আব্দুর রহমান রাসেল,রংপুর ব্যুরো: রংপুরের কাউনিয়ায় উদয় নারায়ণ মাছহাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের ক্লাস চলছে খোলা আকাশের নিচে। টেন্ডার হবার তিন বছর পেরিয়ে গেলোও নির্মাণ হয়নি বিদ্যালয়টির চার তলা ভবন। প্রথমের দিকে জাগয়াটিকে দেখে পুকুর মনে হলেও আসলে এটি বিদ্যালয় নির্মাণের নির্ধারিত স্থান। মেয়াদোত্তীর্ণ ভবনটি ভেঙে ফেলার পর এখনও শুরু হয়নি নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ। পাশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দু’টি কক্ষে আপাতত বাধ্য হয়ে নিতে হয়েছে আশ্রয়। তবে মাত্র দুটি কক্ষ পর্যাপ্ত নয়।
স্কুল সূত্রে জানা গেছে, তিন বছর আগে ভবন নির্মাণের উদ্দেশ্যে জায়গায়টি খনন করা হলেও এখন পর্যন্ত শুরু হয়নি নির্মাণ কাজ। বর্তমানে বিদ্যালয়ের অন্য কোন ভবন না থাকায় মাঠেই সারতে হচ্ছে পাঠদানের কার্যক্রম। এতে শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হওয়ার পাশাপাশি কমছে উপস্থিতির সংখ্যাও।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, কাউনিয়া উপজেলার সারাই ইউনিয়নে উদয় নারায়ণ মাছহাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের ক্লাস চলছে খোলা আকাশের নিচে। নির্মাণ সামগ্রী মালামাল ফেলে রাখায় চরম দুর্ভোগের শিখার হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। ফলে দিন যাচ্ছে কমতে শুরু করছে শিক্ষার্থীর উপস্থিতির সংখ্যা।
উদয় নারায়ণ মাছহাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণিসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, স্কুলের ভবন না থাকায় বৃষ্টিতে ভিজে রোদে পুরে ক্লাস করছি অনেক দিন থেকে। সরকারের কাছে আমাদের দাবী এই ভবনটি দ্রুত নির্মান করা হোক।
এদিকে, কাউনিয়া উপজেলার সাব্দী দারুস সুন্নাহ আলিম মাদ্রাসা। ৫ বছর আগে মাদ্রাসার মূল ভবনটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। এরপর নতুন ভবনের টেন্ডার হয় চার বছর আগে। গত চার বছরে দফায় দফায় মাটি পরীক্ষা করা হলেও এখন পর্যন্ত শুরু হয়নি নির্মাণ কাজ। তাই বাধ্য হয়েই পরিত্যক্ত ভবনেই চলছে পাঠদান। এতে মেয়াদোত্তীর্ণ ভবনের পলেস্তারা খুলে শিক্ষার্থীদের আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটছে।
কয়েকজন শিক্ষার্থী ও শিক্ষক বলেন, স্কুলের ছাদ ধষে মাথায় পড়ে। কিছু দিন আগে মাদ্রাসার দুই তিনজন শিক্ষার্থীর মাথায় ছাদ ভেঙ্গে পরেছে। এই ঘটনার প থেকে মাদ্রাসা মাঠে ক্লাস করছি।
২০১৮ সাল ও ২০২১ সালে পাওয়া ৩ প্রকল্পের মাধ্যমে বিভাগে ৪ হাজার ৮শ’ ৬২ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণ ও সংস্কারের কাজ হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত শতভাগ কাজ হয়েছে ২ হাজার ১শ’ ১৪টি। বাকি ২ হজার ৭শ’ ৪৮টি বিদ্যালয়ের কিছু জায়গায় নির্মাণ কাজ শুরু হলেও বন্ধ আছে বেশিরভাগ। যদিও প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৪ সালে।
অন্যদিকে সরকারি ও বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বেসরকারি কলেজ, মাদ্রাসাসহ টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের নির্মাণ বন্ধ থাকা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩৪১টি। সব মিলিয়ে বিভাগে বন্ধ আছে প্রায় ৫ শ’ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নির্মাণ কাজ। ঠিকাদাররা বলছেন বিভিন্ন উপকরণের দাম বাড়ায় কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে।
রংপুর ঠিকাদার সমিতি আহ্বায়ক, রফিকুল ইসলাম দুলাল বলেন, যে সময় টেন্ডার হয়েছে তখন সব মালামালের দম কম ছিল। এখন মালামালের দাম দ্বী গুণ বৃদ্ধি হওয়ায় হিমািসম ক্ষেতে হচ্ছে। ফলে কাজ করতে বিলম্ব হচ্ছে।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, রংপুর নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল কালাম মো: আখতারুজ্জামান, বলেন,এই সংকট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কারণেই। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিধি অনুযায়ী নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করতে না পারলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নেয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা। তবে ভবন নির্মান কাজ চলোমান আছে। ঘন বৃষ্টি হওয়ায় চলোমান কাজ গুলো বন্ধ আছে। অল্প সময়ের মধ্যে আবারও কাজ চালু হবে।
উদয় নারায়ণ মাছহাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি ও সারাই ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম বলেন, শিক্ষা অফিসের অবহেলার কারণে এই ভবনের নির্মান কাজ হচ্ছে না। সরকারের কাছে আমাদের দাবী তারাতারি স্কুলের ভবন করে দেওয়া হোক।
প্রাথমিক শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর রংপুর বিভাগীয় উপ-পরিচালক মো. মুজাহিদুল ইসলাম জানান, ঠিকাদারের অবহেলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বন্ধ আছে। আকাশের অবস্থা ভালো হলে দ্রুত কাজ শেষ হবে।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. তারেক আনোয়ার জাহেদী, প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, মাটি সমস্যার কারণে জায়গা নির্ধারন করতে কিছুটা সময় লাগছে। তবে ৮৭% স্কুলের কাজ হয়েছে। অল্প কিছু দিনের মধ্যে স্কুলের বাকী কাজ শেষ হলে সরকারের উন্নয়ন মুলক কাজ গুলো দৃশ্যমান হবে। তিনি আরো বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলো নির্দিষ্ট প্রকল্পের আওতায় নতুন করে থাকছে না দাম নির্ধারণের সুযোগ। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গুলো সময় মত কাজ না করায় তাদের বিরুদ্ধে ইতি মধ্যে আইন গত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এদিকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্মাণধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কাজ শেষ করা না গেলে ফেরত যাবে বরাদ্দের টাকা। এতে নতুন নির্মাণ যেমন অনিশ্চিত হয়ে পরবে তেমনি বড় ধরনের প্রভাব পড়বে শিক্ষা কার্যক্রমেও।