মো.আহসানুল ইসলাম আমিন,জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক:
মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার সড়ক ও মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অবৈধ যানবাহন।ধ্বংস হচ্ছে কোটি কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত এলজিইডির সড়ক থেকে শুরু করে গ্রামীণ সড়ক। মাটিবাহী ড্রাম ট্রাক, মাহেন্দ্রা এবং শ্যালো ইঞ্জিন চালিত অবৈধ যানবাহন চলাচলের কারণে পরিবেশ দূষণ ও সরকারী মূল্যবান রাস্তাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ উপজেলা বাসীর।
উপজেলার নানা স্থানের ফসলি জমির মাটি কেটে তা না ঢেকেই এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এতে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কসহ উপজেলার অন্যান্য সড়কে চলাচলকারী জনসাধারণকে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। মাটিবাহী ড্রাম ট্রাক ও মাহেন্দ্রা নামের যানবাহনগুলো চলাচলের কারণে ধুলার রাজ্যে পরিণত হয়েছে উপজেলার প্রধান সড়ক গুলো । এছাড়াও সড়কের আশপাশের ঘরবাড়ি, দোকানপাট ও গাছপালা ছেয়ে গেছে ধুলায়। অনেক সময় সামনে ট্রাক গেলে ধুলার কারণে পেছনে কিছুই দেখা যায় না। যাত্রী ও যানবাহন চালকদের শ্বাস নিতেও কষ্ট হয়। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, শ্বাসনালি দিয়ে ধুলাবালু প্রবেশের কারণে ফুসফুস ক্যান্সারের মতো জটিল রোগও হতে পারে। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে রাস্তাতে যানজট ও দুর্ঘটনা ঘটছে। প্রশাসনের নিকট এসব অনুমোদনবিহীন বালু ও ইটবাহী মাহেন্দ্র, ট্রাক্টর,ড্রাম ট্রাক এবং শ্যালো ইঞ্জিনচালিত গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
জানাগেছে, উপজেলা প্রশাসন একাধিকবার উপজেলা পরিষদ মিটিং এ অনুমোদনবিহীন বালু ও ইটভাটার মাটিবাহী মাহেন্দ্র,ড্রাম ট্রাক, ট্রাক্টর এবং শ্যালো ইঞ্জিনচালিত গাড়ি চলাচল নিষেধাজ্ঞা প্রদান করেন। নিষেধাজ্ঞা প্রদানের পর কিছু দিন সড়কে এসব অনুমোদনহীন যান সড়কে চলাচল বন্ধ থাকে। পরবর্তী-প্রশাসনকে ম্যানেজ করে প্রশাসনের নাকের ডগায়দিয়ে আবারও এসব অবৈধ যানবাহন দাপিয়ে বেড়াই গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো অভিযোগ স্থানীয়দের | সড়কে এসব যান চলাচলের কারণে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত কার্পেটিং উঠে | গিয়ে সড়কের অধিকাংশ জায়গা ভাঙাচোড়া। উপজেলার প্রায়ই প্রতিটি ইউনিয়নের প্রধান সড়কজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য ছোট-বড় গর্ত। এসব গর্ভে পানি-কাদা জমে একাকার অবস্থা। বৃষ্টি হলেই গর্তগুলোয় পানি জমে যায়। এই পানিকার্দা মাড়িয়ে চলাচল করছে পথচারী ও যানবাহন। ইজিবাইক, অটোরিকশার ঢাকা ছোট-বড় গর্ভে আটকে যায়। অনেক সময় ময়লা পানি গিয়ে পড়ে পথচারীর পায়ে। মোটরসাইকেল, ইজিবাইক এবং অন্য ছোট যানবাহন চলেছে হেলেদুলে। একারনে বেড়েছে জনদুর্ভোগ। ড্রামট্রাক ও মাহিন্দ্রা গাড়ি করে ইটভাটার মাটি, ইট,বালু বহনের সময় ঝাঁকুনিতে প্রধান
