হঠাৎ করেই রাজধানীতে আবারো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। রাজধানীর শাহজাহানপুরে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু, কলেজছাত্রী প্রীতি এবং চিকিৎসক আহমেদ মাহী বুলবুল হত্যাকাণ্ডের মধ্যে চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এসব ঘটনায় আন্ডারওয়াল্ডের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলেও জানিয়েছেন স্বরাষ্টমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এরিমধ্যে রাজধানীতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে পেশাদার সন্ত্রাসী পিস্তল জাহিদ। নির্ভরযোগ্য সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তাকে নিয়েই ভোরের পাতার আজকের বিশেষ প্রতিবেদন।
সৈয়দ জহির আহসান জাহিদ। পরিবারের রাখা এই নামের বাইরে তিনি এখন পরিচিত ‘পিস্তল জাহিদ’ নামে। দুর্ধর্ষ এই সন্ত্রাসীর জীবনাচরণ যেন রোমাঞ্চকর কোনো সিনেমাকেও হার মানায়। ক্ষমতার অন্ধ দাপট আর দুর্বিনীত চরিত্রের জাহিদের পরিচিতি কেবল তার বসবাসের এলাকাতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, অপরাধমূলক কাজে তার বিস্তৃতি ছড়িয়েছে বিভিন্ন এলাকায়। প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই পেশাদার সন্ত্রাসীর নানান চমকপ্রদ তথ্য।
পিতা সৈয়দ মাহবুবুল আহসান (মৃত) – এর পুত্র সৈয়দ জহির আহসান জাহিদ পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদের ধ্যানধারণায় বিশ্বাসী সংগঠন ‘নাজারিয়া-ই-পাকিস্তান’ এর সাথে সংযুক্ত এবং এর বাংলাদেশ শাখার আমির। তার পরিবারের একাধিক সদস্যের সাথেও এই সংগঠনের সংশ্লিষ্টতা বিদ্যমান। সৈয়দ জহির আহসান জাহিদ এর অপরাধ কর্মকাণ্ড এবং তার বিরুদ্ধে অভিযোগসমূহের বিস্তারিত ভোরের পাতার হাতে এসেছে।
খুন, দখল, আধিপত্য বিস্তার, অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র, হুমকি ধামকি, মামলাবাজি, চাঁদাবাজি, রাষ্ট্রদ্রোহিতা, সিন্ডিকেট বাণিজ্য, প্রতারণা, জালিয়াতি থেকে শুরু করে অপরাধ রাজ্যের অলিতে গলিতে বাস এই জাহিদের। পারিবারিক সহায়তা এবং নিজের আধিপত্যকে কাজে লাগিয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েমের আভিলাষ ছিল জাহিদের। পাকিস্তানী জাতিয়তাবাদে বিশ্বাসী চাচা সৈয়দ নাসরুল আহসান (মৃত) ছিলেন জাহিদের অপরাধ কর্মের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক। একাধিক মামলার এজাহারভুক্ত ফেরারি আসামি জাহিদ মূলত ঢাকার রমনা এবং গাজিপুরের কাপাসিয়া এলাকা ঘিরে গড়ে তুলেছিল তার মূল অপরাধ ক্ষেত্র।
