গেল ক’মাসে মেয়েদের ফুটবলে ঘটে গেছে অনেক কিছু। ভাঙনের সুর বাজতে শুরু হয়েছিল দলে। ভেঙেছেও। হঠাৎ ঝড় যেমন লন্ডভন্ড করে দিয়ে হয়ে যায় সব, বাংলাদেশের নারী ফুটবলেও তেমন ঘটনাই ঘটে গেছে সম্প্রতি।
তবে ঝড়ের পর তো ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই শুরু করতে হয়। জীবনের মতো ফুটবলেও এ বাস্তবতা মেনে নিচ্ছেন সাবিনা খাতুনরা। সবকিছু ভুলে নেপালের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ দিয়ে মাঠে ফিরতে তৈরি বাংলাদেশের মেয়েরা।
অধিনায়ক সাবিনা অবশ্য এটা বলতে ভুলছেন না, যা কিছু ঘটে গেছে তা হতে পারতো অনেক সুন্দরভাবে। দেশ রূপান্তরকে সাবিনা এভাবে বললেন, ‘আমার মনে হয় যেটা হয়েছে, সেটা একটু গুড ওয়েতে হলে ভালো হতো। একটু পজিটিভ ওয়েতে হতে পারতো।’
গত বছর সেপ্টেম্বরে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে শিরোপা জয় করে বাংলাদেশ। ফাইনালে স্বাগতিক নেপালকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় তারা। কিন্তু সেই ম্যাচের পর মেয়েদের আর মাঠে নামা হয়নি। মূল জাতীয় দলের কোনো খেলা ছিল না। শুধু অনুশীলনেই সীমাবদ্ধ ছিল জাতীয় দলের কার্যক্রম। হতাশায় খেলা ছেড়ে দিয়েছেন সিরাত জাহান স্বপ্না, আঁখি খাতুনের মতো জাতীয় দলের প্রতিষ্ঠিত তারকা।
ক্যাম্প থেকে বাদ পড়ে আগেই অবসর নিয়েছেন সাফজয়ী দলের আরও দুই সদস্য- সাজেদা খাতুন ও আনুচিং মগিনি। জাতীয় দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন গোলাম রব্বানী ছোটনও। দীর্ঘদিন যিনি মূল জাতীয় দলের সঙ্গে মেয়েদের বিভিন্ন বয়সভিত্তিক দলের ডাগআউটও সামলেছেন।
শোনা যায়, বিভিন্ন দাবিতে জাতীয় নারী দলের খেলোয়াড়রা মাঝে বিদ্রোহও করেছিলেন। বন্ধ রেখেছিলেন অনুশীলন। সবকিছু মিলিয়েই নারী ফুটবলে গুমোট আবহ তৈরি হয়েছিল। অথচ গেল ক’বছর দেশের ফুটবলকে জাগিয়ে রেখেছিল আসলে এই মেয়েরাই।
এই যে এতোকিছু ঘটল, মাঠে খেলা থাকলে হয়তো এর অনেক কিছুই এড়ানো যেত। কিন্তু দুর্ভাগ্য সাবিনাদের, সাফ জয়ের পর আর আন্তর্জাতিক ম্যাচই খেলা হয়নি তাদের।
১০ মাসের বিরতি ভেঙে অবশেষে বৃহস্পতিবার নেপালের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই মাঠে ফিরতে যাচ্ছে মেয়েরা। যে নেপালকে হারিয়েই সাফে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল তারা। একই দলের বিপক্ষে আগামী রবিবার দ্বিতীয় প্রীতি ম্যাচ খেলবে তারা।
ছোটন দায়িত্ব ছাড়ার পর এই দুই ম্যাচে বাংলাদেশের ডাগআউটে থাকবেন মাহবুবুর রহমান লিটু। দীর্ঘদিন যিনি ছোটনের সহকারী হিসেবে ছিলেন। আর স্বপ্না-আঁখিদের জায়গায় বয়সভিত্তিক দল থেকে সাহেদা আক্তার রিপা, আফঈদা খন্দকার প্রান্তিদের মতো নতুনরা প্রথমবারের মতো এসেছেন মূল জাতীয় দলে।
দুটি প্রীতি ম্যাচের আগে বুধবার বাফুফে ভবনে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন ছিল বাংলাদেশ ও নেপাল দলের। সংবাদ সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশ অধিনায়ক সাবিনা মুখোমুখি হলেন দেশ রূপান্তরের। এ সময় দলের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, ‘মোটামুটি ভালো। তবে একটু কঠিনই হবে সবকিছু। যে পরিস্থিতির তৈরি হয়েছিল, খেলোয়াড়দের ওপর সেটার প্রভাব কিছুটা পড়েছিল। সর্বোপরি খেলোয়াড়দের তো এটা (কোচ ছোটনের পদত্যাগ) মানতেও হবে। তবে আমার মনে হয় যেটা হয়েছে সেটা একটু গুড ওয়েতে হলে ভালো হতো, একটু পজিটিভ ওয়েতে হতে পারতো।’
সাবিনা বলে যান, ‘যতটা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খেলোয়াড়দেরকে নিয়ে… সবকিছু মিলিয়ে খেলোয়াড়দেরও মন খারাপ ছিল। যেহেতু এখন মাঠে নামতেছি, এখন তো খেলতে হবে দেশের জন্য।’
ছোটন না থাকায় নিজের দায়িত্বও অনেক বেড়ে গেছে বলে মানছেন সাবিনা, ‘আমার কাজ বরাবরই একটু চ্যালেঞ্জিং। মারিয়া, মনিকারাও তো এখনও ইমম্যাচিউরড। ওদেরকে ম্যানেজ করাও অনেক সময় কঠিন হয়ে যায়। তবে ওরা এখন বুঝতেছে, দায়িত্বশীল হচ্ছে।’
গেল কিছুদিনের নেতিবাচক বিষয়গুলো ভুলে নেপালের বিপক্ষে দুই ম্যাচে জয়ের লক্ষ্য নিয়েই নামবে বাংলাদেশ। সাবিনা জানালেন সেটিই। তবে মাঠে সিরাজ জাহান স্বপ্নাকে মিস করবেন বলে স্বীকার করলেন তিনি। জাতীয় দলে ফরোয়ার্ড লাইনে দীর্ঘদিন যার সঙ্গে জুটি বেধে খেলেছেন তিনি। সাবিনা বলেন, ‘ওর একটা অভাব থাকবে…। তবে দেখা যাক সর্বোপরি কী হয়।’