স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি নাম, চেতনা ও অধ্যায়। যার জন্ম না হলে হয়তো আমরা স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র পেতাম না। তাঁকে ১৯৭৫ সালে কিছু বিপদগামী সেনা কর্মকর্তা নৃশংসভাবে হত্যা করে।
বাঙালি জাতির জন্য একটি দুর্ভাগ্যজনক অধ্যায় হলো ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। তাঁর ছিল দীর্ঘ বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন। মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে প্রতিনিয়ত বাধার সম্মুখীন হয়েছেন, জেল খেটেছেন; কিন্তু কখনও দমেননি। শৈশব থেকে বঙ্গবন্ধুর মধ্যে রাজনৈতিক চেতনার বীজ নিহিত ছিল।
মাত্র ২৩ বছর বয়সে বঙ্গবন্ধু সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন এবং মুসলিমলীগের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।
১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু মুসলিম ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন। একই বছর ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দীন আইন পরিষদে পূর্বপাকিস্তানের জনগণ উর্দুকে রাষ্ট্র ভাষা মেনে নেবে বলে ঘোষণা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে বঙ্গবন্ধু এর প্রতিবাদ জানান।
১১ মার্চ ১৯৪৮ তারিখে ঢাকায় ধর্মঘট পালিত হয়। ধর্মঘট পালনকালে শেখ মুজিবসহ আর ও কয়েক জন রাজনৈতিক কর্মীকে সচিবালয় ভবনের সামনে থেকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু ছাত্র সমাজের তীব্র প্রতিবাদের মুখে ১৫ মার্চ শেখ মুজিব এবং অন্য ছাত্র নেতাদেরকে মুক্তি দেয়া হয়।
এদের মুক্তি উপলক্ষে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় র্যালি হয় যাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সভাপতিত্ব করেন। পুলিশ এই র্যালি অবরোধ করেছিল। পুলিশী কার্যক্রমের প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অবিলম্বে ১৭ মার্চ ১৯৪৮ তারিখে দেশব্যাপী ছাত্র ধর্মঘটের ঘোষণা দেন। ১৯ মার্চ তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে একটি আন্দোলন পরিচালনা করেন।
এতে ১১ সেপ্টেম্বর ১৯৪৮ তারিখে তাকে আবার আটক করা হয় এবং বহিষ্কৃত হন। এরপর ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দলন ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট গঠন ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান ১৯৭০ সালের নির্বাচন এবং সর্বশেষ ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ রাত্রি পর্যন্ত বাংলার জনগণকে বঙ্গবন্ধু ধাপে ধাপে সার্বিকভাবে প্রস্তুত করতে পেরেছিলেন বলেই তিনি মহান জননেতা। তিনিই স্বাধীনতার মহান স্থপতি ।
তিনিই বঙ্গবন্ধু, তিনিই জাতির পিতা। তিনিই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। তিনিই বাঙালির একক অদ্বিতীয় অবিসংবাদিত মহাননেতা। বঙ্গবন্ধুর গোটা জীবন কেটেছে আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে।
তিনি ছিলেন সাধারণ মানুষের নেতা। তাঁরযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন সম্পন্ন হয়। একজন ছাত্রনেতা, সফল রাজনীতিবিদ ও রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তিনি ছিলেন অতুলনীয়। মাত্র ৫৫ বছরের জীবনের ১২ বছরই তিনি কাটিয়েছেন দেশের জন্য অন্ধকার কারাগারে।
বঙ্গবন্ধুর জন্য বাঙ্গালি জাতি হিসাবে আমাদের গৌরববোধ হয়।
লেখকঃ এম. তমিজ উদ্দিন ভূঁইয়া সেলিম, সদস্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ শ্রম ও জনশক্তি বিষয়ক উপকমিটি ।