ঢাকাস্থ শান্তিনগর নিবাসী জিনাত সুফিয়া নামের এক নারী ঢাকা জেলা প্রশাসন বরাবর জাহিদের আগ্নেয়াস্ত্র বাজেয়াপ্তকরণ আবেদনের আর্জি চেয়ে লেখা এক দরখাস্তে বিস্তারিত তুলে এনেছেন জাহিদের অপরাধের ঘটনাসমূহ। উক্ত চিঠি থেকে জানা যায়, ২০১৩ থেকে ২০২১ অবধি উক্ত নারী নিজে এবং তার পরিবারের একাধিক সদস্য অব্যাহত অত্যাচার, ভীতি এবং সম্পত্তি বেদখলের আশংকায় দিনাতিপাত করছেন। একই চিঠিতে তিনি জাহিদকে সিদ্ধেশ্বরী এলাকার একজন পেশাদার সন্ত্রাসী অভিহিত করে তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা ও জিডি। অস্ত্রের লাইসেন্স করার পর অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে জাহিদ। সুফিয়া জিনাত তার অভিযোগনামায় উল্লেখ করেছেন যে, তিনি ২০১৩ সালের ২০ জুলাই জাহিদের বিরুদ্ধে রমনা থানায় প্রাণনাশের হুমকির মামলা (নং ১৩০৯) করেন। আর এরপর থেকেই আরো বেশি মাত্রায় চড়াও হয় জাহিদ।
সপরিবারের সুফিয়া জিনাতকে হুমকিও দেয় জাহিদ। এমনকি বকেয়া বিল চাইতে গিয়েও জাহিদের রোষানলে পড়ে সুফিয়া জিনাত এবং তার স্বামী। সর্বশেষ ০৩রা জুন ২০২১ সালে বেলা ১০ টা নাগাদ বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক (কেয়ারটেকার) বকেয়া ইউটিলিটি চাইতে গেলে কেয়ারটেকার সুহাগ মিয়াকে বাম কোমরে গুজে রাখা অস্ত্র দেখিয়ে সরাসরি গুম ও হত্যার হুমকি দেয় জাহিদ, যা সেখানে উপস্থিত সকলেই প্রত্যক্ষ করেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা যায়, সে সময়ে পুলিশের স্টীকার লাগানো রুপালি রঙের ঢাকা মেট্রো-গ ১৪-৬১১৬ প্লেটের গাড়ির দিকে ইঙ্গিত করে জাহিদ এবং সোহাগ মিয়াকে গুম করার হুমকি দেয়। ঠিক যেমনটি করেছিলেন সুফিয়া জিনাত এবং তার স্বামীর সাথে। উক্ত ঘটনায় সোহাগ মিয়া ২১ জুন ২০২১ সালে রমনা থানায় জিডি করেন (নং ১০৯২)।
জাহিদের মূল পরিচয় তিনি আন্ডার গ্রাউন্ড সংগঠন ‘নাজারিয়া ই পাকিস্তান’ বাংলাদেশের আমির। এই সংগঠন প্রতিষ্ঠা পায় বিএনপির প্রথম শাসনামলে ১৯৯২ সালে। মূলত পাকিস্তানি ফান্ডে বাংলাদেশে জিন্নাহবাদি আদর্শ বিস্তার- এই সংগঠনের প্রাথমিক উদ্দেশ্য। আর এই সংগঠনের সাথে জাহিদের সম্পৃক্ততা মূলত শেকড়ের, কেননা, জাহিদ পারিবারিকভাবেই পাকিস্তানপন্থী মতবাদে বিশ্বাসী। জাহিদের দাদা পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের স্পিকার সৈয়দ জিয়াউল আহসান এবং পিতা সৈয়দ মাহবুবুল আহসান ছিলেন পাকিস্তান নেভির কর্মচারী। ’৯২ সাল থেকেই সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েই আজকের সন্ত্রাসী এই জাহিদ। ২০২০-এ চাচা সৈয়দ নাসারুল আহসানের মৃত্যুর পর থেকে সংগঠনের শীর্ষ পদ পান জাহিদ এবং তার মূল সহকারী হন তারই ছেলে জুবায়ের আহসান। স্বাধীন সার্বভৌম দেশে বসে ভিনদেশি এজেন্ডার এজেন্ট জাহিদ গং চেয়েছিল বাংলাদেশকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্রে পরিণত করতে।
মামলার বাদী তার আবেদনে উল্লেখ করেন, ২৩ সিদ্ধেশ্বরী লেন ঢাকা ১২১৭ এর বাড়ি জোরপূর্বক দখলে নিয়ে ‘নাজারিয়া ই পাকিস্তান’ এর কার্যালয় স্থাপন করতে চেয়েছিলেন জাহিদ। জিনাত সুফিয়ার শ্বশুর আব্দুল মোতালেব ভূঁইয়া ১২ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৭ সালে রেজিস্ট্রিকৃত ১১৪০ নং সাফ কবলা দলিল মূলে ১৪.৮০ শতাংশ জমি মোসাঃ মাহাতাব বেগমের থেকে এস এ আর এস ও মহানগর জরিপে ৫ তলা ভবন অধিভুক্ত করেন। পরবর্তীতে ১২ জুন ২০১২ সালে আব্দুল মোতালেব মারা গেলে ত্যাজ্যভুক্ত সম্পত্তিতে মুসলিম ফারায়েজ অনুযায়ী ১ স্ত্রী, ২ পুত্র এবং ২ কন্যা ওয়ারিশান হন। যেখানে জাহিদের কোন সম্পত্তি প্রাপ্তির সুযোগই নেই, সেখানে ১৭ মে ২০০০ সালে জালিয়াতির মাধ্যমে নামজারি ও জমাভাগ কেস (১১১৬/১৬-১৭) করে নিজের নামে একাংশ নিয়ে নেয় সে। জাহিদের বানানো জাল দলিল এবং হলফনামা পরবর্তিতে আদালতের নির্দেশক্রমে তদন্ত করে সি আই ডি (সি আর মামলা নং ৫৫৭/২০২০), যেখানে স্পষ্ট প্রমাণিত হয়েছিল নথি জালের বিষয়টি। ২৩ সিদ্ধেশ্বরী লেনের ৫ তলা বাড়ির নিচতলা এই কায়দায় জবর দখল করে জাহিদ। ২৩ হোল্ডিংস এর বাড়িটি নতুন নকশায় ডেভেলপার দিয়ে বানানোর সিদ্ধান্ত হলেও তাতে বাঁধ সাধে জাহিদ এবং নিজের আধিপত্য গড়তে ভুয়া দলিল তৈরি করে জাহিদ। একই সাথে হয়রানি করতে মোকদ্দমা দায়ের করে, জিনাত সুফিয়া এবং অন্যান্য ভাড়াটিয়াদের হুমকি দেয় জাহিদ, যা পেনাল কোডের ৪২০/৪০৬/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/৫০৬ ধারার লঙ্ঘন এবং অপরাধ।
একই বাড়ির অন্যতম মালিক আব্দুর রব ভুঁইয়া ০৬ জুন ২০২১ এ সি আই ডি দপ্তরে জবানবন্দিতে বর্ণনা করেছেন কিভাবে জাহিদ অস্ত্র সমেত তাকে হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন। রমনা থানার নন এফ আই আর নং ৬৯/২০ নথি থেকে জানা যায়, মামলার বাদী ২৩ হোল্ডিংস নিবাসী হাসিব মোহাম্মদ মুহতাদি (রাফান, ২৪) তার নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন অবসর প্রাপ্ত সার্জেন্ট গাজি আশরাফকে নিয়োগ দেন। এর প্রেক্ষিতে ক্ষুব্ধ হয়ে বিবাদী জাহিদ অস্ত্র বহনের মিথ্যা মামলা দায়ের করে। শুধু তাই নয়, উক্ত নিরাপত্তা কর্মীর ঘরের সিসিটিভি ভাঙচুর ও হুমকি প্রদান করে জাহিদ।
জাহিদের সন্ত্রাসী তৎপরতার সবচেয়ে আলোচিত হয় ২২ অগাস্ট ২০২০ সালে রাত ১০:৩০ নাগাদ প্রকাশ্যে টোক নয়ন বাজার বাইপাস মোড়ে স্থানীয় শ্রমিক লীগ নেতা ইদ্রিসের বুকে ০২ জন সঙ্গিসহ পিস্তল ঠেকিয়ে হত্যাচেষ্টার মাধ্যমে। যদিও এলাকাবাসীর তৎপরতায় ইদ্রিসকে তখন বাঁচানো গেলেও এর দিন কয়েক পরেই জাহিদের নানা বাড়ির পুকুরপাড় এর দক্ষিণ পাশ থেকে ইদ্রিসের মরদেহ মেলে আর এরপরই সঙ্গীসহ গা ঢাকা দেয় জাহিদ। কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, হত্যার ০২ মাস আগ থেকেই ইদ্রিসের সাথে জাহিদের জমি জমা কেন্দ্রিক বিরোধ ও কথা কাটাকাটি হয়, পরবর্তীতে ইদ্রিস জাহিদকে এড়িয়ে চলা শুরু করে। কিন্তু পেশায় সন্ত্রাসী জাহিদ বিষয়টি সহজভাবে নেয়নি, পরিকল্পনা আঁটে ইদ্রিসকে হত্যার। ঘটনার দিন রাত ১০.