মেট্রোরেল চলাচলের বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে বিকল্প ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ফলে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নের কারণে মেট্রোরেল চলাচল বিঘ্ন হওয়ার আশঙ্কা নেই। বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে উত্তরা ডিপো এবং মতিঝিল এলাকায় দুটি রিসিভিং সাবস্টেশন থাকবে। মতিঝিল রিসিভিং সাবস্টেশনে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেডের (পিজিসিবি) মানিকনগর গ্রিড সাবস্টেশন থেকে ১৩২ কেভির দুটি পৃথক সার্কিটের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ থাকবে। আর উত্তরা রিসিভিং সাবস্টেশনে পিজিসিবির টঙ্গী গ্রিড সাবস্টেশন থেকে ১৩২ কেভিএর একটি সার্কিট ও ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (ডেসকো) উত্তরা গ্রিড সাবস্টেশন থেকে ১৩২ কেভির অপর একটি সার্কিটের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ থাকবে। উভয় রিসিভিং সাবস্টেশনে ব্যাকআপ হিসেবে একটি করে অতিরিক্ত ট্রান্সফর্মার থাকবে। তাছাড়া পুরাতন বিমানবন্দর এলাকায় অবস্থিত ডেসকোর উদ্বোধন করবেন। ৩৩ কেভি সাবস্টেশন থেকে শেওড়াপাড়া মেট্রো স্টেশনে ৩৩ কেভির বৈদ্যুতিক সংযোগ রাখা হবে। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) সংশ্লিষ্ট
সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া না গেলে মেট্রোরেলের নিজস্ব এনার্জি স্টোরেজ সিস্টেম (ইএসএস) থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে মেট্রোরেলকে নিকটবর্তী স্টেশনে নেয়া হবে। এনার্জি স্টোরেজ সিস্টেম মূলত ব্যাটারি ব্যাকআপ সিস্টেম, যা মেট্রোরেলের রিজেনারেটিভ ব্রেকিং এনার্জির মাধ্যমে নিয়মিত চার্জ হতে থাকবে। এমআরটি লাইন-৬ বা বাংলাদেশের প্রথম উড়াল মেট্রোরেল পরিচালনায় ওভারহেড ক্যাটেনারি সিস্টেমে (ওসিএস) ১৫০০ ভোল্ট ডিসি বিদ্যুৎ ব্যবহৃত হবে।
সূত্র জানায়, সরকার বিগত ২০১২ সালের ১৮ ডিসেম্বর মেট্রোরেল প্রকল্প অনুমোদন করে। তখন ২০১২ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদকাল ছিল। প্রধানমন্ত্রী বিগত ২০১৬ সালের ২৬ জুন মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন। ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকার ওই প্রকল্পে জাপানি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা- জাইকা ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকার আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে। আর সরকার ব্যয় করছে ৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। নির্মাণকাজের উদ্বোধনের প্রায় সাড়ে ৬ বছর পর প্রধানমন্ত্রী আগামী ২৮ ডিসেম্বর মেট্রোরেলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন ।
তথ্যসূত্রে আরো জানায়, অত্যাধুনিক মেট্রোরেলে চড়ে যাত্রীকে কোনো যানজটে পড়তে হবে না। দ্রুততম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো যাবে। ভাড়া নিয়েও কোনো বসচার সুযোগ নেই। ইতোমধ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশের মেট্রোরেলের সব কাজ শেষ হয়েছে। চলাচলের জন্য ১২টি ট্রেন প্রস্তুত করা হলেও শুরুতে ১০টিতে সরাসরি যাত্রী পরিবহন করা হবে। শুরুতে কয়েক মাস কম যাত্রী পরিবহন করা হবে। পরবর্তী ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যে শতভাগ যাত্রী পরিবহন করা যাবে। মেট্রোরেল প্রতিদিন সকাল ৮টায় চলাচল শুরু করলেও প্রাথমিকভাবে ৪ ঘণ্টা চলবে। তবে একটানা সকাল- বিকেলে চলবে তা এখনো ঠিক হয়নি। যাত্রীর চাহিদা মাথায় রেখেই তা ঠিক করা হবে। শুরুতে কম সময় চালানো এবং কম যাত্রীকে সুযোগ দেয়ার বিষয়ে পরামর্শক ও বিশেষজ্ঞরা একমত হয়েছে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এ এন ছিদ্দিক জানান, মেট্রোরেলের বিদ্যুতের বিষয়টা খুব গুরুত্বের সাথে দেখা হয়েছে । এটাই সর্বপ্রথম নিশ্চিত করা হয়েছে। টেন চলার জন্য ৩টি গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ নেয়া হয়েছে। তারপরও কমন একটা লাইন নেয়া হয়েছে। আর ওই ৪টি লাইনের প্রত্যেকটি ডাবল করে নেয়া হয়েছে। একটা যদি চলে যায় সাথে সাথে দ্বিতীয়টি দিয়ে চলবে। এরকম ৬টা সিস্টেমের ভেতরে পৃথক সার্কিট করা আছে। তার যে কোনো একটা চলে গেলে অন্যটা দিয়ে লাইন সচল থাকবে। তাছাড়া ট্রেনের নিজস্ব পাওয়ার ক্যাপাসিটিও রয়েছে।