যশোরের বহুল আলোচিত রওশন আরা বেগম রোশনী (৫৩) হত্যা রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। স্বর্ণালংকার ও অর্থের লোভে বন্ধু বুরহানকে নিয়ে রোশনীকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে তার আপন বোন চাঁদনীর ছেলে হৃদয়। ইতোমধ্যে তাদের গ্রেফতার করেছে পিবিআই। আদালতে স্বীকারক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে তারা।
বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় পিবিআই যশোরের পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন এসব তথ্য জানান।
গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা হলেন- যশোর উপশহর ডি ব্লক এলাকার মৃত মাহমুদ আলম চৌধুরীর ছেলে রিয়াজুল আলম চৌধুরী (১৯) ও উপশহর এলাকার জনৈক বাবুর বাড়ির ভাড়াটিয়া আবদুল হাকিমের ছেলে মো. বুরহান (২০)।
পুলিশ সুপার রেশমা জানান, নিহত রোশনীর বোনের ছেলে হৃদয়। মাঝে মধ্যে খালা রোশনীর বাড়িতে যাওয়া আসা করতো। তার খালা বাড়িতে একা থাকতেন। খালার স্বর্ণালংকার ও টাকা পয়সা কোথায় রাখেন সেটা হৃদয় জানতেন। ঘটনার কয়েক দিন পূর্বে হৃদয় তার বন্ধু বুরহানকে সঙ্গে নিয়ে রোশনীকে হত্যা করে স্বর্ণালংকার ও টাকা পয়সা লুণ্ঠনের পরিকল্পনা করেন।
পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী গত ২৯ আগস্ট সকালে হৃদয় তার বন্ধু বুরহানকে সঙ্গে নিয়ে রোশনীর বাড়িতে যায়। সেখানে খালার সঙ্গে বিভিন্ন কথাবার্তা বলে তারা। এক পর্যায়ে তারা অতর্কিত ধারালো ছুরি দিয়ে রোশনীর পেটে, বুকে ও গলায় আঘাত করে হত্যা নিশ্চিত করে। এরপর মরদেহ ঘরে থাকা বক্স খাটের কাঠের চালার নিচে লুকিয়ে রাখে। এরপর রোশনীর ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোন ও আলমারিতে থাকা স্বর্ণের ও ইমিটেশনের গয়না বের করে নিয়ে পালিয়ে যান।
এ ঘটনার পর কেউ যাতে তাদের সন্দেহ না করে সেজন্য রোশনীর আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে মিলেমিশে চলাফেরা করেন তারা। এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের তৎপরতা বৃদ্ধি পেলে তারা গ্রেফতার এড়াতে যশোর থেকে তাদের নিজ নিজ আত্মীয়ের বাড়িতে পালিয়ে যায়।
পরবর্তীতে তাদের গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ও তাদের দেখানো মতে লুণ্ঠিত মালামাল, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাকু ও হত্যার সময় তাদের পরনে থাকা ফেলে দেওয়া কাপড় উদ্ধার করা হয়েছে। বুধবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বুরহান ও হৃদয়।মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ২৯ আগস্ট বিকেলে যশোর শহরের আশ্রম মোড়ের (রেলরোড) বাড়ির বক্স খাটের ভেতর থেকে মোস্তাফিজুর রহমানের স্ত্রী রওশন আরা বেগম রোশনীর (৫৩) মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তার ছেলে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের জন্য আমেরিকায় অবস্থান করছে এবং মেয়ে ঢাকার স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে পড়েন। তিনি বাসায় একাই থাকতেন।হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ৩১ আগস্ট অজ্ঞাতনামা আসামিদের নামে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন নিহতের মা সেবিনা বেগম। ১৩ সেপ্টেম্বর বাগেরহাটের রামপাল থানার ঝনঝনিয়া গ্রামের মামা হরমুজ আলীর বাড়ি থেকে আসামি মো. বুরহান ও ঢাকার ভাষানটেক এলাকার খালু ইঞ্জিনিয়ার মোক্তার হোসেনের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে পিবিআই। এর আগে মামলার আলামত স্বর্ণালংকার কেনাবেচার অভিযোগে আরও দুজনকে গ্রেফতার করা হয়।