Saturday , 4 May 2024
শিরোনাম

শত কোটি টাকা নিয়ে উধাও সমিতি, সভাপতি-সম্পাদক গ্রেফতার

রাজধানীর মিরপুরে কোটি কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা “চেতনা বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড” এর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক’কে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব-৪।

১। সাম্প্রতিককালে প্রতারণার নতুন নতুন কৌশল ব্যবহার করে সাধারণ জনগণকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে তাদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এক শ্রেণীর পেশাদার প্রতারক চক্র। অতি সম্প্রতি মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম), ই-কমার্স, সমবায় সমিতি, এনজিও, অনলাইন ব্যবসার মাধ্যমে অসংখ্য মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে সর্বশান্ত করার বেশকিছু অভিযোগ পেয়েছে র‍্যাব। এই সকল প্রতারকদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে “ফাল্গুনী ডটকম”, “শিবপুর ক্ষুদ্র ঋণদান কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড” ও “কর্ণফুলী মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিঃ” এর মতো বেশকিছু সফল অভিযান পরিচালনা করেছে র‍্যাব-৪।

২। সম্প্রতি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এবং প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিকস্ মিডিয়ার মাধ্যমে জানা যায় যে, “চেতনা বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড” নামক একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ঢাকা মহানগরীর মিরপুর এলাকার আনুমানিক চার হাজার ক্ষতিগ্রস্থ ভুক্তভোগীদের প্রায় শতাধিক কোটি টাকা আত্মসাৎ করে লাপাত্তা হয়ে যায়। এ ঘটনায় প্রায় চার হাজার গ্রাহক তাদের জমাকৃত টাকা ফেরত পেতে গত ০৯ অক্টোবর ২০২২ তারিখ প্রতিষ্ঠানটির মিরপুরস্থ অফিসের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। প্রাথমিকভাবে জানা যায়, চার হাজার পরিবারের প্রায় শতাধিক কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে এ চক্রটি। ভুক্তভোগী গ্রাহকরা জানান, উচ্চ মুনাফার লোভ দেখিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সঞ্চয়ী প্রকল্প, ডিপিএস, এফডিআর, পেনশন পলিসি, প্রজেক্ট, ফ্ল্যাট, ডায়াগনস্টিক, স্কুল, হোটেল ইত্যাদি দেখিয়ে তাদের কাছে থেকে লাখে প্রতি মাসে ১ থেকে ৩ হাজার টাকা লভ্যাংশ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বিপুল পরিমান টাকা হাতিয়ে নেয়। প্রথমে কিছুদিন ঠিকঠাক মতো লভ্যাংশ দিলেও পরে আর কোন লভ্যাংশ তো দিচ্ছেই না বরং মেয়াদ পূর্ণ হলেও আসল টাকা দিতেই নানা তালবাহানা শুরু করে। এর প্রেক্ষিতে ৫৬০ জন প্রতারিত ভুক্তভোগী “চেতনা বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড” এর কাছে আনুমানিক ২০/২৫ কোটি টাকা পাবে মর্মে র‍্যাব-৪ বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়ে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে উক্ত প্রতারক চক্রের সদস্যদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে র‍্যাব-৪ গোয়েন্দা কার্যক্রম বৃদ্ধি করে।

৩। এরই ধারাবাহিকতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‍্যাব-৪ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল ১০ অক্টোবর ২০২২ তারিখ ভোরে মিরপুর থানাধীন এলাকায় সাড়াশি অভিযান পরিচালনা করে প্রতারণার দায়ে “চেতনা বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড” এর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়ঃ

ক। মোঃ জাকির হোসেন (৫৪), (সভাপতি), জেলা-গোপালগঞ্জ।
খ। মোঃ মশিউর রহমান (৪২), (সাধারণ সম্পাদক), জেলা-ঝালকাঠি।

