রাম বসাক, শাহজাদপুর, সিরাজগঞ্জ
ধান উৎপাদন দ্বিতীয় বৃহত্তর মৌসুম হলো আমন মৌসুম। শাহজাদপুরে চলতি আমন মৌসুমে ধান কাটা শুরু করেছে স্থানীয় কৃষকরা। আমন ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকের মুখে যেন ফুটেছে হাসির ঝিলিক। আমন চাষে সেচ খরচ লাগেনা, সারের পরিমাণও কম লাগে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কম, রোগ ও পোকা-মাকড়ের আক্রমণও কম হয়। সাড়ে তিন মাসেই এ ফসল কৃষক ঘরে তুলতে পারে। এতে করে খরচ কম, লাভজনক হওয়ায় এবং আমন ধানের খর গো খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করতে পারায় ও বাজার মূল্য ভালো থাকায় আমন চাষাবাদে ব্যাপক আগ্রহ বেড়ে গেছে এ উপজেলার আমন চাষিদের।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে শাহজাদপুরে প্রায় ২২০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হয়েছে। এ উপজেলা তুলনা মূলকভাবে নিচ হওয়ায় আমনের আবাদ বেশি হয়না। কিন্তু এ বছর বন্যা কম হওয়ায় উপজেলার কৈজুরি, জালালপুর, খুকনীর মত নিচু এলাকাতেও আমনের আবাদ হয়েছে। এছাড়া গাড়াদহ, নরিনা, হাবিবুল্লাহনগর, পোরজনা সহ প্রায় সব ইউনিয়নেই আমনের আবাদ হয়েছে। আমন মৌসুমে একটি জনপ্রিয় জাত হলো বিনা ধান-১৭। এ জাতের আমন ধান চষে বিঘাপ্রতি গড় ফলন হয় ২০-২২ মণ। সাড়ে তিন মাসেই এ ফসল কৃষক ঘরে তুলতে পারে। ফলে ধান কাটার ৫-৭ দিন আগেই রিলে ফসল আকারে সরিষা বোপন করতে পারে কৃষক। আর এ কারণে রিলে ফসল চাষে ঝুঁকছে স্থানীয় আমন চাষীরা! উপজেলার গাড়াদহ গ্রামের কৃষক আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান- অন্যান্য বছরের মত এ বছরও ৩ বিঘা জমিতে আমন ধানের আবাদ করেছি। এর মধ্যে ৫০ শতক জমিতে বিনা ধান-১৭ জাতের আমন আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রাসরণের মাধ্যমে রাজশাহী বিভাগের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প থেকে রিলে ফসল আকারে চাষ করেছি। ফলে বোরো আবাদ শুরু হওয়ার আগের নিশ্চিন্তে সরিষার আবাদ ঘরে তুলতে পারবো। এই পদ্ধতিতে আমন ধান চাষে বিঘা প্রতি প্রায় ১২ হাজার টাকা উৎপাদন ব্যয় ও উৎপাদিত ধান ও খর বিক্রি করে প্রায় ২৬ হাজার টাকা পাওয়া যায়। এতে আমন ধান চাষে খরচ বাদে বিঘাপ্রতি কৃষকের প্রায় ১৪ হাজার টাকা লাভ হয়। ফলে আমন ধান চাষে কৃষক লাভবান হচ্ছে।
হাবিবুল্লাহনগর ইউনিয়নের ডায়া গ্রামের কৃষক কালাচান জানান- এ এলাকায় সাদা বায়াইল্যা, লাল বায়াইল্য, সাদা আশ্বিনা, লাল আশ্বিনা জাতের স্থানীয় আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। এ জাতের স্থানীয় আমন ধান বিঘাপ্রতি ফলন হয় ১০-১২ মণ।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার কৃষিবিদ মো. এহসানুল হক বলেন- আমনের আবাদ বাড়াতে কৃষকদের বিনা মূল্যে বীজ ও সার দিয়েছি। আধুনিক জাতের ধানের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকল্প থেকে প্রদর্শনী দিচ্ছি।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোহাম্মদ আব্দুস ছালাম বলেন- কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে আধুনিক জাতের ধান এবং সার বিতরণ করেছি। আমনের আবাদ বাড়াতে এ এলাকায় প্রধান সমস্যা হলো বন্যা। যদি সবকিছু অনুকূলে থাকে তাহলে এই আধুনিক জাতের মাধ্যমে আমনের আবাদ এই এলাকায় বৃদ্ধি পাবে।