বাংলাদেশে নানা জাতের আম পাওয়া যায়। এই আম রস, স্বাদ ও গন্ধে অতুলনীয়। আগে এ আমের স্বাদ শুধু দেশের মানুষ পেলেও গত কয়েক বছর ধরে স্বল্প পরিসরে আম রপ্তানি শুরু হয়েছে। তবে তা সাধারণত বিক্রি হয় বাংলাদেশি মালিকানাধীন সুপার শপে এবং কেনেনও প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
তবে এ বছর ২৮টি দেশে যাচ্ছে বাংলাদেশের আম। আর গত বছরের চেয়ে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা দ্বিগুণ করা হয়েছে। এমনকি ইউরোপের মূলধারার চেইন শপেও পাঠানো হয়েছে বাংলাদেশের আম।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আমের উৎপাদন ছিল ২১ লাখ ৪৩ টন, ওই বছর রপ্তানি হয়েছিল ৩০৯ টন। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে উৎপাদন ২৩ লাখ ৭২ টন, রপ্তানি হয়েছিল ২৩২ টন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছিল ২২ লাখ ২৮ টন, রপ্তানি হয়েছিল ৩১০ টন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছিল ২৪ লাখ ৬৮ টন, রপ্তানি হয়েছিল ২৮৩ টন।
২০২০-২১ অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছিল ২৫ লাখ টন, রপ্তানি হয়েছিল ১ হাজার ৬৩২ টন। ২০২১-২২ অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছিল ২৩ লাখ ৫০ টন, রপ্তানি হয়েছিল ১ হাজার ৭৫৭ টন। চলতি অর্থবছর গত বছরের দ্বিগুণেরও বেশি ৪ হাজার টন আম রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
জানা যায়, বিশ্বের ২৮টি দেশে বাংলাদেশের আম রপ্তানি করা হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে অস্ট্রিয়া, বাহরাইন, বেলজিয়াম, কানাডা, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, গ্রিস, হংকং, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, জর্ডান, কুয়েত, লেবানন, মালদ্বীপ, নেদারল্যান্ডস, ওমান, পর্তুগাল, কাতার, রাশিয়া, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, সুইজারল্যান্ড, সুইডেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র অন্যতম।
তবে সবচেয়ে বেশি আম রপ্তানি হয় যুক্তরাজ্যে। এর পরের অবস্থানে রয়েছে সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। বর্তমানে সাতটি জাতের আম রপ্তানি করা হচ্ছে। সেগুলো হলো গোপালভোগ, হিমসাগর, ল্যাংড়া, হাঁড়িভাঙা, ফজলি, আম্রপালি ও সুরমা।
রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষি মন্ত্রণালয় ‘রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্প’ গ্রহণ করেছে। ২০২২ থেকে ২০২৭ সাল মেয়াদের প্রকল্পটি ১৫ জেলার ৪৬টি উপজেলায় বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের আওতায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে আম উৎপাদন প্রদর্শনী, রপ্তানিযোগ্য জাতের আম বাগান সৃজন, বিদ্যমান আমবাগানে সার ও বালাই ব্যবস্থাপনা, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারসহ নানা কাজ করা হয়েছে।
এ প্রকল্পের আওতায় মানসম্মত আম উৎপাদন ও পোস্ট-হারভেস্ট ক্ষতি কমানোর লক্ষ্যে কৃষক গ্রুপে ম্যাঙ্গো প্লাকার, হাইড্রোলিক ম্যাঙ্গো হারভেস্টার, গার্ডেন টিলার, ফুট পাম্প, এলএলপি ও ফিতাপাইপ সেট সরবরাহ করা হবে। এ ছাড়া আম রপ্তানিকারকদের সহায়তার লক্ষ্যে প্রকল্পের মাধ্যমে পাঁচটি ম্যাঙ্গোগ্রেডিং, ক্লিনিং ও কুলিং শেড নির্মাণকাজ প্রক্রিয়াধীন।
রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ আরিফুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২৫ মে থেকে চলতি অর্থবছরের আম রপ্তানি শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রায় এক হাজার টন আম রপ্তানি করা হয়েছে। এ বছরই প্রথম সুইজারল্যান্ডের একটি চেইন শপে বাংলাদেশের আম পাঠানো হয়েছে। এর মাধ্যমেই মূলত বাংলাদেশের আম মূলধারার সুপার মার্কেটে ঢুকল। তাদের কাছ থেকে ভালো রিপোর্ট পেলে আমরা ইউরোপের বড় মার্কেট ধরতে পারব। আর এ রেফারেন্সে আরও নতুন দেশে আমাদের আম রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি হবে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বাংলাদেশে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ আম উৎপাদন হলেও এর সামান্যই রপ্তানি হয়। মৌসুমে অনেক আম পচেও যায়, চাষিরা ন্যায্যমূল্য পান না। অথচ আমাদের দেশের আমের টেস্ট অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে ভালো। কিন্তু আম রপ্তানিতে আমাদের প্রধান বাধা হলো ক্যারিং কস্ট।
উদাহরণ হিসেবে তারা বলেন, ভারতের এক কেজি আম পরিবহনে যদি উড়োজাহাজের ভাড়া লাগে ১০০ টাকা, সেখানে আমাদের পড়ে অন্তত ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা। ফলে আমরা বেশি দামের কারণে মার্কেট ধরতে পারছি না।
এ ছাড়া বাংলাদেশের উত্তম কৃষিচর্চা (গ্যাপ) সনদ প্রদানে প্রয়োজনীয় সক্ষমতা না থাকায় ইউরোপ ও আমেরিকার মূলধারার সুপার মার্কেটগুলোতে আম রপ্তানি করা সম্ভব হচ্ছে না। আমের গ্যাপ সার্টিফিকেট প্রদানের সক্ষমতা অর্জন করা গেলে বাংলাদেশ থেকে উন্নত দেশে রপ্তানি কয়েকগুণ বেড়ে যাবে।