ইসমাইল আশরাফ,বিশেষ প্রতিনিধিঃ
একটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থেকে বিশেষ পন্থায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় বিভিন্ন এলাকায়। যখন বিদ্যুৎ চাহিদা তুলনায় উৎপাদন পরিমাণের চেয়ে কম হয়,তখন এক এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রেখে অন্য এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু রাখা হয়। যাতে ওভার লোড পড়ে পুরো সিস্টেম বন্ধ হয়ে না যায়। বিদ্যুৎ এর এই ভারসাম্য রক্ষার্থে সাময়িক বিদ্যুৎ বন্ধ রেখে কিছু সময় পর আবার তা চালু করার ব্যবস্থাকে লোড শেডিং বলা হয়।
বিদ্যুৎ মানব জিবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় যা ছাড়া নগর উন্নয়ন বা গ্রামীণ উন্নয়ন কোনক্রমেই সম্ভব নয়। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিদ্যুৎ ছাড়া জিবন প্রায় অচল। কিন্তু রাজধানী ঢাকাসহ দেশে প্রায় সব জায়গায়ই লোডশেডিং যে হারে বৃদ্ধি পেয়েছে তাতে চরম দুর্ভোগ নেমে এসেছে জনজীবনে। কারণ সহনীয় মাত্রায় হয় লোড শেভিং হয় না। সকাল, দুপুর এমনকি গভীর রাতেও বারবার চলে যাচ্ছে বিদ্যুৎ। আর এর প্রভাব কলকারখানা, স্কুল, কলেজ থেকে শুরু করে হাসপাতাল পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। মূলতঃ বিদ্যুৎ বিহীন জিবন চরমভাবে অসহনীয় করে তুলেছে মানবজীবন।
বিদ্যুৎ এর লোড শেডিং ঠেকাতে সরকার নিয়েছেন নানা পদক্ষেপ। যেমন, অফিসে এসির ব্যবহার সীমিত রাখা। এসির তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার উপরে রাখা। অপ্রয়োজনীয় বাতি ও ফ্যান এর ব্যবহার থেকে বিরত থাকা। দিনের বেলায় জানালার পর্দা সরিয়ে রাখা, সূর্যের আলো ব্যবহার করা। কক্ষের বাইরে অবস্থানকালীন সময়ে ফ্যান-লাইট, এসি ইত্যাদি বন্ধ রাখা। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের লক্ষ্যে এলইডি লাইটসহ স্মার্ট বৈদ্যুতিক সামগ্রী ও প্রযুক্তি ব্যবহার করা। নিজস্ব স্থাপনার রুফটপ সোলার সিস্টেম এর নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ এবং সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা।
এত কিছুর পরও কি কমেছে শোড শেডিং! সত্যি সাধারণ মানুষ আজ বড় অসহায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে উত্তরার একজন বাসিন্দা জানান- এখন আর প্রশ্ন করবেন না- কারেন্ট কতবার যায়? বলুন- দিনে ক’বার আসে। রাত দুটার সময় যদি বিদ্যুৎ চলে যায় কে ঘুমোতে পারে? হাসপাতালের রোগীদের কথা ভাবুন তো। উন্নয়নের রূপরেখা যদি এতটাই উজ্জ্বল হয় তবে কেন আমরা এখনো অন্ধকারে বসবাস করছি। আমার দাবি রইলো, আপনাদের মাধ্যমে, আমি বলি বিদ্যুৎ দিনে একবার যাক্। কিন্তু বারবার যেন না যায়। নগরের জিবন বড় কষ্টের, আমরা বিদ্যুৎ বিভ্রাট চাই না।।
গত ৪ অক্টোবর জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকায় ঢাকাসহ দেশের প্রায় অর্ধেক এলাকা বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়ে। অনেকের মোবাইলে চার্জ না থাকায় কারো সাথেই যোগাযোগ করতে পারেন নি। বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের জন্য চারটি বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিরও দায়ভার কম নয়। ইতোমধ্যেই পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। তাই দায়ীদের চিহ্নিত করতে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোকে নির্দেশণা দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। আর ইতোমধ্যেই নিজেদের দায় খতিয়ে দেখতে কাজ শুরু করেছে চার বিতরণ কোম্পানিগুলো।
ডেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমির কাউসার আলী মুঠোফোনে “বাংলা ৫২ নিউজ” কে বলেন- বিদ্যুৎ বিভাগের নির্দেশে তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। গ্রিড বিপর্যয়ের জন্য দায়ি কাউকে খুঁজে পাওয়া গেলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিদ্যুৎ খাত বিশেষজ্ঞ ও ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাবের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এম শামসুল আলম বলেন, কেউ গ্রিড কোড মানতে চায় না। প্রয়োজনে বিদ্যুতের সরবরাহ(লোড) নিজেরাই কমাতে পারে বিতরণ কোম্পানি। তাই তাদের দায় এড়ানোর সুযোগ নেই এখানে। তারা ভোক্তার কাছ থেকে টাকা নিয়ে মুনাফা লাভ করছে, বিভিন্ন প্রকল্প তৈরি করছে। তাহলে বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনা কেন স্বয়ংক্রিয় হবে না। কেন ভুক্তভোগী হবে সাধারণ মানুষ।
পিজিসিবির তদন্ত কমিটির সদস্যরা বলছেন, মূলতঃ দুটি কারণেই দেশে বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটেছে। এর একটি কারণ হলো বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণে সমন্বয়ের অভাব। আর দ্বিতীয়টি হলো বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার বিধিবদ্ধ নিয়ম (রুলস্ বুক) ও গ্রিড কোড কঠোরভাবে না মানা। বিদ্যুৎ সরবরাহে জড়িত সবাইকে রুল বুক ও গ্রিড কোড মানতে হবে। এর ব্যত্যয় হলেই গ্রিড বিপর্যয়ের ঝুঁকি থাকে। নিয়মনীতি মেনে চললেই কিছুটা কমবে বিদ্যুৎ বিভ্রাট।।