বরিশালের উজিরপুরে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্যের সামনেই আওয়ামী লীগ নেতাকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও তার লোকজনের বিরুদ্ধে।
রোববার (২৬ মার্চ) সকাল ১০টার দিকে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
মারধর ও লাঞ্ছনার শিকার ইদ্রিস সরদার (৪৫) উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি।
ইদ্রিস সরদার জানান, স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পণ, কুচকাওয়াজ, মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছে উপজেলা প্রশাসন। সরকারি ডব্লিউ বি ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে কুচকাওয়াজ হবে। সেখানে উপজেলা প্রশাসন, পৌর মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ আওয়ামী লীগের নেতারা যায়। কিন্তু বরিশাল -২ আসনের সংসদ সদস্য মো. শাহে আলম ও উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান ইকবাল সেই মাঠে না গিয়ে আলোচনা সভার স্থান উপজেলা পরিষদের সভাকক্ষের সামনে ছিলেন।
তিনি বলেন, পরে আমি সেখানে এসে সংসদ সদস্যকে সালাম দেই। তখন উজিরপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান ইকবাল আমাকে দেখে কটূক্তি করেন। এর প্রতিবাদ করলে দুইজনের মধ্যে তর্ক হয়। এক পর্যায়ে ইকবাল সংসদ সদস্যের সামনে আমাকে মারধর শুরু করেন। এ সময় ইকবালের ক্যাডার কাজী রিয়াজ, পলাশ তালুকদার ও রুবেল হোসেনসহ ৭-৮ জন কিল-ঘুষি দিয়ে আমাকে আহত করে।
ইদ্রিস বলেন, পরে অন্যান্য নেতারা এসে আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দিয়েছে। এ ঘটনায় জেলা নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্বান্ত নেওয়া হবে।
মারামারি তার ও এমপির সামনে হয়নি জানিয়ে উজিরপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান ইকবাল বলেন, তিনি ও এমপি মিলনায়তনের সামনে দাড়িয়ে ছিলেন। সেখানে তার সাথে ইদ্রিস একটু বেয়াদপি আচরন করেছে। পরে ৩০/৪০ গজ দুরে এ নিয়ে লোকজন দৌড়াদৌড়ি শুরু করলে এমপি তাদের থামানোর নির্দেশ দেন।
মারামারির সময় অসুস্থ হওয়ায় বাসায় চলে যাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, বাসায় গিয়ে শুনতে পেয়েছি ইদ্রিসকে মারধর করেছে।
আর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ নিজেদের মধ্যে এ ধরনের বিষয় সমাধানের নির্দেশ দিয়েছেন বলেও জানান ইকবাল।
এদিকে ঘটনাটি দুঃখ জনক জানিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম জামাল হোসেন বলেন, বিষয়টি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ নেতৃবৃন্দকে জানানো হবে, তারা যে সিদ্ধান্ত দিবেন তা বাস্তবায়ন করা হবে।
যদিও এ বিষয়ে বরিশাল-২ আসনের সংসদ সদস্য শাহে আলমের আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি, তবে তিনি স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান ইকবাল ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইদ্রিস সরদারের সঙ্গে কথা কাটাকাটির পর হাতাহাতির ঘটনা ঘটলে সেখানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন তিনি।
এ বিষয়ে উজিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুল হাসান বলেন, কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
হাফিজুর রহমান ইকবাল গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েও নির্বাচনে হেরে যান। এদিকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করায় তিনি বহিষ্কৃত হলেও বর্তমানে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি পদে রয়েছেন তিনি।
এদিকে এ ঘটনার পর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এমপি শাহে আলম উপস্থিত থাকায় অংশ নেননি উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ সিকদার বাচ্চু, পৌর মেয়র গিয়াসউদ্দিন বেপারীসহ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা।
ক্ষোভ প্রকাশ করে উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ সিকদার বাচ্চু বলেন, একটি মহল স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে হামলা করে সরকারকে বির্তকিত করার চেষ্টা করছে। বির্তকিত ব্যক্তিরা অনুষ্ঠানে থাকায় তারা অংশ নেননি।