৩০ নাগাদ ইদ্রিস সিগারেট খেতে ঘর থেকে বের হয় কিন্তু রাত গড়িয়ে সকাল হলেও না ফেরায় বাদীনির ছেলের বউ সুমাইয়া বিষয়টি জানান। পরবর্তী দিন খোঁজাখুঁজির পর মেলে ইদ্রিসের লাশ। লাশ উদ্ধারের পর ঘটনাস্থল থেকে দ্রুত পালিয়ে যায় জাহিদ। পরবর্তীতে আসামিরা গ্রেপ্তার হওয়ার সময়ে জাহিদ ২ টি অস্ত্র সমেত আটক হয়। তারা স্বীকার করে, পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ২৪/০৮/২০২০ রাত ১২.৩০ ঘটিকা থেকে ২৫/০৮/২০২০ সকাল ০৮ ঘটিকার ভেতর ধারালো অস্ত্র ও প্রহার করে গুরুতর জখম করে হত্যা করে। গ্রেপ্তার অপর দুই আসামি রোকনুজ্জামান বিপ্লব ও আলমগীর হোসেন সুমন ঘটনা স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়। পুলিশের তৎপরতায় ২৬/০৮/২০২০ দুপুর ৩ ঘটিকায় আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গাজীপুর শহিদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজে সুরতহালের পর কাপাসিয়া থানার অফিস ইনচার্জ মো রফিকুল ইসলাম (বিপি ৬৯৯৮০০৮৫২৯) ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার এজাহার দেন। বর্তমানে আলোচিত এই মামলার চূড়ান্ত তদন্ত করছে পি বি আই।
পরবর্তীতে ২০২০ সালেই জাহিদ গ্রেপ্তারের পর অনুসন্ধানে দেখা যায়, তার থেকে জব্দকৃত গোলা বারুদের সাথে তার ক্রয়কৃত গুলির তারতম্য। ক্রয় রশিদ অনুযায়ী রাইফেল ও পিস্তল মিলিয়ে ১৫০ রাউন্ড গুলি কিনেছিল জাহিদ কিন্তু গ্রেপ্তার কালে নথি অনুযায়ী পাওয়া যায় মোট ৬২ রাউন্ড গুলি। অর্থাৎ ৮৮ রাউন্ড গুলির কোন সদুত্তর দিতে পারেনি জাহিদ। পেশা এবং রাজনৈতিক পরিচয়ে একজন সন্তাসী জাহিদের এত বিপুল সংখ্যক গুলির হদিস না মেলা এক বিশাল আশংকার জন্ম দেয়। ২০২০ সালে জাহিদ যখন সর্বশেষ তার অস্ত্রের নবায়ন করে তখন তার নিকট থাকা গুলির সংখ্যা খতিয়ে দেখার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, কেননা এর উপরই ভিত্তি করে জানা যাবে জাহিদের অস্ত্রের ব্যবহার সম্পর্কে।
তদন্তে একথা পরিষ্কার হয়ে যায় যে, ইদ্রিস হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার সময়ে উদ্ধারকৃত (লাইসেন্সকৃত) আগ্নেয়াস্ত্রের বাইরেও জাহিদের কাছে অবৈধ অস্ত্র এবং কমপক্ষে ২৭ রাউন্ড গুলি রয়েছে যা সেই পিস্তলের সাথে ব্যবহৃত হয়েছে।
সন্দেহ আরো দানা বাঁধে যখন অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে হেফাজতের তান্ডর এবং ভয়ংকর হলি আরটিসান হামলার সময়ে নিজের বাসগৃহে জাহিদের অনুপস্থিতি। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য জাহিদ অস্ত্রসহ ‘অপারেশন ক্লিন হার্ট’-এ আটক হলেও পরবর্তীতে তৎকালীন বিএনপি জামায়াত সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় মুক্তি পায়। বিএনপি জামায়তের রাজনীতির সাথে জাহিদ-জুবায়ের এর সম্পর্কের পরিচয়ের বিস্তর প্রমাণ মেলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
