আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। নির্বাচনকে ঘিরে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা জমে উঠেছে। এরই সঙ্গে শুরু হয়েছে নির্বাচন থেকে প্রার্থীদের সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা। বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে নির্বাচন থেকে সরে আসার ঘোষণা দিচ্ছেন তারা। তবে বিশ্লেষকরা বলেছেন, নির্বাচনে জনপ্রিয়তা কম ও পরাজয়ের ভয়েই এসব প্রার্থীরা নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।
মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) সারাদেশে আট প্রার্থীর পদত্যাগের খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে জাতীয় পার্টির লাঙল প্রতীকের প্রার্থী ৪ জন, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পাওয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী দুই জন এবং বিএনএমর প্রার্থী দুই জন।
গাজীপুর-৪ (কাপাসিয়া) আসনের জাপার প্রার্থী মো. সামসুদ্দিন খান
এদিন দুপুরে কাপাসিয়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন মো. সামসুদ্দিন খান।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা ঘোলাটে। বিভিন্ন চাপ আছে আমার ওপর। সেই চাপ সামলানোর মতো শারীরিক বা মানসিক শক্তি আমার নেই। হুমকিও আছে। সব মিলিয়ে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ৭ তারিখে আমি যে লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী ছিলাম, সেই নির্বাচনে যেহেতু প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সুযোগ নেই, তাই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালাম।
সুনামগঞ্জ-১ (জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, মধ্যনগর ও ধর্মপাশা) আসনের জাপার প্রার্থী মন্নান তালুকদার
মঙ্গলবার সকালে জামালগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন আব্দুল মন্নান তালুকদার। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ১৯৮৬ সাল থেকে জাতীয় পার্টির সঙ্গে একনিষ্ঠভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছি। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুনামগঞ্জ-১ আসনে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পত্র দাখিল করি। মহাজোট সমর্থনে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেছিলাম। এবারো দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দলের পক্ষ থেকে মনোনীত হয়ে মনোনয়ন দাখিল করি ও নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাই। তৃণমূল ভোটারের কাছ থেকে বেশ সাড়া পেয়েছি।
তিনি আরও বলেন, প্রচার প্রচারণায় আমি দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করলেও তাদের কাছ থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতা পাচ্ছি না। এ অবস্থায় আমি স্পষ্ট বুঝতে পেরেছি আসন ভাগাভাগি ও প্রহসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তাই আমি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালাম।
দিনাজপুর-২ (বিরল-বোচাগঞ্জ) জাপা প্রার্থী মাহবুব আলম
এদিন বিরল উপজেলা শাখা জাপার দলীয় কার্যালয়ে সব ধরনের কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি ঘোষণা দিয়েছেন মাহবুব আলম।
তিনি জানান, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোট নিরপেক্ষ নিয়ে তার সংশয় রয়েছে। তাই তিনি নির্বাচনী সব ধরনের প্রচারণা থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
হবিগঞ্জ-২ আসন থেকে সরে দাঁড়ালেন জাপা প্রার্থী শংকর পাল
মঙ্গলবার সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে এক ভিডিও বার্তা দিয়ে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়নোর ঘোষণা দিয়েছেন হবিগঞ্জ-২ আসনের জাপা প্রার্থী শংকর পাল।