অভিযান পরিচালনা কালে “চেতনা বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড” অফিস হতে প্রতারণায় ব্যবহৃত বিভিন্ন সামগ্রী যেমনঃ ভর্তি ফরম, ঋণ গ্রহীতার ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্র, ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতাদের জীবন বৃত্তান্ত, লিফলেট, সিল, বিভিন্ন নামে সঞ্চয় পাশবই, দৈনিক কিন্তি ও ঋণ বিতরণের বিভিন্ন রেজিষ্টার, ব্যাংক চেকসহ ব্যাংক স্ট্যাম্প, আইডি কার্ড, দৈনিক কিস্তি আদায়ের শিট, বিভিন্ন প্রকার সার্টিফিকেট, চেক বই, মনিটর, সিপিইউ, নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।

৪। গ্রেফতারকৃত আসামীদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে গত ৩৭ বছর পূর্বে উক্ত সমিতি প্রতিষ্ঠা লাভ করে যার রেজিস্ট্রেশন নম্বর-৮৩। প্রথমদিকে তারা স্থানীয় বিভিন্ন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও স্বল্প আয়ের মানুষজনকে অধিক মুনাফায় সঞ্চয় ও ক্ষুদ্রঋণের প্রতি আকৃষ্ট করতো। ধীরে ধীরে এই সংস্থার বিস্তৃতি লাভ করতে থাকে। একই সাথে তারা “চেতনা বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড” এর ব্যানারে আরো বড় পরিসরে কাজ শুরু করে। এক্ষেত্রে তাদের মূল টার্গেট ছিল মিরপুর এলাকার মধ্যবিত্ত, গার্মেন্টসকর্মী, রিক্সাচালক, ভ্যানচালক, অটোচালক, সবজি ব্যবসায়ী, ফল ব্যবসায়ী, গৃহকর্মী ও নিম্নআয়ের লোকজন। তাদেরকে অতি উচ্চ মুনাফা প্রদানের আশ্বাসে কোম্পানিতে সঞ্চয়ী পলিসি, এফ ডি আর, ডিপিএস, পেনশন পলিসি, শিক্ষা পলিসি, রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী পার্টনার পলিসিতে আকৃষ্ট করতো। এমন চটকদার ১৮%-৩০% হারে মুনাফা এবং ফিক্সড ডিপোজিটের ক্ষেত্রে ৩/৫ বছরের ডাবল লাভ প্রদানের আশ্বাসে প্রায় সহস্রাধিক মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত জীবনের সমস্ত অর্জিত আয় উক্ত সমিতিতে জমা রাখতে উৎসাহিত করতো। ভিকটিমদের বিশ্বাস অর্জনের জন্য সংস্থাটি গ্রহীতাকে প্রথম দিকে কয়েক মাস চুক্তি অনুযায়ী লভ্যাংশ প্রদান করতো যা দেখে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা আরো বেশি বিনিয়োগে আগ্রহী হতো। অনেকে নিজের পেনশনের টাকা, গ্রামের ভিটেবাড়ি বিক্রি করা টাকা, বিদেশ থেকে কষ্ট করে অর্জিত অর্থ উক্ত সংস্থায় উচ্চ মুনাফা লাভের আশায় জমা রাখত। এমন অবস্থার প্রেক্ষিতে আসামিরা পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে গত ৩/৪ মাস পূর্বে অফিসে তালা দিয়ে লাপাত্তা হয়। অনুসন্ধানে আরো জানা যায় যে, উক্ত সংস্থা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণ গ্রাহকদের বিনিয়োগকৃত অর্থ দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় নামে-বেনামে জায়গা-জমি কেনা, বহুতল ভবন নির্মাণ, বিভিন্ন ছোট বড় প্রতিষ্ঠান করেছে।

