সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচয়ের সূত্র ধরে ব্ল্যাকমেইলিং ও পর্নোগ্রাফির মাধ্যমে চাঁদাবাজির অভিযোগে চক্রের মূলহোতাসহ ৭ জনকে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা ও দক্ষিণখান থেকে মঙ্গলবার গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১। তাদের মধ্যে দুইজন নারীও রয়েছেন।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, চক্রের মূলহোতা আল মাহমুদ ওরফে মামুন (২৬), তার সহযোগী মাস্তুরা আক্তার প্রিয়া (২১), আকরাম হোসেন ওরফে আকিব (২০), তানিয়া আক্তার (২৫), রুবেল (৩২), মহসীন (২৬) ও ইমরান (৩২)।
এই অভিযুক্তদের কাছ থেকে অশ্লীল ছবি ও গোপন ভিডিও ধারণ কাজে ব্যবহৃত ১৪টি মোবাইল ফোন ও ২টি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়েছে।
র্যাব গ্রেরপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পেরেছে, চক্রটি ২ বছরে ৫০ জনের বেশি ভিকটিমের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। চক্রের সদস্যরা রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় ওই অর্থ ব্যয় করে বিলাসবহুল জীবন-যাপন করছিলেন।
র্যাব জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে একজন ভুক্তভোগী র্যাব-১ এ অভিযোগ করেন যে, চলতি বছরের ২২ জুলাই ফেসবুকের মাধ্যমে মাস্তুরা আক্তার প্রিয়ার সাথে তার যোগাযোগ হয়। গত ১০ আগস্ট ভিকটিমকে প্রিয়া কৌশলে রাজধানীর একটি অভিজাত আবাসিক এলাকায় তার বান্ধবীর বাসায় নিয়ে যান। রুমের ভেতরে প্রবেশের পর পূর্বপরিকল্পিতভাবে প্রিয়া ও তার সহযোগীরা জোর করে ভিকটিমকে বিবস্ত্র করে আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করে। পরে ক্যামেরায় ধারণকৃত এসব অশ্লীল ভিডিও দেখিয়ে মুক্তিপণ হিসাবে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে অভিযুক্তরা।
এরপর ভিকটিমের কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক ১লাখ টাকা ও ব্যাংক চেকের মাধ্যমে ৪ লাখ টাকা জোর করে আদায় করে।
লোকলজ্জার ভয়ে ভিকটিম ওই সময়ের ঘটনাটি একটি স্পর্শকাতর ও বিছিন্ন ঘটনা ভেবে কোথাও কোনো অভিযোগ না করে নীরব থাকেন। কিন্তু এ ঘটনার এক সপ্তাহ পরে পুনরায় প্রধান অভিযুক্ত আল মাহমুদ ভিকটিমের কাছে আরও ২ লাখ টাকা দাবি করে এবং অর্থ না দিলে ধারণ করা অশ্লীল ভিডিও ও ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয়। এমন অভিযোগ পাওয়ার পর র্যাব-১ ছায়াতদন্ত ও গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। এরই প্রেক্ষিতে চক্রের সাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন বলেন, চক্রটির মূলহোতা আল মাহমুদ এবং তার নারী সহযোগী তানিয়া আক্তার ও মাস্তুরা আক্তার প্রিয়া। এই দুই নারী সদস্যের ছবি ও ভূয়া পরিচয় ব্যবহার করে আল মাহমুদ বিভিন্ন ব্যক্তিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রলোভন দেখিয়ে নির্দিষ্ট কোনো আবাসিক ফ্ল্যাট বা হোটেলে আমন্ত্রণ জানাতেন। ভিকটিমরা ওই স্থানে উপস্থিত হলে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে অন্যান্য সদস্যরা কৌশলে সেখানে উপস্থিত হয়ে বিভিন্ন ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে ভিকটিমদেরকে জিম্মি করে বিপুল পরিমাণ অর্থ আদায় করত।
এই কৌশল অবলম্বন করে এই চক্রটি গত ২ বছরে ৫০ জনের বেশি ভিকটিমের কাছ কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।