মুহাম্মদ আলী, স্টাফ রিপোর্টার: বান্দরবানের রোয়াংছড়িতে স্থানীয় প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) অফিসের কার্য্য সহকারি ও হিসাব রক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) নাছির উদ্দিনের বিরুদ্ধে ঠিকাদারি ব্যবসা, অফিসে অনিয়ম ও দূর্নীতির মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নাছির উদ্দিনের কারিশমার কারণে ২০২১-২০২২ইং অর্থ সালে বিশেষ বরাদ্দ উপজেলা পরিষদ ভবন মেরামত প্রকল্পের আওতায় উপজেলা পরিষদ ভবন-১ ও ২, দুইটি কাজে মিলে ৫ লক্ষ করে ১০ লক্ষ টাকা এবং উপজেলা পরিষদ গেজেটেড কোয়াটার ও নন-গেজেটেড কোয়াটার মিলে ৬ লক্ষ টাকা করে দুইটিতে ১২ লক্ষ টাকার ব্যয়ে মেরামত কাজে ৪টি প্যাকেজে প্রাক্কলিত মূল্যের মোট ২২লক্ষ টাকা। মেরামত কাজে বিজ্ঞপ্তি, টেন্ডার ও কোন নোটিশ ব্যতীত নামে মাত্র রেজুলেশন দেখিয়ে প্রকৃত ঠিকাদারকে না দিয়ে কার্য্য সহকারি মো. নাছির উদ্দিন দ্য মামনি কনস্ট্রাকশন লাইসেন্সের মাধ্যমে ঠিকাদারি কাজটি ভাগিয়ে নিয়েছে বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
দ্য মামনি লাইসেন্সের প্রকৃত মালিক ওয়াংনুচিং মারমা সাথে ফোনে যোগাযোগ করে পাওয়া না গেলেও লাইসেন্সের মালিককে (ওয়াংনুচিং মারমা) স্বামী অংশৈমং মারমা সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমাদের লাইসেন্স এর মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে, প্রায় ৩/৪ বছর আগে। তবে সেই লাইসেন্সটি এলজিইডি অফিসের কার্য্য সহকারি নাছির উদ্দিন নিয়ে গেছে। এব্যাপারে বিস্তারিত নাছির উদ্দিন বলতে পারবে।
সূত্রে জানা গেছে, নাছির উদ্দিনে দুর্নীতির কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে স্থানীয় ও পেশাদার ঠিকাদাররা। ২০২১-২০২২ অর্থ সালে গৃহীত কর্মসূচী উপজেলা পরিষদ ভবন মেরামতে কাজের ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির পন্থা অবলম্বন করে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ নাছির উদ্দিনে বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, তিনি একজন সরকারি কর্মচারী হয়ে ঠিকাদারি ব্যবসায় জড়িত।
আরো জানা গেছে, সরকারি অফিসের কর্মচারি হয়ে অফিসের কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে সু-কৌশলে টেন্ডারের পরিবর্তে কোটেশন (আর.এফ.কিউ) দেখিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন লক্ষ লক্ষ টাকা। এদিকে সরকার হারাচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকার রাজস্ব।
জানা যায়, অফিসের সিনিয়র কর্মকর্তা থাকলেও নিজের পারসেন্টিস পেতে টেন্ডার বিজ্ঞাপন, সিডিউল ক্রয়-বিক্রয়, টেন্ডার খোলা এবং ঠিকাদারি বিল পাস করার কাজে দিক নিদের্শনা নাছির উদ্দিনের কথা মতো হয়। অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ পেশাদার ঠিকাদাররা নাছির উদ্দিনের কাছে জিম্মি হওয়ার কারনে তার অপসারণ চাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদাররা।
ঠিকাদারদের সূত্রে জানা যায়, সিডিউলে অনুযায়ি কাজ করে বিল নিতে গেলে নাছির উদ্দিনকে অর্থ দিতে হয়। আর তা না দিলে বিলের ফাইলের কাজ না করে ফেলে রেখে দেন টেবিলে। যার কারণে এলজিইডি কর্তৃক প্রচুর উন্নয়ন কাজ করলেও টেকসই কাজ হচ্ছে না।
এব্যাপারে ভাইস চেয়ারম্যান আথুইমং মারমা বলেন, বর্তমানে উপজেলা পরিষদ ভবন-২, টাইলস বসানোর চলমান কাজটি এলজিইডি’র কার্য্য সহকারি ও হিসাব রক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) নাছির উদ্দিনের কাজ। সেই কাজটি নাছির উদ্দিন থেকে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে কিনছি। তিনি আরো বলেন, আমি নিজেও একটি কাজ পেয়েছি। সে কাজটিও করছি।
এলজিইডি অফিসের অভিযুক্ত এই কার্য্য সহকারি নাছির উদ্দিনের কাছে এব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি এবিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ। এছাড়া প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখতে চাইলে তিনি দেখাতে পারেননি।
রোয়াংছড়ি উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) জেলা অফিসের সিনিয়র প্রকৌশলী মো. জামাল উদ্দিন বলেন, সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী হয়ে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে সরাসরি অংশ গ্রহণ, শেয়ারদার এবং ঠিকাদারি কাজ করতে পারবেন না। নাছির উদ্দিন একজন এলজিইডি অফিসের কর্মচারী হয়ে কাজ করে থাকলে, তাকে মৌখিক ও লিখিত নোটিশ দেওয়া হবে এবং উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হবে।