৫। কমিটির সভাপতি মোঃ জাকির হোসেন খান ১৯৭১ সালে গোপালগঞ্জ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। সে ১৯৮৬ সালে স্থানীয় একটি স্কুল থেকে এসএসসি, ১৯৮৮ ও ১৯৯০ সালে ঢাকার একটি কলেজ থেকে এইচএসসি ও বি.কম পাশ করে একটি ফার্ম হতে ১৯৯৫ সালে চার্টাড একাউন্টেন্ট সার্টিফিকেট সম্পন্ন করেন। ধৃত আসামী ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত একটি গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানে উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত ২০০৬ সাল থেকে মিরপুর-১০ এর একটি ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস এর ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। গত ১৯৯৩ সাল থেকে তিনি “চেতনা বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড” এর সাধারণ সদস্য হিসেবে যোগদান করে বর্তমানে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। গ্রেফতারকৃত আসামীর নামে ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে একাধিক ফ্ল্যাটসহ নামে বেনামে বিপুল পরিমান সম্পত্তির সন্ধান পাওয়া গেছে। সে সভাপতির পাশাপাশি কোষাধ্যক্ষ এর দায়িত্ব পালন করেন।

গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ মশিউর রহমান ১৯৭৩ সালে ঝালকাঠি জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। সে গত ১৯৮৮ সালে ঝালকাঠির স্থানীয় একটি স্কুল হতে এসএসসি, ১৯৯০ সালে ঢাকার একটি কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ১৯৯৫ ও ১৯৯৭ সালে ঢাকার একটি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় হতে বি.কম (সম্মান) ও এম.কম সম্পন্ন করেন। তিনি গত ১৯৯৮ সাল হতে ২০০২ সাল পর্যন্ত ঢাকার একটি কলেজে শিক্ষকতা করতেন এবং পরবর্তীতে ২০০৩ সাল হতে অদ্যবধি একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তিনি ২০২১ সালে অত্র সমিতির সহসভাপতি এবং গত জানুয়ারি ২০২২ সালে তিনি সাধারন সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। অনুসন্ধানে পাওয়া যায় তিনি গুলশান নিকেতনে নিজের ফ্লাটে বসবাস করেন। এছাড়া তার নামে বেনামে অনেক সম্পদ রয়েছে মর্মে জানা যায়।

৬। প্রতারনার কৌশলঃ
ক। সদস্য সংগ্রহঃ এই প্রতারক চক্রের মাঠ পর্যায়ের কর্মী/সদস্য রয়েছে। এরা ঢাকা মহানগরীর মিরপুর এলাকার মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষ যেমন-গার্মেন্টসকর্মী, রিক্সাচালক, ভ্যানচালক, অটোচালক, সবজি ব্যবসায়ী, ফল ব্যবসায়ীসহ নিম্নআয়ের মানুষদের টার্গেট করে প্রতি লাখে ১ থেকে ৩ হাজার টাকা মাসিক লভ্যাংশ এবং স্বল্প সময়ে মাসিক মেয়াদ শেষে অধিক মুনাফা লাভের প্রলোভন দেখিয়ে তাদের কোম্পানী’তে বিনিয়োগ করতে উদ্ভুদ্ধ করতো। ভিকটিমদের প্রলুব্ধ করতে তারা বিভিন্ন প্রজেক্ট, ফ্ল্যাট ও প্লটের মালিকানার প্রলোভন দেখিয়ে ভুলিয়ে নানান কৌশলে প্রতারক চক্রের অফিস কার্যালয়ে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হতো। তারা ভিকটিমদের বুঝাতো যে তাদের কাছে এফডিআর করলে ০১ লক্ষ টাকায় প্রতিমাসে ১,৮০০/-টাকা লভ্যাংশ প্রদান করা হবে প্রকৃতপক্ষে যা বাংলাদেশে কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠান দিতে পারেনা।

