দেশের প্রথম মেট্রোরেল উদ্বোধন হতে যাচ্ছে আগামীকাল বুধবার (২৮ ডিসেম্বর)। এদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেলা ১১টায় এর উদ্বোধন করবেন। মেট্রোরেলের সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ টাকা। এই ট্রেনে যাতায়াতে যাত্রীদের জন্য দুই ধরনের টিকেটের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে; একটি দীর্ঘ মেয়াদে ব্যবহারের এমআরটি পাস, অন্যটি দিয়ে চড়া যাবে একবার।
মেট্রোরেলের নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব থাকা ঢাকা ম্যাস র্যাপিড কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) জানিয়েছে, শুরুতে কেবল মেট্রোরেল স্টেশনের কাউন্টার থেকে নির্দিষ্ট জামানত দিলে মিলবে এমআরটি পাস। আর একবারের যাত্রার (সিঙ্গেল জার্নি) জন্য টিকেট মিলবে স্টেশনে থাকা কাউন্টার এবং পাশের স্বয়ংক্রিয় ‘টিকেট মেশিন’ থেকে। যাত্রা শেষে নির্ধারিত মেশিনে টিকেট কার্ডটি ফেরত দিলে তবেই স্টেশন থেকে বের হতে পারবেন যাত্রীরা।
এমআরটি পাস সংগ্রহের পর নিয়মিত যাতায়াতের জন্য কাউন্টারের পাশাপাশি ‘টিকেট মেশিন’, মোবাইল ও ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমেও টপ-আপ করা যাবে। প্রতিটি স্টেশনের দুই প্রান্তে দুটি কাউন্টার এবং চার থেকে ছয়টি স্বয়ংক্রিয় ‘টিকেট বিক্রয় মেশিন’ আছে।
সাধারণ যাত্রীদের কাউন্টারের পাশেই আছে অপেক্ষাকৃত কম উচ্চতার কাউন্টার, যেখান থেকে টিকেট সংগ্রহ করতে পারবেন হুইল চেয়ার ব্যবহারকারী ও খর্বকায় ব্যক্তিরা। |
ডিএমটিসিএল জানিয়েছে, এমআরটি পাস থেকে ‘দূরত্ব অনুযায়ী’ নির্ধারিত ভাড়া স্বয়ংক্রিয়ভাবে কেটে নেওয়া হবে। যাত্রী যে কোনো সময় এমআরটি পাস ফেরত দিয়ে জামানতের অর্থ ও অব্যবহৃত টাকা ফেরত নিতে পারবেন।
পাসটি হারিয়ে বা নষ্ট হয়ে গেলে ‘রেজিস্টার্ড কার্ডের বাহক’ নতুন এমআরটি পাস সংগ্রহ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে অব্যবহৃত অর্থ স্বয়ংক্রিয়ভাবে নতুন এমআরটি পাসে স্থানান্তরিত হবে। আর টিকেট অফিস মেশিন বা টিওএম অপারেটরকে অবহিত করে হারানো পাসটির অবৈধ ব্যবহার বন্ধ করা যাবে।
স্বয়ংক্রিয় মেশিন থেকে টিকেট কাটতে: আপনি যদি একবার ট্রেনে চেপে যেতে চান, সেক্ষেত্রে স্টেশনের দোতলায় থাকা মেশিনে কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করে নিজেই টিকেট কাটতে পারবেন।এ মেশিনের টাচ স্ক্রিন প্যানেল ব্যবহার করা যাবে স্মার্ট ফোনের মতই।
শুরুতে ভাষা নির্বাচন করে মেশিনের বাঁ পাশের উপর দিকে থাকা ‘একক যাত্রা টিকেট’ অপশনে ক্লিক করতে হবে। তখন আপনি যে স্টেশনে অবস্থান করছেন, সেটি সবুজ রঙে স্ক্রিনে দেখাবে। এরপর আপনাকে গন্তব্যের স্টেশনের নাম নির্বাচন করতে হবে। তখন স্ক্রিনের ডান পাশে ভেসে উঠবে ভাড়ার পরিমাণ।
এরপর আপনাকে স্ক্রিনের নিচের দিকের অপশন থেকে টিকেটের সংখ্যা নির্বাচন করতে হবে। একজন যাত্রী একবারে সর্বোচ্চ পাঁচটি টিকেট কিনতে পারবেন।
টিকেটের সংখ্যা নির্দিষ্ট হওয়ার পর ‘ওকে’ বোতাম চাপতে হবে। এরপর মেশিনের নির্দিষ্ট জায়গায় টাকা প্রবেশ করানোর নির্দেশনা আসবে স্ক্রিনে। নির্ধারিত জায়গায় টাকা প্রবেশ করালে কত টাকা দিলেন সেই তথ্য উঠতে থাকবে স্ক্রিনে।
নির্দিষ্ট পরিমাণ ভাড়ার টাকা যদি আপনি প্রবেশ করান, তাহলে স্ক্রিনের নিচের বাঁ দিকের নির্দিষ্ট জায়গা থেকে বেরিয়ে আসবে একক যাত্রার টিকেট। আর আপনি যদি কিছু টাকা ফেরত পান, সেটাও বেরিয়ে আসবে নির্দিষ্ট জায়গা দিয়ে।
টিকেট কাটার সময় স্ক্রিনে দেখানো হবে, আপনার নির্দিষ্ট পরিমাণ ভাড়ার জন্য আপনি কত টাকা পর্যন্ত ব্যাংক নোট মেশিনে প্রবেশ করাতে পারবেন। কম ভাড়ার জন্য একেবারে বড় নোট প্রবেশ করানো যাবে না।
হাতে ভাংতি না থাকায় বা বড় নোটের কারণে টিকেট কাটতে না পারলে ঘাবড়ে যাওয়ার কারণ নেই; চলে যান টিকেট কাউন্টারে। বাংলাদেশে চালু সব ব্যাংক নোটই গ্রহণ করবে টিকেট বিক্রয় মেশিন। তবে বেশি পুরনো ও ছেঁড়া নোট মেশিন নেবে না।
ভাড়া কত: মেট্রোরেলের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি কিলোমিটার ৫ টাকা, তবে সর্বনিম্ন ভাড়া গুনতে হবে ২০ টাকা। প্রাথমিকভাবে মেট্রোরেল চালু হচ্ছে উত্তরা নর্থ স্টেশন (দিয়াবাড়ি) থেকে আগারগাঁও স্টেশন পর্যন্ত। এই দূরেত্বের ভাড়া ঠিক হয়েছে ৬০ টাকা। মাঝে মেট্রোরেলের আরও সাতটি স্টেশন রয়েছে। পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ট্রেন চলবে উত্তরা থেকে মতিঝিল হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত। তখন ওই দূরত্বের ভাড়া হবে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা।