রাহাত মামুন,চট্টগ্রাম: কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পোমরা ইউনিয়নের শান্তিরহাটস্থ খাঁ মসজিদ। দেশের অন্য উপজেলার মতো রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় রয়েছে নতুন-পুরনো অনেক মসজিদ। ঠিক তেমনই ৪৫০ বছরের পুরনো একটি মসজিদ পোমরা খাঁ মসজিদ। যে মসজিদটি গায়েবি মসজিদ নামেও পরিচিত।
জানা গেছে, বর্তমান খাঁ মসজিদের স্থানে ছিল পাহাড়ি ঝোঁপঝাড়। খাঁ বংশের জনৈক ব্যক্তি এ সময় ওই জায়গায় বেশ কয়েকদিন ধরে গায়েবি আজান শুনতে পান। পরে ঝোঁপঝাড় পরিস্কার করলে সেখানে গায়েবি একটি মসজিদ আকৃতির স্থাপনা দেখতে পান। এরপর ওই ব্যক্তি খাঁ পুকুর পাড়ে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। খাঁ বংশের লোকেরা প্রতিষ্ঠিত করেছেন বলে এই মসজিদের নামকরণ করা হয় খাঁ মসজিদ।
প্রাচীনতম এ মসজিদটি দেশের নানা প্রান্ত থেকে মুসল্লীরা আসেন নামাজ আদায়ের জন্য। বিশেষ করে শুক্রবার শত শত মুসল্লীদের মিলনমেলা। দেশের নানা প্রান্ত থেকে শত শত মুসল্লী দূর-দূরান্ত থেকে নামাজ আদায়ের জন্য আসেন। অনেকে মনের বাসনা পূরণের জন্য মসজিদের গায়ে চুন লেপন করেন।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, মসজিদটির প্রতিষ্ঠা কত সালে নির্দিষ্ট দিনক্ষণ জানা নেই। তবে এ মসজিদটি প্রায় ৪৫০ বছর আগের এলাকা প্রবীণরা জানান। এ মসজিদে এশার নামাজের পর গভীর রাতে এবং ফজরের নামাজে এখানে আল্লাহর মুমিন মুসলমানরা সাদা পোশাকে নামাজ আদায় করতো বলে জানান প্রবীণ মুসল্লীরা। তখন রাতে গায়েবি আজান হতো। এমনকি এ মসজিদে পাহাড়ি পথে বার আউলিয়াগণ বৃহস্পতিবার নামাজ আদায় করতে আসতেন বলে এলাকায় লোকের মুখে মুখে। বাঘের পিটে চড়ে জনৈক বুজুর্গ ব্যক্তি নামাজ আদায় করতে আসতেন খাঁ মসজিদে এমন জনশ্রুতিও রয়েছে।
মসজিদে আসা রবিউল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি জানান, খাঁ মসজিদে এসে কোন মানত দিয়ে গেলে তা পূরণ করেন সৃষ্টিকর্তা। কারও মানত বিফলে যায় না।
পোমরা খাঁ মসজিদ কমপ্লেক্স পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও চেয়ারম্যান জহির আহমদ চৌধুরী জানান, প্রথমে মসজিদটি বেড়া দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে মাটির তৈরি দেয়াল দিয়ে উন্নয়ন করা হয়। আহছান উল্লা ফকির নামে এক বুজুর্গসহ অনেক বুজুর্গ ব্যক্তি এ মসজিদের পাশে কবরস্থানে শায়িত আছেন বলে মসজিদটি বুজুর্গ মসজিদ হিসেবেও অনেকে মনে করেন।
খাঁ মসজিদের খতিব মাওলানা জরিফ আলী আরমান জানান, খাঁ মসজিদ গায়েবি ও বুজু্র্গ মসজিদ হিসেবে পরিচিত। এ মসজিদে আমি দীর্ঘ ৩৮ বছর ধরে খতিবের দায়িত্বে থেকে খেদমত করে যাচ্ছি। মসজিদের আশেপাশে অনেক বুজুর্গরা শায়িত রয়েছেন। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে সকল ধর্মের মানুষ বিভিন্ন মানত নিয়ে এ মসজিদে আসেন। এবং তারা মনতের সফলতা পেয়েছেন বলেও স্বীকার করেছেন।
খাঁ মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা আবু জাফর আলকাদেরি জানান, এ মসজিদে প্রতিদিন শতাধিক লোকজন আসেন তাদের মানত নিয়ে, অনেকেই তাদের কষ্টের আর্জি দিয়ে যান মসজিদে চুন লেপনের মাধ্যমে। এমনকি দেশের দূর-দূরান্ত থেকেও বিভিন্ন জাতি ধর্মের লোকজন এখানে আসেন। সবাই সমান ভাবগাম্ভীর্যের সাথে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
তিনি জানান, আজ থেকে প্রায় ২ বছর আগে শীতের দিনে আমি ফজরের নামাজ পড়ে বের হয়ে দেখি এক বৃদ্ধ শীতে কাঁপছেন। তিনি এসেছিলেন কুমিল্লা থেকে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, হুজুর এখন কি নামাজ পড়তে পারবো? বললাম সূর্য উদয় হচ্ছে ১০ মিনিট পরে পরেন। পরে লোকটাকে শীতে কাঁপছে দেখে তাঁকে নিয়ে সকালের নাস্তা করে আসলাম। ওই লোক নাকি ৫ বছর আগে উপজেলার মরিয়ম নগরে কাজ করতেন। সেখানে একজনের কাছ থেকে বর্গা জমি নিয়ে শশা চাষ করতেন। এতে তা মালিকের সহ্য হয়নি, তাই শশা গাছগুলো কেটে দেন। ভারাক্রান্ত মন নিয়ে সেই কাটা শশাগুলোর অংশ খাঁ মসজিদে রেখে আল্লাহর কাছে বিচার দিয়ে যান। পরবর্তীতে যিনি তাঁর শশা ক্ষেত কেটে দিয়েছেন অই লোকটা পঙ্গু হয়ে যান। তিনি এবারও কুমিল্লা থেকে এসেছেন খাঁ মসজিদে নিবেদন দিতে।