খ। স্বল্প সময়ে অধিক মুনাফা প্রদানের প্রলোভনঃ গ্রেফতারকৃত আসামীরা ভুক্তভোগীদের বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখিয়ে স্বল্প সময়ে অধিক মুনাফা প্রদানের নিশ্চয়তা প্রদান করে “চেতনা বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড” এ বিনিয়োগ/ডিপিএস করতে আগ্রহী করত। এভাবে প্রলুব্ধ হয়ে ভ‚ক্তভোগীরা উক্ত কোম্পানী’তে বিনিয়োগ করত। ভ‚ক্তভোগীদের বক্তব্য অনুযায়ী ১৮%- ৩০% হারে মুনাফা এবং ফিক্সডিপোজিটের ক্ষেত্রে ৩/৫ বছরে ডাবল লাভ প্রদানের আশ্বাস দিতো।

গ। বিভিন্ন ভুয়া প্রকল্প প্রচারঃ সাধারণ মানুষকে ভুল বুঝিয়ে বিভিন্ন ভুয়া প্রকল্প যেমন, বিভিন্ন সঞ্চয়ী প্রকল্প, ডিপিএস, এফডিআর, পেনশন পলিসি, হজ্জ পলিসি, প্রজেক্ট, বাগান, ডেইরি ফার্ম, ফ্ল্যাট ইত্যাদি দেখিয়ে তাদের কাছে থেকে প্রতারনামূলকভাবে নগদ অর্থ হাতিয়ে নিয়ে আসছিলো।

ঘ। ভূক্তভোগীদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহঃ এ কোম্পানীর কিছু সদস্য মাসিক/পাক্ষিক ভিত্তিতে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে ডিপিএস এর টাকা সংগ্রহ করত। ভূক্তভোগীদেরকে বিভিন্ন ভাবে ভয়ভীতি দেখানো হতো যদি তারা সময়মত ডিপিএস এর টাকা না পরিশোধ করে তাহলে মেয়াদ শেষে তারা মুনাফা কম পাবে এবং নিয়মিত টাকা না দিলে জরিমানাও করা হতো। অধিক মুনাফার লোভে ভূক্তভোগীদের সঠিক সময়ে ডিপিএস এর টাকা জমা করত এমনকি করোনাকালীন সময়েও খেয়ে না খেয়ে কষ্ট করে সমিতিতে নিয়মিত টাকা প্রদান করে আসছিল পক্ষান্তরে কোন লভ্যাংশ পায়নি।

ঙ। প্রতারণার কৌশলঃ ক্ষুদ্রঋণ প্রদানের কোনো অনুমোদন না থাকলেও উক্ত প্রতিষ্ঠানটি নিয়মিতভাবে মিরপুর এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের উচ্চসুদে ঋণ প্রদান করত এবং সেগুলো আদায় করত। ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে অনেক সময় ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং মারধর করত। প্রতারক চক্রটি মিরপুর এলাকায় ভিকটিমদের অধিক লাভের প্রলোভন দেখিয়ে “চেতনা বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড” এ বিনিয়োগ করার জন্য প্রলুব্ধ করত। ভুক্তভোগীদের প্রলুব্ধ করতে কোম্পানীর কিছু সদস্য’কে কমিটির ভুয়া সদস্য সাজিয়ে সাধারণ মানুষদের’কে বুঝাতো যে আমরা কোম্পানীতে বিনিয়োগ/ডিপিএস করেছি এবং স্বল্প সময়ে অধিক মুনাফা পেয়েছি। সাধারণ মানুষ তাদের কথা বিশ্বাস করে কোম্পানীতে বিনিয়োগ/ডিপিএস করতে আকৃষ্ট হতো। আর এ সুযোগে কোম্পানীর অন্যান্য সদস্যরা ভ‚ক্তভোগীদের কাছ থেকে কোম্পানীর ভর্তি ফরম পুরণ করিয়ে তাদের সদস্য বানাত। ভুক্তভোগীরা নিয়মিত ডিপিএস এর টাকা জমা দিলেও কোম্পানীর প্রতিশ্রুতিকৃত মাসিক লভ্যাংশ ও মেয়াদ শেষে মুনাফা প্রদান করতো না এমনকি ভুক্তভোগীদের জমাকৃত মূলটাকাও ফেরত দিতনা। ভুক্তভোগীরা লাভের টাকা চাইতে গেলে হুমকি-ধামকি প্রদর্শন করা হতো। তারা ভ‚ক্তভোগীদের কাছ থেকে বিনিয়োগকৃত টাকা নিজেদের নামে সরিয়ে শেয়ার করে কমিটির কর্মকর্তাদের নামে-বেনামে ফ্ল্যাট ও প্লট, বাগান, আবাদি জমি এবং বিভিন্ন ব্যাংকে নগদ টাকা ট্রান্সফার করেছে বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায়।

