প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করার পর বারবার জাতীয় সংসদ ও সংবিধানের ওপর আঘাত এসেছে। গণতন্ত্রের যাত্রাপথে দেশকে অনেক ঘাত প্রতিঘাত পার হতে হয়েছে। জাতীয় সংসদের সুবর্ণজয়ন্তীর বিশেষ অধিবেশনে দেয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, সরকারের জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় জাতীয় সংসদ অনন্য ভূমিকা পালন করছে।
সংসদের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে শুক্রবার বিশেষ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের পর কার্যপ্রণালী বিধি ১৪৭ অনুযায়ী এক প্রস্তাব উপস্থাপন ও পরে দেয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।
শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে বলেন, ৭ এপ্রিল জাতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। ১৯৭৩ সালের ৭ এপ্রিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।
আমরা জাতীয় সংসদের ৫০ বছর পূর্তি সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছি। এ ৫০ বছরে জাতীয় সংসদের পথ চলা মসৃণ ছিল না। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে সংবিধানকে ক্ষত-বিক্ষত করেছে।
গণতন্ত্র ও জাতীয় সংসদের ওপর আঘাত হেনেছে। সংবিধানের চার মূলনীতিকে আঘাত করা হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচারের পথ বন্ধ করার জন্য ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় সংসদে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশকে কালো আইনে পরিণত করা ছিল সংসদের ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। পরে সপ্তম জাতীয় সংসদে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিলের মাধ্যমে ইতিহাসের নির্মম ও নিকৃষ্টতম ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার বিচারের পথ সুগম করা হয়। সরকারের জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় মহান জাতীয় সংসদ অনন্য ভূমিকা পালন করছে।
সংসদের স্থায়ী কমিটিগুলো এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সরকারের অধিকতর স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সংসদের স্থায়ী কমিটিগুলোর চেয়ারম্যান মন্ত্রীর পরিবর্তে সংসদ সদস্যদের নির্বাচিত করা হচ্ছে। বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের থেকে স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যানও নির্বাচিত করা হচ্ছে।
কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশন (সিপিএ) ও ইন্টারন্যাশনাল পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন (আপিইউ) দুটি বৈশ্বিক সংস্থা পার্লামেন্টারি এপেক্স বর্ডি প্রদান হিসেবে ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালে দশম জাতীয় সংসদের নেতৃত্ব দান বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে অধিষ্ঠিত এক অনন্য উচ্চতায়। দেশের জন্য বয়ে এনেছে এক বিরল সম্মান। এ অর্জন ছিল বাংলাদেশের গণতন্ত্রের প্রতি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের আস্থার প্রতীক।
এর আগে সংসদে উপস্থাপিত প্রস্তাবে বলা হয়, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ৫০ বছর পূর্তির এ মাহেন্দ্রক্ষণে সংসদের অভিমত এ যে, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সংসদীয় গণতন্ত্রের কেন্দ্রবিন্দুরূপে জনগণের জীবনমান উন্নয়ন ও আশা-আকাঙ্ক্ষার সব সফল বাস্তবায়নে অব্যাহতভাবে কার্যকর ও সক্রিয় ভূমিকা রাখবে।
এর মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র হবে, সুসংহত-শোষণমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে, সবার জন্য সাম্য ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে, সংবিধানের এ অঙ্গীকারসমূহ পূরণে আমরা সবাই একযোগে কাজ করবো। গড়ে তুলবো আগামীর সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত, ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা এ হোক আমাদের প্রত্যয়।
প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব উপস্থাপন ও তার বক্তব্যের পর বক্তব্য দেন- আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম।