মো. সাইফুল ইসলাম,(মধুপুর)টাংগাইল প্রতিনিধিঃ
টাঙ্গাইলের মধুপুরে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরসহ ১০টিতেই নারী সদস্যরা দায়িত্ব পালন করে আসছেন। উপজেলার নির্বাহী প্রধান (ইউএনও) শামীমা ইয়াসমীন, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার শামীমা আক্তার (মধুপুর সার্কেল) ও উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার ডা. স্বপ্না বিশ্বাস মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে নারীরা দক্ষতা ও সুনামের সঙ্গে পুরো উপজেলা চালাচ্ছেন।
ফুটবল বিশ্বকাপে একশ’ বছরের ইতিহাসে প্রথম কাতারে তিন নারী ফ্রান্সের স্টেফানি ফ্রাপার্ট, ব্রাজিলের নেউজা ইনেস ও মেক্সিকোর কারেন দিয়াজ রেফারির দায়িত্ব পালন করতে দেখে মধুপুরে নারীরা উপজেলা পরিচালনার বিষয়টি নতুন করে আলোচলায় এসেছে।
শামীমা ইয়াসমীন জেলার ১২ উপজেলার ছয় নারী ইউএনও অন্যতম। উপজেলার সব দপ্তরের কর্মকান্ড তদারকিতে আছেন। জেলার সঙ্গে সমন্বয় করে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত তাকে নিতে হয়।
৩৩তম বিসিএসের মেধাবী এ নারী কর্মকর্তা জানান, নারী হিসেবে কর্মক্ষেত্রে কোনো চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন না তিনি। তবে কাজ করতে গিয়ে চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েন বলে জানান। করোনার সময়ে সরকারি স্বাস্থ্যবিধি মানাতে পারা যায়নি মানুষকে। জনসচেতনতায় জনগণকে আনা খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। করোনা নিয়ে মানুষের অসচেতনতা, উদাসীনতা, নিষ্ক্রিয়তাকে বড় চ্যালেঞ্জ মনে হয়েছে। নিজের নিরাপদের কথা ভাববার আগে ভাবতে হয়েছে জনগণের ভাবনা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীমা ইয়াসমীন সাংবাদিকদের জানান, নিরপত্তার স্বার্থে জনগণকে ঘরে থাকতে বলেছেন ঠিকই; কিন্তু রাষ্ট্রীয় ও জনস্বার্থেই নিজেকে একাধিকবার বাইরে বের হতে হয়েছে। করোনায় আক্রান্তও হয়েছিলেন। সারা দিনের রুটিন ওয়ার্ক শেষে ৩৩৩ নম্বরে ফোন করে সাহায্য চাওয়া মানুষদের অথবা ইউএনওর সরকারি ফোন নম্বরে যারা সাহায্য চেয়েছেন, তাদেরকে সাহায্য করতে পেরে ভালো লেগেছে তার। ২৪ ঘণ্টার যে কোনো সময় বাল্যবিয়ের খবর শুনে তা বন্ধ করতে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছুটে যান।
মধুপুর ও ধনবাড়ী উপজেলায় সহকারী পুলিশ সুপার ৩৪তম বিসিএসের মেধাবী নারী পুলিশ কর্মকর্তা শাহীনা আক্তার। এখানে ওই পদে প্রথম পোস্টিং তার । পুলিশে চাকরি করতে এসে তার ভালোই লাগছে। তিনি মনে করেন, পুলিশে নারীদের কাজ করার অবারিত সুযোগ। নারী অফিসার হিসেবে তিনি সবার সহযোগিতা একটু বেশিই পাচ্ছেন। দায়িত্ব পালনে তার কখনও ক্লান্তি বা অনিরাপত্তা বোধ মনে হয় না।
তার মতে, আইনগত ব্যাপারে নারী-পুরুষকে আলাদা করে ভাবার সুযোগ নেই। ফলে কাউকে কম বেশি আইনি সহায়তা দেওয়ার চিন্তা করেন না। সর্বদাই চেষ্টা করেন নারী-পুরুষ, ধর্মভেদ ব্যতিরেকে সমান সেবা দেওয়ার। তবে নারী অফিসার হিসেবে দুর্ঘটনাকবলিত নারীর কাছাকাছি থেকে সহযোগিতার সুযোগ তিনি হাত ছাড়া করেন না। মধুপুরে যোগদান করে অল্পদিনেই এক নারী খুনের রহস্য উম্মোচন ঘটনা তাই তাকে আন্দোলিত করে। কঠিন ট্রেনিং উৎরিয়ে পুলিশ অফিসার পদে আসীন এ নারী কর্মকর্তা দেশের
উপজেলার কৃষি বিভাগেও নারী আধিপত্য। অতিরিক্ত (এক্সটেনশন) কৃষি কর্মকর্তা পদে কৃষিবিদ শাকুরা নাম্মী ও শাহরিয়া আক্তার রিভা উপজেলার কৃষকদের কাছে মডেল।
উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার ডা. স্বপ্না বিশ্বাস। সিটি ডেন্টাল কলেজ থেকে বিডিএস শেষে পিজিটি করে ২৯তম বিসিএসে অংশ নিয়ে নন-ক্যাডারে তিনি সাব রেজিস্ট্রারে নিয়োগ পেয়েছেন। প্রায় ৯ বছরের চাকরি জীবনে চতুর্থ স্টেশন মধুপুর। তিনি উপজেলার জমি ক্রয়-বিক্রয় কাজে সরকারের পক্ষে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। তার অর্জিত জ্ঞানের বাইরে সেবা দেওয়ার ক্ষেত্র নিয়ে অতৃপ্তির একটা জায়গা আছে। তবু ভূমি সেবায় মাঠপর্যায়ে তিনি জনসেবায় নিজেকে আন্তরিক ও দুর্নীতিমুক্ত রাখার চেষ্টায় থেকে অতৃপ্তিটা পূরণের পথে এগোচ্ছেন।
উপজেলা রিসোর্স সেন্টার-ইউআরসির ইনস্ট্রাক্টর জাকিয়া শামছি। প্রাথমিক স্তরের কর্মকর্তা ও উপজেলার ১১০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংশিষ্টদের প্রশাসন পরিচালনা তথা শিক্ষকদের বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা তার কাজ।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক পদে আছেন শাকিলা শারমিন। খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাও একজন নারী। এ দুই নারী কর্মকর্তা উপজেলার কৃষি উৎপাদন বিশেষ করে ধান ও চাল তথা খাদ্য সংরক্ষণে সরকারের পক্ষে কাজ করছেন।
উপজেলা প্রতিবন্ধী সেবাকেন্দ্রের প্রধান একজন নারী। এ ছাড়াও উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা হিসেবে নারীই দায়িত্ব পালন করছেন। অর্থাৎ উপজেলার ২৯ দপ্তরের ১০টিতেই নারীপ্রধান ছাড়াও অন্যান্য দপ্তরেও নারীদের আধিক্য।
মধুপুর শহীদ স্মৃতি স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ বজলুর রশীদ খান মনে করেন, গড়াঞ্চলের এ জনপদের গ্রামীণ এলাকার পিছিয়ে পড়া অনগ্রসর নারীদের কাছে মধুপুর উপজেলার বর্তমান প্রশাসন প্রেরণা হতে পারে। নারী অফিসারদের কাছে সেবা পেতে নারীরা মন খুলে নানা সমস্যার কথা বলতে পারেন।