৭। “চেতনা বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড” কোম্পানীতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির সাথে সাথে তারা আরো নিম্নোক্ত ০৫ টি নামসর্বস্ব কোম্পানী চালু করেঃ
ক। চেতনা টাওয়ার।
খ। চেতনা কুঠির।
গ। চেতনা মডেল একাডেমী।
ঘ। চেতনা ডায়াগনষ্টিক।
ঙ। হোটেল ব্লু বারশি।

বর্তমানে উপরোক্ত প্রতিষ্ঠান সমূহ অকেজো অবস্থায় আছে যা থেকে অল্প পরিমাণ আয় হয়। উল্লেখ্য যে, হোটেল ব্লু বারশি কাগজে-কলমে কক্সবাজারে অবস্থিত হওয়ার কথা থাকলেও আসলে এটির কোনো অস্তিত্ব নেই বলে গ্রেফতারকৃত আসামীরা স্বীকারোক্তি প্রদান করেছেন।

৮। মূল অভিযোগ সমূহঃ
 উক্ত সমিতির সকল কার্যক্রম প্রতারণা মূলক।
 উক্ত প্রতিষ্ঠানটি সমবায় সমিতি হিসেবে রেজিষ্ট্রিকৃত হলেও অবৈধ এবং বেআইনিভাবে ব্যাংকের ন্যায় মেয়াদি আমানতের মাধ্যমে প্রতারণা মূলকভাবে গ্রাহকের নিকট হতে অর্থ সংগ্রহ এবং একইভাবে অবৈধ পন্থায় ঋন গ্রহিতাদের নিকট উচ্চ সুদে ঋন প্রদান করে থাকে।

৯। সমিতির সম্পদের পরিমানঃ গ্রেফতারকৃত আসামীদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, এই প্রতিষ্ঠানের নামে বর্তমানে মিরপুরস্থ ৬০ ফিটে চেতনা টাওয়ারে ০৪ টি ফ্ল্যাট, বর্তমান অফিস চেতনা কুঠিরে ০৩ টি ফ্লোর, রুপনগরে ০১ টি ফ্ল্যাট, মোহাম্মদপুরে ০১ টি ফ্ল্যাট, মিরপুর-১০ এ একটি ০১ টি দোকান, চেতনা মডেল একাডেমি এবং চেতনা ডায়াগনষ্টিক রয়েছে যার আনুমানিক মূল্য ৩০ কোটি টাকার মতো। ঢাকা জেলার সমবায় কর্মকর্তার অডিট অনুযায়ী গত ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরের সর্বশেষ এই সমিতির ফ্যান্ডে মাত্র ৫৪ লক্ষ টাকা জমা রয়েছে এবং ৭০ কোটি টাকার উপর ঋণ রয়েছে।

১০। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে র‍্যাব-৪ উক্ত অভিযানটি পরিচালনা করে। গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন। অদূর ভবিষ্যতে এইরুপ অসাধু সংঘবব্ধ প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে

র‍্যাব-৪ এর জোড়ালো সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত থাকবে।

Check Also

বড় জয়ে শুরু বাংলাদেশের বিশ্বকাপ প্রস্তুতি

ম্যাচ শুরুর আগেই চট্টগ্রামের আকাশে ছিল মেঘের আনাগোনা। আগেরদিন সেখানে হয়েছে বৃষ্টি। উইকেটেও অনেকটা সবুজ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

x