ইদ্রিস হত্যা মামলার ১ নম্বর আসামী জাহিদ জামিনে বের হয়ে ২০২১ সালে জিনাত সুফিয়ার কর্মচারী তোফায়েলের রুমে ঢুকে তার বেধড়ক মারধর এবং প্রাণনাশের হুমকি দেয়, যা রেকর্ড হয় সিসিটিভি ফুটেজে। এর প্রেক্ষিতে ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১ এ রমনা থানায় ডায়েরি (নং ১০৯০) করেন তোফায়েল। চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় এক রাজনৈতিক নেতা আধিপত্য বিস্তারেও ব্যবহার করেছিল জাহিদের অস্ত্র, যা সংবাদ আকারে প্রকাশ পায় স্থানীয় খবরের কাগজে। এতসবের পাশাপাশি ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময়ে অস্ত্র জমার বিধান থাকলেও জাহিদকে প্রকাশ্য অস্ত্র হাতে দেখা যায়- যা ফৌজদারি অপরাধ। একই সাথে লাইসেন্সকৃত অস্ত্র দিয়ে প্রাণনাশের হুমকি এবং হত্যাচেষ্টা ‘আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন ও ব্যবহার নীতিমালা ২০১৬’ এর লঙ্ঘন। উল্লেখ্য, জাহিদের এর নামীয় ২ টি অস্ত্রের লাইসেন্স রয়েছে যার একটি .২২ বোর রাইফেল (লাইসেন্স নম্বর ৩৬/২৪/২০১২) এবং আরেকটি এন বি পি .২২ পিস্তল (লাইসেন্স নম্বর ৩৬/১৩/২০১৬)।
এদিকে, ভুক্তিভোগীরা দাবি করেছেন, জাহিদ এবং তার সঙ্গীদের জননিরাপত্তার বিধানে বড় হুমকি হিসেবে বিবেচনা তাই যথেষ্ট সমর্থনের দাবি রাখে। এর আলোকেই জাহিদকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে তার বিরুদ্ধে নন এহ আই আর মামলা (নং ৬৯/২০২০) দায়ের করা হয়। নিজের নামে একাধিক মামলা থাকলেও প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ভুয়া মামলায় সিদ্ধহস্ত জাহিদ। সুফিয়া জিনাতের বিরুদ্ধে এ যাবত ১২ টি মামলা দায়ের করেছে জাহিদ যার বেশিরভাগই বেকসুর খালাসের রায়ে নিষ্পত্তি হয়েছে। এসব মামলায় কেবল সুফিয়া জিনাত নয়, বরং আব্দুর রব ভুঁইয়া সহ যাদেরকে তার সন্ত্রাসী কাজ আর জবর দখলে বাঁধা মনে হয়েছে তাদের সবাইকেই মামলাভুক্ত করেছে জাহিদ।
সন্ত্রাসী কাজের বাইরে জাহিদের চোরাকারবারির ব্যবসার আলামত পেয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। প্রায়শই ওমরা ভিসায় সৌদি আরব যাতায়াত করত জাহিদ, তাই সোনা চোরাচালানে তার সম্পৃক্ততার আভাসা পাওয়া যায়। প্রথমে মগবাজারে এবং পরে স্টেডিয়াম মার্কেটে (দোকান নং-১০/১) পুত্রের নামে ‘জুবায়ের জেট ভিশন’ নামে অবৈধ ও চোরাই ইলেক্ট্রনিক্স এবং মোবাইলের ব্যবসা করত জাহিদ। এছাড়াও ‘বার্তা বাজার’, ‘ক্রাইম অফ টুয়েন্টিফোর মিডিয়া’ এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক এবং ‘আল মুস্তাফা ফাউন্ডেশন’এর সভাপতি পরিচয় দিত সে। এসব ভুঁইফোড় সংবাদ মাধ্যমের পরিচয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সাথে সখ্যতা বজায় রাখতো জাহিদ।সূত্র- ভোরের পাতা