হবিগঞ্জ প্রতিনিধি ঃঃ হবিগঞ্জ জেলা শাখার অধীনস্থ বাহুবল উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি ও আলিফ সোবহান চৌধুরী সরকারি কলেজের ছাত্রলীগের কমিটি পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত সামরিক ভাবে স্থগিত করা হয়েছে।
হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মোশারফ হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক ফয়জুর রহমান রবিন স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
তবে কমিটি স্থগিতের কোন কারন ঐ প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়নি।
গত ২১ ডিসেম্বর রোজ বুধবার রাতে কমিটি ঘোষণা দিয়ে ২২ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার দিনে কমিটি স্থগিত করা হয়েছে ।
কমিটি ঘোষণার ১২ ঘন্টার মধ্যেই স্থগিত হওয়ায় উপজেলা জুড়ে আলোচনা ও সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে।
সংগঠনটির নেতাকর্মীরা জানান, ২০১৭ সালের বাহুবল ছাত্রলীগের কমিটি গঠিত হয়। এক বছর মেয়াদী এই কমিটি দীর্ঘ প্রায় ছয় বছর নেতৃত্বে ছিল। এর মধ্যে অধিকাংশ নেতা ছাত্রত্ব শেষ করে কর্মজীবনে প্রবেশ, বিয়েসহ নানা কারণে ছাত্রলীগ ছাড়েন।
নতুন কমিটি গঠন করতে গত ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত কলেজ পর্যায়ে ২০ জন উপজেলা ছাত্রলীগে ৫৬ জন প্রার্থী তাদের জীবনবৃত্তান্ত (সিভি) জমা দেন। এর মধ্যে সভাপতি পদে এবং সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী রয়েছেন। তাদের মধ্যে ডজন খানেক নেতা ছিলেন আলোচনার তুঙ্গে।
এদিকে, বাহুবল উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি অনুমোদনের ১২ ঘন্টার মাথায় স্থগিতের খবরটি প্রকাশ হওয়ার পর ফেসবুকে তা ভাইরাল হয়েছে ।
স্থগিত কমিটির সভাপতি ডাক্তার আব্দুর রব শোভন ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইমান আলী ও সাংগঠনিক সম্পাদক অপু আহমেদ মুন্নাকে দেওয়া হয়েছে ।
ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা তাদের নামে-বেনামে পরিচালিত ফেসবুক আইডি থেকে নানা রকম আলোচনা-সমালোচনায় মেতে উঠেছেন। বাহুবল উপজেলা রাজনৈতিক মহলেও আলোচনার শীর্ষে রয়েছে বিষয়টি।
ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির বিরোধী এবং পদবঞ্চিত কয়েকজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ছাত্রলীগের গটনতন্ত্র অনুযায়ি বিবাহিতরা কোনো পদে আসতে পারবেন না। কিন্ত, স্থগিত কমিটির অনেকেই বিবাহিত, অছাত্র, বিদেশ প্রবাসী সহ জামায়াত , শিবির, বিএনপির লোক রয়েছে। জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তারা দুজন ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে টাকার বিনিময়ে নানা অপরাধে জড়িতদের স্থগিত কমিটির মধ্যে রেখেছেন। তাদের এমন কর্মকান্ডে ঐতিহ্যবাহী সংগঠন ছাত্রলীগের সুনাম ক্ষুন্ন হয়েছে। গভীর রাতে কমিটি গঠন করে ফেইসবুকে পোস্ট করা এবং দিনের বেলা কমিটি স্থগিত করায় ছাত্রলীগের ঐতিহ্যবাহী সংগঠন আস্রকর করেছেন। বাহুবল উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি স্থায়ীভাবে বিলুপ্ত ঘোষনা করে একটি পরিচ্ছন্ন কমিটি করার দাবি জানান তারা।
উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি পদপ্রার্থী তারেক আহমেদ তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেন, ধন্যবাদ আপনাদেরকে বিশেষ করে বাহুবল উপজেলা শাখা ছাত্রলীগের কমিটি টি স্থগিত ঘোষণা করার জন্য। কারণ যে দুইজন কে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদ দিয়ে ছাত্রলীগের কমিটি প্রকাশ হইছে দেখছিলাম তাদের দুইজনের মধ্যে কারোই ছাত্রলীগের সাবেক কোন পদবি তে নাই। ছাত্রলীগের বিভিন্ন প্রোগ্রাম সহ আওয়ামী পরিবারের মিছিল মিটিংয়েও তাদের কে বাহুবল উপজেলা ছাত্রলীগের গত ২৬ নভেম্বরের সম্মেলনের আগে দেখা যায় নাই। ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে তারা কোনভাবেই জড়িত ছিল বলে আমার মনে হয় না। কিছু ভাইদের সাথে ছবি ছাড়া কোন প্রোগ্রামের ছবি তারা দেখাতে পারবে বলে আমার মনে হয় না। ঘরে বসে আর মাঠের রাজনীতি না করে যদি কেউ এভাবেই হুট করে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের পদ পায় তবে বাহুবল উপজেলায় কেউ অন্তত ছাত্রলীগ করবে না। ছাত্রলীগ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে যাবে।তাই জেলা ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দের কাছে বিনীত অনুরোধ করছি আপনারা মাঠের কর্মী, যারা ছাত্রলীগের পিছনে মেধা ও শ্রম দিয়েছে, বিভিন্ন নির্বাচনে নৌকার পক্ষে কাজ করেছে, ছাত্রলীগে পূর্বের পদ আছে এমন দক্ষ সংগঠক ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী কর্মীকে নির্বাচন করে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মত গুরুত্বপূর্ণ পদ গুলো দিবেন। তবেই বাহুবল উপজেলা ছাত্রলীগ সঠিক নেতৃত্ব পাবে।ছাত্রলীগের গতিশীলতা বাড়বে।
এ বিষয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি দুলাল মিয়া বলেন, স্থগিত কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক অপু আহমেদ মুন্না তারা কেউ ছাত্রলীগের সাথে কখনো সংযুক্ত ছিলনা। এছাড়া তাছাড়া আওয়ামী লীগের কখনো মিশিল ও সভায় তাদের দেখা যায় নি। আমি ছাত্রলীগের সভাপতি থাকা অবস্থায় তাদেরকে ছাত্রলীগের বিভিন্ন প্রোগ্রামে কখনো দেখা যায়নি। স্থগিত কমিটির সভাপতি যাকে দেওয়া হয়েছে তার বাবা তিন বারের মাদক ও হেবা ব্যবসীসহ বিভিন্ন মামলায় কারাগারে বসবাস করছে। স্থগিত কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গত ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে নৌকার বিপক্ষে সক্রিয় ভাবে কাজ করেছে। তাছাড়া কমিটির অনেকের ছাত্রত্ব নেই। অনেকেই ছাত্রলীগের বয়স পারিয়ে গেছে। এমন কমিটি গঠন করায় স্থানীয় সক্রিয় ছাত্রলীগের কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা দেওয়ার আগে আমার সাথে পরামর্শ করার কথা ছিল। কিন্তু জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কেউ আমাদের সাথে পরামর্শ করে কমিটি ঘোষণা দেইনি। উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সহ কমিটির বিভিন্ন পদে আসা অনেকেই বিতর্ককৃত রয়েছে। স্থগিত কমিটির অনেকেই বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার মার্কার প্রার্থীর বিপক্ষে সক্রিয় ভাবে কাজ করছে। স্থগিত কমিটির উপর স্থানীয় আওয়ামী লীগের অনেক নেতৃবৃন্দ দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন লিয়াকত বলেন, উপজেলা ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির মধ্যে বিবাহিত, অছাত্র, জামাত শিবির, রাজাকারের পরিবারের সদস্য, বিএনপি কর্মী রয়েছে। স্থগিত কমিটির মধ্যে অনেকেই আওয়ামী লীগের প্রত্যায়ণ পত্র ছাড়াই উপজেলা আওয়ামী লীগকে মূল্যায়ন না করেই গুরুত্বপূর্ণ পদে এসেছেন। কমিটির মূল পদ গুলো নৌকার বিরুদ্ধীরা এসেছে। এছাড়াও তাদের জন্ম নিবন্ধন ও পরিচয়পত্র, স্কুল সার্টিফিকেট অনলাইনে যাচাই বাছাই না করেই অছাত্রদের দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মোশারফ হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক ফয়জুর রহমান রবিনের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দেওয়ার পরও রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।