Saturday , 18 May 2024
শিরোনাম

রুশ হামলা ঠেকাতে ফিনল্যান্ডে প্রস্তুত ‘মাটির নিচের শহর’

বাঙ্কার বানানোর কাজটা শুরু হয়েছিল প্রায় ৭৫ বছর আগে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় রুশ হামলার মুখেই। এখন মনে হচ্ছে, ফের রুশ হামলা ঠেকাতে কাজে লেগে যাবে সেগুলো। অদূর ভবিষ্যতেই।

ফিনল্যান্ড ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার জন্য সক্রিয় হতেই পরোক্ষে তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করেছে রাশিয়া। ইউক্রেনের ন্যাটো-ঘনিষ্ঠতার পরেই রাশিয়া সে দেশে হামলা চালায়। প্রায় তিন মাস ধরে সেই যুদ্ধ চলছে। একের পর এক শহরে নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলছে।

এবার যদি রাশিয়া তার উত্তর-পশ্চিমের প্রতিবেশী ফিনল্যান্ডের ওপরও হামলা চালায়, তাহলে কীভাবে আত্মরক্ষা করবে, সেই প্রশ্ন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে ফিনিশ প্রধানমন্ত্রী সানা মারিন ও তার প্রশাসনের মনে।

এই প্রেক্ষিতেই ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিঙ্কিতে সেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আমল থেকে তৈরি করা মাটির নীচের বাঙ্কারগুলোর কথা প্রকাশ্যে এসেছে। হেলসিঙ্কির ফ্রানজেনিনকাটু স্ট্রিটে বহু প্রাচীন লোহার একটি ঘর রয়েছে। দেওয়ালে নানা গ্রাফিটি, অপরিচ্ছন্ন এই ঘরটি বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই, ভেতরে প্রযুক্তির কী অসাধারণ নিদর্শন অপেক্ষা করে রয়েছে।

ঘরটিতে ঢোকার জন্য একটিমাত্র দরজা। ভেতরে ঢুকলেই সিঁড়ি। নামলে মাটির ২৫ মিটার নীচে পৌঁছে যাওয়া যাবে। তার পরে আবার দুটি ইস্পাতের দরজা। তৈরি। এতটাই ভারী যে, দুজন শক্তিশালী মানুষও খুলতে পারবেন না। সেই দরজা পেরোলে শুরু হবে সুড়ঙ্গ। যার শেষ প্রান্তে অপেক্ষা করছে আরেক হেলসিঙ্কি।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ফিনল্যান্ড আক্রমণ করেছিল রাশিয়া। ১৯৩৯-৪০ সালে সাড়ে তিন মাস ধরে চলা সেই ‘উইন্টার ওয়ার’-এ ফিনল্যান্ডের বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়। আকাশপথে রুশ হামলায় বিশেষ করে ক্ষতিগ্রস্ত হয় রাজধানী হেলসিঙ্কি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পরে হেলসিঙ্কির বাসিন্দাদের জন্য মাটির তলায় বাঙ্কার তৈরি করা শুরু করেন ফিনিশ ইঞ্জিনিয়াররা।

২০০ মাইলজুড়ে বিস্তৃত মাটির নীচের এই এলাকাটিতে অন্তত ৫০০ বাঙ্কার রয়েছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, অন্তত ৯ লাখ মানুষের স্থান হবে এই বাঙ্কারগুলোতে। ফলে সহজেই আশ্রয় পাবেন শহরের ৬ লাখ ৩০ হাজার বাসিন্দা।

বসবাসের উপযুক্ত তাপমাত্রা বজায় রাখার ব্যবস্থাও রয়েছে বাঙ্কারগুলোতে। রয়েছে উপযুক্ত বর্জ্য পরিষেবাও। হকি খেলার স্টেডিয়াম এবং সুইমিং পুলও রয়েছে মাটির নীচের এই ‘খুদে শহরে’। এমনকি রাশিয়া পারমাণবিক বোমা হামলা চালালেও সেখানে বেঁচে থাকতে পারবে মানুষ।

রাশিয়ার আগ্রাসী মনোভাবে শঙ্কিত উত্তর-পূর্ব ইউরোপের বহু দেশই। অনেকেই তাদের প্রতিরক্ষা শক্তিশালী করছে। তাই ‘প্রস্তুতি’ নিয়ে রাখছে ফিনল্যান্ডও।

ফিনল্যান্ড গত রবিবার আনুষ্ঠানিকভাবে ন্যাটোর সদস্য হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এক সরকারি বিবৃতিতে ফিনল্যান্ড জানিয়েছে, মন্ত্রীসভার বৈঠকে দেশটির প্রেসিডেন্ট সাউলি নিনিসতো এবং মন্ত্রীসভার সদস্যরা ন্যাটোতে যোগদানের আবেদন করার বিষয়ে একমত হয়েছেন।

মন্ত্রীসভার এই সিদ্ধান্ত এবার ফিনিশ পার্লামেন্টে যাবে। সেখান থেকে ভোটাভুটিতে এই প্রস্তাব পাশ হলে দেশটি আনুষ্ঠানিকভাবে ন্যাটোতে যোগদানের আবেদন করবে।ফিনল্যান্ডের পর সুইডেনও তার নিরপেক্ষতার নীতি থেকে সরে এসে ন্যাটোতে যোগদানের আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

Check Also

তিন দশকের মধ্যে গড় আয়ু বাড়বে পাঁচ বছর

নতুন এক গবেষণায় বলা হয়েছে, তিন দশকের মধ্যে মানুষের গড় আয়ু বাড়বে। তবে পাশাপাশি মোটা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

x