তিনি বলেন, আমি নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়ানোর অনেকগুলো কারণ রয়ে গেছে। আমাদেরকে দলীয়ভাবে অনেক জায়গায় যে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে সে অনুযায়ী কোনো কাজ হয়নি। যেমন আমি নির্বাচনে প্রস্তুত ছিলাম না। আমার জায়গায় অন্য একজনকে সমর্থন দিয়েছে, কিন্তু দেখা যায় নির্বাচনের মনোনয়ন দাখিলে আগের দিন আমার হাতে দলীয় মনোনয়ন আসে। কিন্তু আমি সরকারকে সহযোগিতা করার জন্য মনোনয়ন দাখিল করেছিলাম। আমি ঢাকায় গিয়ে জানতে পারি মাত্র ২৬টি আসন নিয়ে সরকারের সাথে সমঝোতা হয়ছে, কিন্তু আমরা কিছুই জানি না।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমাদের দলীয়ভাবে স্পষ্ট উল্লেখ আছে প্রার্থী ও দলের প্রধানের ছবি ব্যবহার করা। কিন্তু অনেকেই জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী পোস্টারে আওয়ামী লীগ সমর্থিত লিখিছেন। এ ছাড়া অনেকে দলের প্রধানের ছবি ছাড়াও অন্যদলের প্রধানের ছবি ব্যবহার করেছেন। এটি নির্বাচন পরিপন্থী। আমাদের এলাকায় লাঙ্গনের পক্ষে অনেক আওয়ামী লীগ মাঠে কাজ করছে, যেটা আমাদের লাঙ্গনের অনেক ক্ষতি হচ্ছে।
ঝিনাইদহ-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী নবী নেওয়াজ
নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন ঝিনাইদহ-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী নবী নেওয়াজ। মঙ্গলবার দুপুরে ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলা শহরের নিজস্ব কার্যলয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন ‘ঈগল’ প্রতীকের এ প্রার্থী।
নবী নেওয়াজ বলেন, আওয়ামী লীগের প্রতি আনুগত্য ও শ্রদ্ধা রয়েছে বলেই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। একই সঙ্গে আগামী ৭ জানুয়ারি নৌকা প্রতীকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি আমার নেতাকর্মীদের।
যশোর-৪ (বাঘারপাড়া-অভয়নগর ও বসুন্দিয়া) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী রনজিত কুমার রায়
নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এনামুল হক বাবুলকে সমর্থন জানিয়ে সরে দাঁড়িয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী রনজিত কুমার রায়। এদিন বেলা ১টার দিকে এ কথা নিজেই জানান তিনবারের সংসদ সদস্য রনজিত কুমার রায়।
তিনি বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আমার প্রতীক ছিল ঈগল। আমি বরাবরই বলে এসেছি নৌকার বিপক্ষে কখনও নির্বাচন করবো না। সে কারণেই প্রতীক বরাদ্ধের পরও আমি কোনো প্রকার প্রচারণা চালাইনি।
সুনামগঞ্জ-৪ আসনের বিএনএমের প্রার্থী দেওয়ান শামছুল আবেদীন
সুনামগঞ্জ-৪ আসনে বিএনএমের প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য দেওয়ান শামছুল আবেদীন নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়িয়েছেন। মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় তার নিজ বাসবভনে ডাকা সংবাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন তিনি।
তিনি বলেন, আমি নির্বাচনে দাঁড়ানোর পর থেকেই আমার বিরুদ্ধে নানা রকমের ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে, আমার মনোনয়ন বাতিল করা হয় আর এটি একবার করা হয়নি নির্বাচন কমিশন, সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্ট সব জায়গা থেকে আমাকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। সেই জায়গায় আমি প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে গিয়ে প্রার্থিতা বৈধতা করে নির্বাচনে ফিরে এসেছি, কিন্তু আমার প্রথমে মনে হয়েছিল নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। কিন্তু বর্তমানে যা দেখছি সেখানে বলতে হচ্ছে দেশে নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডটাই নাই।
সিরাজগঞ্জ-৫ (চৌহালী-বেলকুচি) আসনের বিএনএম প্রার্থী আব্দুল হাকিম
নোঙ্গর প্রতীকের প্রার্থী আব্দুল হাকিম নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী মেজর মামুনকে সমর্থন দিয়ে তিনি ভোটের লড়াই থেকে সরে গেছেন।
তিনি বলেন, দলীয় সিদ্ধান্তে নির্বাচন থেকে সরে যাচ্ছি। স্বতন্ত্র প্রার্থী মেজর মামুন যোগ্য বলে তাকে সমর্থন করছি।
তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৭ জানুয়ারি ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। গত ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই প্রার্থীরা ভোটের প্রচার চালাচ্ছেন। আগামী ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ভোটের প্রচারণা চলবে।