‘হে কেমব্রিজ, আমরা বাঁচতে চাই’, ‘স্পিক আপ, স্ট্যান্ড আপ’, ‘জাস্টিস ফর ফয়সাল’, ‘স্টপ পুলিশ ব্রুটালিটি’ স্লোগানে প্রকম্পিত হল যুক্তরাষ্ট্রের বস্টনের কেমব্রিজ শহর।
পুলিশের গুলিতে যেভাবে নবীন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী সৈয়দ ফয়সাল আরিফের মৃত্যু হয়েছে, তা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না প্রবাসীরা। আরিফের মৃত্যুকে তারা বর্ণনা করছেন ‘পুলিশি হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে।
এর বিচারের দাবিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে কেমব্রিজ সিটি হল প্রাঙ্গণে হয় প্রতিবাদ সমাবেশ। প্রবাসী বাংলাদেশিরা ছাড়াও আরিফের সহপাঠীরা অংশ নেন সেখানে।
কম্যুনিটি লিডার ইকবাল ইউসুফ সেই সমাবেশে বলেন, “বস্টন হচ্ছে সবচেয়ে শান্তিপ্রিয় মানুষের সিটি। আমরা কখনো কোনো দাঙ্গায় লিপ্ত হইনি। তবু কেন আমাদের টার্গেট করা হয়েছে? কেন আমাদের নিষ্পাপ আরিফের বুকে বিদ্ধ হবে পুলিশের বুলেটে।”
মা-বাবা একমাত্র ছেলে আরিফ বছর সাতেক আগে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। ২০ বছর বয়সী এই তরুণ পড়ালেখা করছিলেন ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটস আমহার্স্টের বস্টন ক্যাম্পাসে।
আরিফের বাবা মো. মুজিবউল্লাহ স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেছেন, “ও ছিল খুবই মেধাবি। আশা করেছিলাম সে ইঞ্জিনিয়ার অথবা ডাক্তার হবে। কিন্তু এখন সব আশা শেষ হয়ে গেল।”
শান্তশিষ্ট কেমব্রিজ শহরের চেস্টনাট স্ট্রিটে ঘটনাটি ঘটে বুধবার রাত সোয়া ১১টার দিকে। হটলাইনে পুলিশ খবর পায়, এক তরুণ ছোরা হাতে একটি অ্যাপার্টমেন্টের জানালা দিয়ে বেরিয়েছে। এরপর সেখানে পুলিশ উপস্থিত হয় এবং তাদের গুলিতে প্রাণ যায় আরিফের।
মিডলসেক্স ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি ম্যারিয়েন রায়ান বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, পুলিশের হটলাইনে ফোনটা করেছিলেন কেমব্রিজপোর্টের এক বাসিন্দা। তিনি বলেছিলেন, এক তরুণ খালি গায়ে ঘরের জানালা দিয়ে লাফিয়ে রাস্তায় নেমেছে, তার হাতে বড় আকারের একটি ছুরি রয়েছে। তরুণটি নিজেকে ছুরিকাঘাতে আহত করার চেষ্টা করছে।
এ খবর জেনে ডজনখানেক পুলিশ সেখানে যায়। তারা ওই তরুণকে থামতে বললে তাতে সাড়া না দিয়ে তিনি চেস্টনাট স্ট্রিট দিয়ে দৌড়াতে থাকেন। পুলিশের পক্ষ থেকে ছুরিটি ফেলে দিতে বলা হয়।তরুণটি তখন ছুরি উঁচিয়ে পুলিশের দিকে তেড়ে যায় বলে ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির ভাষ্য।
তিনি বলেন, “এ অবস্থায় পুলিশ তার দিকে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। গুরুতর অবস্থায় বস্টন জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।”
কেমব্রিজের পুলিশ কমিশনার ক্রিস্টিন ইলো সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “যে কোনো মৃত্যুই বেদনাদায়ক। আমরা আরিফের মৃত্যুকেও সহজভাবে নিচ্ছি না। সরেজমিনে তদন্ত চলছে। যদি অন্যায়ভাবে গুলি চালানো হয়ে থাকে তাহলে সংশ্লিষ্ট অফিসারের বিরুদ্ধে অবশ্যই যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট অফিসারকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।”
স্থানীয় একটি টিভিতে দেওয়া সাক্ষাতকারে ওই এলাকার বাসিন্দা এক নারী বলেছেন, আরিফের হাতে কোনো ছুরি তিনি দেখেননি।
এ পরিস্থিতিতে পুলিশ ও ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির পক্ষ থেকে সবার কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছে। জানতে চাওয়া হয়েছে পুলিশ গুলি করার সময় আরিফের হাতে আদৌ কোনো ছুরি ছিল কিনা।
সিটি হল প্রাঙ্গণের প্রতিবাদ সমাবেশে কম্যুনিটি লিডার ইউসুফ বলেন, “প্রাথমিকভাবে জানা যাচ্ছে যে পুলিশের বেশ কয়েক রাউন্ড গুলির মধ্যে অন্তত পাঁচটি বিদ্ধ হয়েছে আরিফের বুকে। এ অবস্থায় নীরব থাকার অবকাশ নেই। আমাদের সংঘবদ্ধ আওয়াজ ওঠাতে হবে এহেন বর্বরতার বিরুদ্ধে।”
বস্টন আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি ইকবাল ইউসুফ বলেন, পুলিশের এ ধরনের আচরণে তিনি ‘হতবাক’।
“বস্টন হচ্ছে সবচেয়ে শান্তিপ্রিয় মানুষের সিটি। এখানে যদি পুলিশের গুলিতে মানুষের প্রাণ ঝরে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রে কেউ নিরাপদ নন ভাবতে হবে।”
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব নিউ ইংল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট পারভিন চৌধুরী, সেক্রেটারি তানভির মুরাদ, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ইউসুফ চৌধুরী, সেলিম জাহাঙ্গীর ও আশরাফউদ্দিন তালুকদারও প্রতিবাদ সমাবেশে অংশ নেন।
কেমব্রিজের মেয়র সম্বুল সিদ্দিকী বিদেশ থেকে ফিরবেন সোমবার। সেদিন বিকালে কম্যুনিটির নেতাদের সাথে তিনি বৈঠকে বসবেন।