বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরব ও আরব আমিরাত। এই দেশদুটি থেকেই সবচেয়ে বেশি করে রেমিটেন্স এসেছিল এতদিন ধরে। তবে সেই চিত্র এখন পাল্টেছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীরা। ফলে বাংলাদেশে রেমিট্যান্সের উৎস হিসেবে প্রথম অবস্থান দখলে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
মূলত, আগের চেয়ে বেশ কিছু শর্ত শিথিল করায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে অর্থ পাঠানো সহজ হয়েছে। এছাড়া বৈধ পথে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। ডলারের রেটও বেড়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে থাকা বাংলাদেশিদের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীরা পেশাগতভাবে তুলনামূলক ভালো অবস্থানে আছেন। এসব কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) যুক্তরাষ্ট্র থেকে ব্যাংকিং চ্যানেলে ১৯৬ কোটি ৬৬ লাখ (১ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৬ শতাংশ বেশি। ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে দেশটি থেকে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৬৯ কোটি ২২ লাখ ডলার।
স্বাধীনতার পর থেকে বরাবরই বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসছে সৌদি আরব থেকে। সেই সৌদি আরব থেকে এই ছয় মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে ২১ দশমিক ৫৩ শতাংশ। গত ছয় মাসে ১৯০ কোটি ৯১ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন সৌদি প্রবাসীরা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ২৪৩ কোটি ৩৪ লাখ ডলার।
এছাড়া চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ১৩৩ কোটি ৭১ লাখ ডলার। যুক্তরাজ্য থেকে এসেছে ৯১ কোটি ১১ লাখ ডলার এবং কুয়েত থেকে এসেছে ৭৬ কোটি ২৮ লাখ ডলার।
রেমিট্যান্স প্রবাহে যুক্তরাষ্ট্র এগিয়ে থাকায় দ্বিতীয় অবস্থানে নেমে এসেছে সৌদি আরব। একসময় দ্বিতীয় থাকা আরব আমিরাতের অবস্থান এখন তৃতীয়, আর চতুর্থ ও ৫ম অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাজ্য ও কুয়েত।
এছাড়া ছয় মাসে শীর্ষ ১০-এ থাকা অন্য দেশগুলো মধ্যে কাতারে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিরা পাঠিয়েছেন ৬৯ কোটি ৯২ লাখ ডলার, ইতালি থেকে এসেছে ৬১ কোটি ৯ লাখ ডলার, মালয়েশিয়া থেকে এসেছে ৫৪ কোটি ৩৪ লাখ ডলার, ওমান থেকে এসেছে ৩১ কোটি ৩১ লাখ ডলার এবং বাহরাইন থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ২২ কোটি মার্কিন ডলার।
সদ্য সমাপ্ত ডিসেম্বর মাসে ১৬৯ কোটি ৯৬ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ১৮ হাজার ১৮৬ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১০৭ টাকা হিসাবে)। এর আগের মাস নভেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৫৯ কোটি ৫১ লাখ মার্কিন ডলার।
এদিকে মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বিশ্বের দেশ থেকে ১৯.৫৮ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স এসেছে।
অর্থমন্ত্রী জানান, গত ১১ মাসে (জানুয়ারি-২০২২ থেকে নভেম্বর ২০২২) ১৯ হাজার ৫৮৫ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।
২০২২ সালের জানুয়ারিতে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ৭০৪ কোটি ৫৩ লাখ মার্কিন ডলার, ফেব্রুয়ারিতে ১ হাজার ৪৯৬ কোটি ৯ লাখ ডলার, মার্চে ১ হাজার ৮৫৯ কোটি ৯৭ লাখ ডলার, এপ্রিলে ২ হাজার ৯ কোটি ৪৯ লাখ ডলার, মে মাসে ১ হাজার ৮৮৫ কোটি ৩৪ লাখ ডলার, জুনে ১ হাজার ৮৩৭ কোটি ২৭ লাখ ডলার, জুলাইয়ে ২ হাজার ৯৬ কোটি ৩২ লাখ ডলার, আগস্টে ২ হাজার ৩৬ কোটি ৯৩ লাখ ডলার, সেপ্টেম্বরে ১ হাজার ৫৩৯ কোটি ৫১ লাখ ডলার, অক্টোবরে ১ হাজার ৫২৫ কোটি ৪৩ লাখ ডলার এবং নভেম্বরে রেমিট্যান্স আসে ১ হাজার ৫৯৪ কোটি ৭৩ লাখ মার্কিন ডলার।