জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি প্রবীণ রাজনীতিবিদ শিল্পপতি করিম উদ্দিন ভরসা মারা গেছেন।
শনিবার দুপুরে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়। তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বড় ছেলে সিরাজুল ইসলাম ভরসা ও আরেক ছেলে কামরুল ইসলাম ভরসা।
রোববার বিকালে রংপুরের হারাগাছ পৌর শহরের সারাই জামে মসজিদে জানাজা শেষে তার দাফন সম্পন্ন হবে বলে পরিবার জানিয়েছে। করিম উদ্দিন ভরসা বিএনপি থেকে নির্বাচিত রংপুর-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও ভরসা গ্রুপের চেয়ারম্যান প্রয়াত রহিম উদ্দিন ভরসার ছোটভাই।
সম্পত্তি নিয়ে সন্তানদের মধ্যে বিরোধ থাকায় মৃত্যুর সময় বাবার মুখ দেখতে না পাওয়ায় বেশ কয়েকজন সন্তান দুঃখ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রংপুরের প্রবীণ এই রাজনীতিবিদের মৃত্যুতে তার জন্মস্থান হারাগাছসহ রংপুর অঞ্চলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। জাতীয় পার্টি, আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন গভীর শোক প্রকাশ করেছে। তারা মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা ও শোকাহত পরিবারবর্গের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
পরিবার ও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, রংপুরের বিড়ি শিল্প নগরী খ্যাত হারাগাছে জন্ম নেওয়া শিল্পপতি করিম উদ্দিন ভরসা জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে যোগ দেন। পরে তিনি পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর তিনি সপ্তম ও অষ্টম নির্বাচনে রংপুর-৪ (পীরগাছা-কাউনিয়া) আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন।
করিম উদ্দিন ভরসা জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রংপুর জেলার একাধিকবার সভাপতি ছিলেন। তিনি বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা-মসজিদ ও এতিমখানাসহ বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠায় আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেছেন। তার প্রতিষ্ঠিত কেভি গ্রুপের বিভিন্ন কলকারখানায় প্রায় ১০ হাজারের বেশি মানুষ কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
করিম উদ্দিন ভরসার ১০ ছেলে ও ৬ মেয়ে। সম্পত্তি নিয়ে ছেলে-মেয়ে দুইপক্ষের মধ্যে চরম বিরোধ ছিল। বাবাকে নিয়ে সন্তানদের মধ্যে দুটি পক্ষ আদালতের দ্বারস্থও হয়েছিল।
পরিবার সূত্রে আরও জানা গেছে, মৃত্যুর আগে করিম উদ্দিন ভরসাকে আটকে রাখা হয়েছে কিনা, তা জানতে সম্প্রতি তাকে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। ছেলে সাইফুল উদ্দিন ওরফে শিমুল ভরসাকে এ নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত।
শিমুল ভরসার জিম্মায় রয়েছেন করিম উদ্দিন ভরসা- এমনটা দাবি করে তার ৯ সন্তানের হেবিয়াস করপাস (হাজিরের নির্দেশনা) আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে রুলসহ ওই আদেশ দেন হাইকোর্ট।
হাইকোর্টের ওই আদেশের বিরুদ্ধে গত ৬ মার্চ সুপ্রিমকোর্টে শিমুল ভরসা আবেদন করলে আদালত ৬ সপ্তাহের জন্য ওই আদেশ স্থগিত করেন।
ওই স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে শফিকুল ইসলামসহ ৯ সন্তান পুনরায় আবেদন করলে করিম উদ্দিন ভরসাকে এক শনিবার পরপর অর্থাৎ ১৫ দিন পর রংপুরের জজ আদালতে হাজির করে ছেলেমেয়েদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ করে দিতে নির্দেশ দেন উচ্চ আদালত।
কিন্তু কোনো শনিবারই রংপুরের আদালতে হাজির করেননি করিম উদ্দিন ভরসার অপর পক্ষের ছেলেমেয়েরা।
করিম উদ্দিনের বড়ছেলে সিরাজুল ইসলাম ভরসা বলেন, বাবার জানাজা ও দাফন রংপুরে সম্পন্ন করা হবে। আরেক ছেলে কামরুল ইসলাম ভরসা বলেন, আমরা বাবাকে দেখার জন্য তিন বছর ঘুরেছি। কিন্তু ওরা আদালতের নির্দেশেও বাবাকে দেখতে দেয়নি। মৃত্যুর সময় বাবার মুখ দেখতে পারলাম না, এর চেয়ে বড় দুঃখ আর কী হতে পারে।যুগান্তর