্যক্তিত্বের সমাবেশ ঘটিয়েছিলেন। টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের মডেল তৈরি করেছিলেন এবং সেটা প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (১৯৭৩-১৯৭৮) প্রতিফলিতও হয়েছিল।
বঙ্গবন্ধুর সময়টার পরিসর এত স্বল্প ছিল যে সমৃদ্ধির সোপানের কোন চিহ্নই স্পষ্ট হতে পারেনি। অধিকন্তু, পট পরিবর্তনের মাধ্যমে দেশকে দ্রুত ঘুরিয়ে নেয়া হয়। পুঁজি-ভিত্তিক অর্থনীতির পরিবর্তে বাজার-ভিত্তিক পুঁজি সৃষ্টি করে অর্থনীতিকে অংশগ্রহনমুলক প্রক্রিয়া থেকে বের করে দেয়া হয়।
তিনি বলেন শেখ হাসিনার শুরুটা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের অগ্রযাত্রা ও এক সাফল্যের রুপকল্প। যেখানে চিত্রের পুরোটা জুড়েই তৈরি হয়েছে প্রগতি-উন্নয়ন শান্তি ও সমৃদ্ধির সুনির্মল মোহনা। বাংলাদেশের ইতিহাসের নবপর্যায়ের নির্মাতা শেখ হাসিনার পুরো শাসনামাল উচ্চতম সফলতার। মনে করা হয় স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু পরবর্তী সময়ে ইতিহাসের সবচেয়ে সফলতার সময় এটি। হাসিনার মেধা-মনন, সততা, নিষ্ঠা, প্রজ্ঞা, দক্ষতা, সৃজনশীলতা, উদারমুক্ত গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পর শেখ হাসিনাই একমাত্র নেতা যিনি বাঙালির সকল স্বপ্ন জয়ের সারথী ;বাঙালির আশা-আকাঙ্ক্ষার একান্ত বিশ্বস্ত ঠিকানায় পরিণত হয়েছেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও কুষ্টিয়া চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি হাজি রবিউল ইসলাম, কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফরহাদ হোসেন, উপ-পরিচালক (উপ-সচিব) স্থানীয় সরকার, কুষ্টিয়া মৃণাল কান্তি দে, কুষ্টিয়া জজ কোর্টের পিপি এ্যাডভোকেট আসম আক্তারুজ্জামান মাসুম, কুষ্টিয়া সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজি রফিকুল ইসলাম টুকু।
হাজি রবিউল ইসলাম তার বক্তব্যে বলেন জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের চিত্র অনেক বড়। স্বল্প পরিসরে উল্লেখ করা কঠিন। তিনি সাম্প্রতিক বৈশ্বিক মহামারি করোনার বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, করোনার সময়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার গৃহীত পদক্ষেপ জাতিসংঘ, বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সাময়িকী ফোর্বসসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত হয়েছে। একইসঙ্গে দরিদ্র মানুষকে ত্রাণ সহযোগিতার পাশাপাশি জীবিকা ও অর্থনীতি বাঁচাতে নিয়েছেন কার্যকরী পদক্ষেপ। দেশের অর্থনৈতিক গতিশীলতা ধরে রাখতে কৃষি ও শিল্পসহ অর্থনৈতিক খাতগুলোতে সময়োপযোগী ২৮টি প্রণোদনা প্যাকেজের মাধ্যমে প্রায় এক হাজার ৪৬০ কোটি মার্কিন ডলার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা জিডিপির ৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ এবং তা বিশ্ব অর্থনীতিতে একটি রোল মডেল হিসেবে পরিগণিত হয়।
সমাপনী বক্তৃতায় জেলা প্রশাসক বলেন ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারই দিনবদলের সনদ গ্রহণ করেছিল। আনা হয়েছিল ‘রূপকল্প ২০২১’। দুটোতেই সফল হয়েছে বাংলাদেশ। আমাদের সামনে এখন ‘রূপকল্প ২০৪১’ ; যার উদ্দীপনাময় সূচনা’ হিসেবে ধারণ করা হয়েছে জাতির পিতার আজন্ম লালিত স্বপ্ন ‘দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত, দুর্নীতি ও শোষণহীন সমৃদ্ধ এক বাংলাদেশ গড়ে তোলা’কে আর অর্ন্তনিহিত লক্ষ্য হলো ২০৩১ সালের মধ্যেই চরম দারিদ্র্যের অবসান ও উচ্চ-মধ্য আয়ের সোপানে উত্তরণ ; ২০৩১-২০৪১ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের অবলুপ্তিসহ উচ্চ-আয়ের উন্নত দেশের মর্যাদায় আসীন হওয়া।
তিনি বলেন এটিও বাস্তবায়িত হবে। দবে এর জন্য আমাদের কাজ করে যেতে হবে। তিনি বলেন আমরা সেজন্য প্রস্তুত।
এর আগে তিনি পায়রা উড়িয়ে দিনের শুভ সূচনা করেন।