বিভিন্ন বৈশ্বিক উদ্যোগে বাংলাদেশকে পাশে চায় চীন। এ বিষয়ে আলোচনার জন্য ওই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই আগস্টের প্রথম সপ্তাহে ঢাকা সফর করবেন। দ্বিপক্ষীয় বিষয়াদির পাশাপাশি রোহিঙ্গা, চলমান বৈশ্বিক সংকটসহ আরও বিষয় নিয়ে আলোচনার সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া উদীয়মান শক্তি চীনের নতুন দুটি উদ্যোগ গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ ও গ্লোবাল সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভ নিয়েও আলোচনায় আগ্রহী দেশটি।
উল্লেখ্য, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আগামী ৫-৬ আগস্ট ঢাকায় আসার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু ওই সময়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন ঢাকায় থাকবেন না জানানো হলে সফর একদিন পিছিয়ে দেওয়া হয়।
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরের বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক বলেন, ‘পাঁচ বছর পরে তিনি ঢাকা আসছেন এবং এটি দুই দেশের মধ্যে আলোচনা বৃদ্ধির বহিঃপ্রকাশ।’
চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সফরের সময়ে দুই দেশের সম্পর্ককে স্ট্র্যাটেজিক লেভেলে নিয়ে যাওয়া হয়।’
শহীদুল হক বলেন, ‘এ দেশের অনেক অর্থনৈতিক প্রকল্পে চীনের সহায়তা রয়েছে এবং দুই দেশের বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক অনেক গভীরে। সেগুলো নিয়ে আলোচনা হওয়া খুবই স্বাভাবিক।’
এ বিষয়ে চীনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুনশি ফায়েজ আহমেদ বলেন, ‘এ ধরনের সফরে রাজনৈতিক সম্পর্কের দৃঢ়তা আরও গভীর হয়। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে চীনের গুরুত্ব আছে।’
তিনি বলেন, ‘কোভিডের কারণে অনেক দিন দুই পক্ষের মধ্যে সশরীরে উপস্থিত হয়ে কোনও সফর হয়নি। এটি আবারও শুরু হয়েছে, যা ভালো লক্ষণ।
চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের বৈরী সম্পর্কের বিষয়টি এখন প্রকাশ্য। ছোট দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সবসময় সব দেশের সঙ্গে একটি ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান বজায় রেখেছে।
এ বিষয়ে শহীদুল হক বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ক্রমহ্রাসমান সুপার-পাওয়ার এবং চীন উদীয়মান শক্তি হয়েছে। ফলে দুই পক্ষের মধ্যে প্রভাব বলয় বিস্তারের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রকট হচ্ছে এবং সামনের দিনগুলোতে এটি আরও বেশি বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা আছে।’
এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের মতো ছোট দেশগুলোর ভারসাম্যমূলক অবস্থান বজায় রাখা ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে বিভিন্ন উদ্যোগ এবং চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভসহ অন্যান্য বৈশ্বিক উদ্যোগ বিশ্বে প্রভাব বলয় বিস্তারের পরিচায়ক বলে মনে হয়।’
শহীদুল হক আরও বলেন, ‘প্রতিটি দেশ তাদের প্রভাব বলয় বাড়াতে চায় এবং চীনও এর ব্যতিক্রম নয়। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সবসময় বিভিন্ন শক্তির মধ্যে ভারসাম্যমূলক অবস্থান বজায় রেখেছে এবং ভবিষ্যতেও রাখার প্রচেষ্টা চালিয়ে বলে আমি আশা করি।’
এ বিষয়ে মুনশি ফায়েজ বলেন, ‘যদি সুযোগ থাকে সব দেশই প্রভাব বাড়াতে চাইবে। তবে এক্ষেত্রে দুই দেশের স্বার্থের মধ্যে মিল থাকতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘এমনি এমনি প্রভাব বাড়ানো যাবে না। এজন্য একে অপরের সহযোগিতার অংশীদার হতে হবে। বর্তমান বৈশ্বিক সংকটের সময়ে চীনের মতো বড় রাষ্ট্র বাংলাদেশকে বিভিন্ন সহায়তা দিতে পারে। যেমন- কোভিডের সময়ে যখন কোনও দেশ থেকে আমরা টিকা পাচ্ছিলাম না, তখন ওই দেশ আমাদের টিকা সরবরাহ করেছিল।’
রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং ওই দেশের ওপর চীনের বড় ধরনের প্রভাব রয়েছে। এজন্য রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে চীন বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
এ বিষয়ে শহীদুল হক বলেন, ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও চীন ত্রিপক্ষীয় মেকানিজমে কাজ করছে। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরের সময়ে এটি নিয়ে আলোচনার সুযোগ রয়েছে। এর ফলে প্রত্যাবাসনে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।’
এ বিষয়ে মুনশি ফায়েজ বলেন, ‘বাংলাদেশের অগ্রাধিকার হচ্ছে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন এবং আমি আশা করবো চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরের সময়ে এ বিষয়টি বড় আকারে আলোচিত হবে।’
তিনি বলেন, ‘এক্ষেত্রে চীন উদ্যোগ নিতে পারে এবং এর ফলে নতুন সুযোগ তৈরি হবে। জাপান, যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশ রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর জন্য সরব এবং ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসও মিয়ানমারের আপত্তি খারিজ করে দিয়েছে। এ অবস্থায় চীন উদ্যোগী হলে প্রত্যাবাসন বিষয়টি নতুন উদ্যম পাবে।’পূর্বপশ্চিমবিডি