বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করে বলেছেন, ‘সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন জাতীয় দাবিতে পরিণত হয়েছে। কারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে অতীতের মতো সরকার আবার গ্রেপ্তার শুরু করেছে।’
শনিবার (১৫ জুলাই) সরকারের পদত্যাগ এবং নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ (বিএসপিপি) আয়োজিত সমাবেশ ও নীরব পদযাত্রা কর্মসূচিতে তিনি এ দাবি করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একটা গণতান্ত্রিক দেশে একটি দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ৪০ লাখ মামলা দেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে আপোস? এদের অধীনে নির্বাচন? বিএনপির সামনে বিকল্প কোনো পথ খোলা নেই। আমাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জাতিকে রক্ষা করতে হলে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। একদফা শুধু বিএনপি বা দলের ব্যক্তির ডাক নয়। এটা সমগ্র জাতির ঘোষণা।’
তিনি বলেন, ‘ইকবাল মাহমুদ টুকু, আমানউল্লাহ আমানকে শর্ত দিয়েছে। আমাদের চেয়ারপারসন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে শর্ত দিয়েছে। হাবিবকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে। কিছুদিন আগে ঈশ্বরদীতে মিন্টুসহ ১৪ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। তারা নাকি শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা করেছে। চিন্তা করতে পারেন?’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা সবচেয়ে বেশি অসহায় বোধ করি বিচার ব্যবস্থার কাছে, যখন আমরা কোর্টে যাই। দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় গণতান্ত্রিক নেতা খালেদা জিয়াকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে আদালতের মাধ্যমে। নিম্ন আদালত শাস্তি দিল, আবার উচ্চ আদালত সেই শাস্তি বাড়িয়ে দিল। কোথায় যাব, কার কাছে যাব? জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের যে মেয়েটা খাদিজাতুল কুবরা, সে ইউটিউবে একটা উপস্থাপনা করেছে, যার জন্য তাকে ১০ মাস ধরে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে আটকে রেখেছে।’
আইনজীবী, পেশাজীবী, বুদ্ধিজীবীদের একদফা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যেকোনো পরিবর্তন কখনোই সম্পূর্ণ হয় না, যতক্ষণ পর্যন্ত না পেশাজীবী, বুদ্ধিজীবীরা সামনে না আসেন। আপনাদের নিশ্চয় মনে আছে ডা. জোহার কথা। আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে তিনি যে ভূমিকা রাখেন। নব্বইয়ের দশকে ডা. মিলনের হত্যার পরই দেশের মানুষ নেমে এসেছিল। আপনাদের ভূমিকা গোটা জাতি দেখতে চায়।’
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘সংবিধান এখন অচল। আমরা চেষ্টা করছি দখলদারমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে। দখলদারের সঙ্গে আলোচনার কোনো প্রশ্নই আসে না। বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। যতদিন পর্যন্ত সে সময় না আসবে, আমরা আন্দোলন অব্যাহত রাখব।’
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আবদুল লতিফ মাসুম প্রমুখ। সমাবেশ শেষে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন থেকে পদযাত্রা করেন নেতারা। পদযাত্রাটি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে শেষ হয়। এতে আইনজীবী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, কৃষিবিদ, সাংবাদিক, শিক্ষক, কবি-সাহিত্যিকসহ বিভিন্ন পেশার নেতারা অংশ নেন।