শুরুতে অনেকটাই পিছিয়ে ছিল পাকিস্তান। ১০ ওভারে ভারত যেখানে সংগ্রহ করেছিল ৯৩, সেখানে পাকিস্তান করেছিল ৭৬। ব্যাটিং ইনিংসের শুরু থেকেই ধীর গতিতে রান তুলতে থাকে তারা। বাবর আজমের বিদায়ের পর ফখর জামানের দিকে তাকিয়েছিল দেশটির সমর্থকরা, তবে ফিল্ডিংয়ের পর ব্যাটিংয়েও হতাশ করেছেন তিনি। কিন্তু ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ বলে কথা, এসব উত্থান-পতন না থাকলে আর খেলাটা জমবে কিভাবে? নেওয়াজকে সঙ্গে নিয়ে লড়াইটা ভালোই জমিয়ে তুলেছিলেন রিজওয়ান। আর তাতেই শেষ ওভারে শ্বাসরুদ্ধকর লড়াইটা ৫ উইকেটে জিতে নেয় পাকিস্তান।
রোহিত শর্মা ও লুকেশ রাহুলে পর ভিরাট কোহলির ফিফটি। তাতে পাকিস্তানকে ১৮২ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দেয় ভারত। বড় সংগ্রহ তাড়া করতে নেমে যেমনটা আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে প্রত্যাশা ছিল, বাবর আজমরা সেটা পূরণ করতে পারেননি। উল্টো ১০ বল স্থায়ী বাবর আউট হয়ে যান চতুর্থ ওভারেই।
এশিয়া কাপের শুরু থেকেই ব্যর্থ পাক অধিনায়ক বাবর আজম। ব্যাট হাসেনি হংকংয়ের বিপক্ষেও। আজ ভারতের বিপক্ষে সুপার ফোরের প্রথম ম্যাচেও তিনি আউট হয়ে গেছেন ১৪ রান করে। প্রথম ওভার করতে এসেই বাবরকে ফেরান দলে ফেরা রবি বিষ্ণুই। ঘুরিয়ে খেলতে গিয়ে মিডউইকেটে ভারত অধিনায়কের হাতে ধরা পড়েছেন পাকিস্তান অধিনায়ক। এরপর অবশ্য বাবরকে অপেক্ষা করতে বলেছিলেন আম্পায়াররা, তবে বিষ্ণুইয়ের ফ্রন্ট ফুট ছিল পপিং ক্রিজের ভেতরেই।
বাবর আউট হলে ফখর জামানের দিকে তাকিয়েছিলেন সবাই। বোলিং ইনিংসের শেষ দুই বলে তার মিসফিল্ডিংয়ে ৬ রান বেশি এসেছে ভারতের স্কোরবোর্ডে। সেই পাপের প্রায়শ্চিত্য করার সুযোগ ছিল তার সামনে। কিন্তু সেই চাপ সামলাতে ব্যর্থ হন তিনি।
ফখর জামানকে চেপে ধরেছিলেন বিষ্ণুই ও চাহাল। চাহালকে টেনে চার মারার পর ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে এসে খেলতে চেয়েছিলেন ফখর, তবে লং অনে ভিরাট কোহলির হাতে ধরা পড়েন এ বাঁহাতি। ফেরার আগে ১৮ বলে করেন ১৫ রা। রিজওয়ানের সঙ্গে তাঁর জুটিতে উঠেছিল ৩০ বলে ৪১ রান।
ফখরের বিদায়ে যেন আরও বিপদে পড়ে পাকিস্তান। একদিকে ভারতের দেওয়া বড় লক্ষ্য, অন্যদিকে ক্রমেই বাড়ছিল রিকুয়ার্ড রানরেটের ব্যবধান। শুরুতে ধীরগতিতে রান তোলায় চাপের মুখে পড়েন রিজওয়ানরা। তবে চারে নাম মোহাম্মদ নেওয়াজের ঝড়ে সেই চাপ সামলে উঠে তারা। রিজওয়ানও ততক্ষণে তুলে নেন ক্যারিয়ারের ১৫ তম অর্ধশতক। ৩৭ বলে এই ফিফটি স্পর্শ করেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার।
আগের ম্যাচে হার্দিক ও ভুবনেশ্বরদের যে শর্ট বল ভুগিয়েছিল পাকিস্তানকে, আজ সেই বোলারদের ওপর চড়াও হয়েছিলেন তারা। হার্দিকের বলে রীতিমত তান্ডব চালিয়েছিলেন তারা। রিজওয়ানের সঙ্গে ৪১ বলে ৭৩ রানের একটি জুটি গড়েন নেওয়াজ। তবে ভুবনেশ্বরের কাঁটারে পরাস্ত হলে অর্ধশতক থেকে বঞ্চিত হন তিনি। তুলে মারতে গিয়ে লং অফে ধরা পড়েছেন নেওয়াজ। তবে এর আগে খেলেছেন ২০ বলে ৪২ রানের দুর্দান্ত ইনিংস। ৬টি চারের সঙ্গে মেরেছেন ২টি ছক্কা। টি-টোয়েন্টিতে এটিই তার সর্বোচ্চ রান।
এদিন পান্ডিয়াকে যেন পেয়ে বসেছিলেন তারা। ৪ ওভার বল করে ৪৪ রান হজম করতে হয়েছে হার্দিককে। তবে শেষ ওভারে রিজওয়ানের উইকেট নিয়ে ব্রেক থ্রো এনে দেন ভারতকে।
অফ স্টাম্পের বাইরের এই চ্যানেলে বল করে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করছিলেন। প্রথমবার হলেও পরের বলেই তুলে মারলেন, সঙ্গে বলের গতি কমিয়েছিলেন পান্ডিয়া। টাইমিং ভালো থাকলেও তাই ক্যাচ গেল সোজা লং অফে থাকা সূর্যকুমারের হাতে। ৫১ বলে ৭১ রানের ইনিংস খেলেন রিজওয়ান।
অষ্টাদশ ওভারের চতুর্থ বলেই আরেকটি উইকেট পেতেন বিষ্ণুই। অফ আউট সাইডের বলে স্লগ সুইপ করতে গিয়েছিলেন আসিফ, কিন্তু এজ হয়ে সেটা যায় শর্ট থার্ডে দাঁড়িয়ে থাকা আর্শ্বদীপের হাতে। কিন্তু লুফে নিতে পারেননি তিনি। বেঁচে যান আসিফ, তাতে ম্যাচটাও ভারতের হাত থেকে ফসকে যায়।
শেষ দুই ওভারে ২৬ রানের প্রয়োজন ছিল। শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচটি খুশদিল শাহ ও আসিফ শেষ করেছেন শেষ ওভারে বোলিংয়ে আসা আর্শ্বদীপের ১ বল হাতে রেখেই।
ভারতের হয়ে ভুবনেশ্বর কুমার, রভি বিষ্ণুই, আর্শ্বদীপ সিং, হার্দিক পান্ডিয়া ও যুজভেন্দ্র চাহাল প্রত্যেকেই নেন একটি করে উইকেট।