সড়কের পাশাপাশি গ্রামীণ সড়ক গুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শুধু তাই নয়, এসব যানে বালু পরিবহনের কারণে রাস্তার যেখানে সেখানে বালু পড়ছে। গাড়ীর চাকায় পিষ্ট হয়ে সেই বালুগুলো পাউডার হয়ে সামান্য বাতাসে ধুলো ঝড়ের সৃষ্টি হচ্ছে। এ উপজেলায় ৬২ টি ইটভাটা রয়েছে। এসকল ইটভাটা সারা বছর মাটি কিনে। এতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষি জমির ওপরের (টপ সয়েল) কেটে নেয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাটি কাটার (বেকু) মেশিন দিয়ে মাটিকাটা হয়। সেই মাটি ট্রাক ও মাহিন্দ্রা-টুলি দিয়ে ভাটায় বহন করে নিয়ে যায় চালকেরা। মাটি বহনের সময় গাড়ির মাটি ও রাস্তাঘাটে চলাচলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
সরেজমিন উপজেলার মালখানগর, ইছাপুরা , বালুচর, লতব্দী, বাসাইল, কেয়াইন, চিত্রকোট, রশুনিয়া, বয়রাগাদী ও শেখরনগর ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে প্রধান প্রধান সড়ক দিয়ে অবৈধ এসব যানবাহন চলাচল করছে। ফলে সড়ক গুলোতে ধুলার তাণ্ডব দেখা গেছে। বসতবাড়ি, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা- মসজিদ, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, চায়ের দোকান, মুদি দোকান, খাবার হোটেল, সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক, ব্যাংক-বীমা কোনো প্রতিষ্ঠানই ‘ধুলা সন্ত্রাসে’র আওতার বাইরে নেই।
সিরাজদিখান বাজারের পথচারী সাইদুল ইসলাম বলেন, এ সমস্যা আজকের নয়। অনেক দিন ধরে চলছে। রাস্তায় গাড়ি এসে থামার সঙ্গে সঙ্গে পেছন থেকে ধুলা এসে ভরে যায়। মিনিটের মধ্যে দোকানসহ তার শরীর সাদা হয়ে যায় বলেও জানান তিনি। মালখানগর ইউনিয়নের বাসিন্দা, ফরিদ হোসেন বলেন, মাহেন্দ্রা আর বালুর ট্রাকের কারণে প্রতিনিয়ত চলার পথে ধুলায় আমরা নাকাল। এছাড়াও প্রতিটি ইউনিয়নের প্রধান সড়ক ও গ্রামীণ সড়কের পাশে গড়ে ঘেঁষে উঠা অবৈধ বালুর গদির বালু বহনের কারনেও চলাচল করা অসম্ভব হয়ে উঠছে। তিনি অভিযোগ করে আরো বলেন মাঝে মধ্যে মনে হয় সরকার বুঝি জনগণের চলাচলের জন্যে নয় এ অবৈধ যানবাহন চলাচলের জন্যেই সড়ক বানিয়েছে । ইছাপুরা বাজারের পথচারী রনি বলেন, পরিবেশ দূষণ, শব্দ দূষণ ও সরকারী রাস্তা রক্ষার্থে এসব যান চলাচল বন্ধে প্রশাসনের কার্যকরি উদ্যোগের অভাবেই দিনদিন এই যানবাহন ব্যাপরোয়া হয়ে চলছে আশাকরি সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে অবৈধ এযান চলাচল বন্ধে উদ্যোগ নিবেন প্রশাসন ।
এবিষয়ে জানতে চাইলে সিরাজদিখান উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শরীফুল আলম তানভীর বলেন, গত ডিসেম্বর মাসের আইনশৃংখলা এবং সমন্বয় এই দুইটি মিটিংয়ে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। মাহেন্দ্রাসহ অনুমোদনহীন যানবাহন সড়কে যেন না চলাচল করতে পারে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা নিয়মিত এসব যানবাহনের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে যাচ্ছি।