আল-আকসা মসজিদের কাছে একটি পশু কুরবানি করতে চেয়েছিল ডানপন্থি ইহুদিরা। আল-আকসা মসজিদের কেন্দ্রে অবস্থিত একটি ইসলামিক মাজার ভেঙে ফেলে তৃতীয় মন্দির নির্মাণের জন্য ভিত্তি স্থাপন করতে চেয়েছিল তারা। মূলত আল-আকসা মসজিদে স্থায়ী ইহুদি উপস্থিতি স্থাপনের পরিকল্পনা করছিল ইসরাইল। আর এ কারণেই অভিযান পরিচালনা করেছে হামাস।
হাসাসের গত ৭ অক্টোবরের অভিযানে একটি ভারী মূল্য পরিশোধ করছেন গাজাবাসী। হাজার হাজার নিহতসহ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন লাখ লাখ মানুষ। বর্তমানে পানি, খাদ্য, বিদ্যুৎ, জ্বালানিসহ প্রয়োজনীয় প্রায় সব মৌলিক সরবরাহ ছাড়াই দিন পার করছেন উপত্যকার প্রায় ২৩ লাখ বাসিন্দা। তবে এত বিপর্যয়ের পরও এখনো জয়ের আশা ছাড়েনি হামাস। চলমান যুদ্ধের চূড়ান্ত ফলাফল হবে ‘ইসরাইলি প্রত্যাহার’ বলে মনে করেন হামাসঘনিষ্ঠ এক ফিলিস্তিনি সূত্র। তিনি বলেন, ‘ইসরাইলকে পরাজিত ও ফিলিস্তিনকে দখলমুক্ত করার ক্ষমতা হামাসের রয়েছে।’ আর হামাসের জন্য ‘এখন একটি সত্য’। এপি।
হামাসকে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করা সম্ভব কিনা এ প্রশ্নে জবাবে ফিলিস্তিনি সূত্র বলেন, ইসরাইলের নেতারা দলটিকে নিশ্চিহ্ন করার প্রতিশ্রুতি প্রথমবারের মতো দেয়নি। এর আগে প্রতিটি যুদ্ধই শেষ হয়েছিল ইসরাইলি প্রত্যাহারের মাধ্যমে। তবে প্রতিবারের যুদ্ধে ধ্বংসের মাত্রা ভিন্ন তা স্বীকার করেছেন হামাস নেতারা। সূত্রের মতে, ‘ইসরাইল হয়তো গাজার অর্ধেক ধ্বংস করতে পারে। কিন্তু আমি মনে করি শেষ পর্যন্ত ফলাফল একই হবে। বরং ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর জন্য সমস্যা হবে কিভাবে অন্যের কাছে একটি ভালো ভাবমূর্তি তৈরি করে যুদ্ধ শেষ করবেন।’ গাজায় হামাস নেতাদের নির্মূলের যুদ্ধে নেতানিয়াহু সফল হলেও ৭ অক্টোবরের হামলায় জন্য তিনি তার দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হবেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ইসরাইলের মূল লক্ষ্য অর্জনের সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিয়েছেন ফিলিস্তিনি এই সূত্র। বলেছেন, গাজায় এই সংগঠনের আকার আর তার ওপর নির্ভরশীলদের কারণে হামাসকে শেষ করা শারীরিকভাবে অসম্ভব। সমাজের প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে হামাসের অবস্থান। ‘আপনি যোদ্ধা এবং তাদের পরিবার আছে, আপনি দাতব্য সংস্থা এবং তাদের পরিবার আছে. আপনি সরকারি কর্মী এবং তাদের পরিবার আছে, সবাই একসঙ্গে সমাজের একটি বড় অংশ দখল করে আছে।’
হামাসের গত ৭ অক্টোবরের অভিযানের কারণ সম্পর্কে এই সূত্র বলেন, সে সময় আল-আকসা মসজিদের কাছে একটি পশু কুরবানি করতে চেয়েছিল ডানপন্থি ইহুদিরা। আল-আকসা মসজিদের কেন্দ্রে অবস্থিত একটি ইসলামিক মাজার ভেঙে ফেলে তৃতীয় মন্দির নির্মাণের জন্য ভিত্তি স্থাপন করতে চেয়েছিল তারা। মূলত আল-আকসা মসজিদে স্থায়ী ইহুদি উপস্থিতি স্থাপনের পরিকল্পনা করছিল ইসরাইল। আর এ কারণেই অভিযান পরিচালনা করেছে হামাস।
যুদ্ধ শেষে হামাস যা অর্জন করবে
ফিলিস্তিনি সূত্র বলেন, যুদ্ধ শেষ হলে ঘড়ির কাঁটা আবার ৬ অক্টোবরে পিছিয়ে দেওয়া হবে তা মনে করে না হামাস। তবে গাজা আবার শুরু হবে। হামাসের বিশ্বাস, বর্তমান সংঘাত ‘ফিলিস্তিনি জনগণ ও ফিলিস্তিনি প্রতিরোধকে বিজয় ও মুক্তির দিকে নিয়ে গেছে।’সূত্র আরও বলেন, ‘আমি মনে করি ইসরাইল ভবিষ্যতের জন্য অনেক আস্থা হারিয়েছে।’
হামাস মনে করে যে, একাধিক আরব শান্তি উদ্যোগ প্রত্যাখ্যান করে ইসরাইল একটি বিশাল কৌশলগত ভুল করেছে, যা সংঘাতের অবসান ঘটাতে পারে। ইসরাইলি সেনাবাহিনীর একটি অপ্রতিরোধ্য সামরিক সুবিধা রয়েছে বলে স্বীকার করেছেন তিনি। তবে বলেছেন, যুদ্ধের ফলাফল সবসময় শক্তির ভারসাম্যের ওপর নির্ভর করে না। তিনি আরও বলেন, ‘ভিয়েতনামের দিকে তাকান, আফগানিস্তানের দিকে তাকান, আলজেরিয়ার দিকে তাকান। এই ঔপনিবেশিক যুদ্ধগুলো কীভাবে শেষ হয়েছিল তা দেখুন।’