বরগুনায় ছাত্রলীগের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ ও সংসদ সদস্যের সঙ্গে বাদানুবাদের ঘটনার পর আলোচনায় আসা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহরম আলীকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে নিযুক্ত করা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রেঞ্জ ডিআইজি এস এম আক্তারুজ্জামান। বেলা সোয়া ৩টার দিকে তিনি জানান, সার্বিক দিক বিবেচনা করে ও তদন্তের স্বার্থে মহরম আলীকে বরিশালে আমার কার্যালয়ে নিযুক্ত করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, সোমবার (১৫ আগস্ট) দুপুরে বঙ্গবন্ধুর শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি কমপ্লেক্সে ফুল দিতে যান জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। ফুল দেয়া শেষে ফেরার সময় শিল্পকলা একাডেমির সামনে পৌঁছলে ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত গ্রুপের সদস্যরা তাদের ওপর হামলা চালায়। এতে দুই গ্রুপের নেতাকর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষ চলাকালীন ইট-পাটকেলে পুলিশের একটি গাড়ির সামনের গ্লাস ভেঙে যায়।
ছাত্রলীগের সংঘর্ষ নিয়ে বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাড. ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর সঙ্গে বরগুনা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহররম আলীর বাদানুবাদ হয়। বাদানুবাদের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মুহূর্তে ভাইরাল হয়।
এমপির সামনে একজন পুলিশ কর্মকর্তার এ ধরনের আচরণের তীব্র নিন্দা জানান নেটিজেনরা।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা গেছে, বরগুনা জেলা শিল্পকলা একাডেমি থেকে শোক দিবসের আলোচনা সভা শেষ করে নেতাকর্মীদের নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন সংসদ সদস্য অ্যাড. ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু। শিল্পকলার গেট থেকে এমপিসহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দ বের হতে পারলেও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের গেটের ভেতর আটকে রাখে পুলিশ।
এ সময় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ছেড়ে দিতে বলেন এমপি শম্ভু। তবে এমপির সামনে এসে দাঁড়ান বরগুনা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহররম আলীসহ পুলিশ সদস্যরা। মহররম আলী এমপিকে উদ্দেশ্যে করে হাত উঁচিয়ে বলেন, ‘ওপর থেকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা আমাদের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট মারল কেনো? ওইখান থেকে কেনো ইট মারবে? আমরা কি অন্যায় করেছি, সেটার জবাব দিয়ে যাবে এখান থেকে।’
এ সময় এমপি বলেন, এ ঘটনা তো নাও ঘটতে পারতো। তখন মহরম আলী উচ্চ স্বরে বলেন, ‘আমরা তো কিছু করি নাই।’ এমপি বলেন, ‘তাহলে আপনারা থামাইয়া দেন।’
মহররম বলেন, ‘ইট মারবে কেন? আমাদের গাড়িতে ইট মারবে কেন? আমরা কি মারামারি করেছি এখানে নাকি কাউকে আমরা একটা ফুলের টোকা দিয়েছি আমরা। আমরা তো কাউর গায়ে হাত তুলিনি। আমরা তো কাউকে টাচ করিনি। আমারা তো প্রমিস করেছিলাম কারো গায় হাত তুলব না। এক পক্ষে ওদিকে আছে আরেক পক্ষে এদিকে।’ তখন এমপি বলেন, ‘ভালো কথা।’ মহররম বলেন, ‘এই যে নতুন গাড়িটাকে ভেঙে ফেলেছে। সরকার টাকা কোথা থেকে দেয়?’
এরপর শিল্পকলার মধ্যে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ওপর অ্যাকশন শুরু করে পুলিশ সদস্যরা। বেধড়ক লাঠিপেটা করা হয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের। যখন পুলিশ লাঠিপেটা করছিল সেখানেই দাঁড়িয়ে পুরো ঘটনা অবলোকন করছিলেন সাংসদ।
লাঠিপেটার পর পুলিশকে উদ্দেশ্য করে এমপিকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনারা অ্যাকশন নিয়ে ছাড়লেন’। তখন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এসএম তারিকুল ইসলাম ও মহররম আলীকে বলতে শোনা যায়, ‘না আমরা অ্যাকশন নেই নাই।’
তখন এমপি বলেন, ‘ছেলেরা অন্যায় করলে তাদের ধরে নিয়ে যেতেন, মারধর করলেন কেন? আমাদের সামনেই মারলেন আপনারা।’ এ সময় পুলিশ কর্মকর্তারা এমপিকে শান্ত করার চেষ্টা করে গাড়িতে তুলে দেন। এ সময় এমপি শম্ভুকে বলতে শোনা যায়, ‘১৫ আগস্টের মতো একটি দিনে আপনারা এটা না করলেও পারতেন।’