আব্দুর রহমান রাসেল,রংপুর ব্যুরো: মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণার পর উত্তরে বইছে আনন্দ উচ্ছ্বাসের ঢেউ। নতুন করে স্বপ্ন বুনছেন রংপুর অঞ্চলের দুই কোটি মানুষ। বঙ্গবন্ধুর কন্যার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শিগগিরই এই কাজের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি। এমনটাই আশা তিস্তা পাড়ের মানুষের।
তিস্তা ঘিরে মহাপরিকল্পনা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা উত্তরের জনপদে। যে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে বদলে দেবে এ অঞ্চলের অর্থনীতি। তবে দোলাচালে থাকা রংপুর অঞ্চলের মানুষগুলো ফের আশার আলো দেখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মহাসমাবেশ ঘিরে। উত্তরের জনপদকে নিরাশ করেননি বঙ্গবন্ধু কন্যা। গত ২ আগস্ট রংপুর জিলা স্কুল মাঠের লাখো মানুষের মহাসমাবেশে ১২৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৭টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও পাঁচটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন শেষে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ঘোষণায় নতুন জাগরণের সৃষ্টি হয়েছে তিস্তা পাড়ের মানুষের মধ্যে। দ্রুত তিস্তা নদীর খনন কাজ শুরু হলে, ভিটে-মাটিসহ রক্ষা পাবে ফসলি জমি। তিস্তা ওপারে নেপাল ও আসামের সীমান্ত দিয়ে হিমালয়কেও ভাগ করেছে। তাই, ওখানে তিস্তার নাম তিস্তাং। উজানের তিস্তা নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর কুড়িগ্রাম হয়ে গাইবান্ধার হরিপুরঘাটে ব্রহ্মপুত্র নদে মিলেছে। তিস্তার উৎপত্তির কথা উল্লেখ আছে পুরাণ কাহিনীর সঙ্গে। দেবী পার্বতীর বক্ষ থেকে নেমে এসেছে তিস্তা – এ কথাও আছে পুরাণে। তিস্তা জন্ম থেকেই বয়ে চলছিল। কোথাও বাধা ছিল না। বাধাহীন তিস্তা উজান ও ভাটিতে ছিল স্রোতোবহা। গোটা তিস্তার দৈর্ঘ্য ৩১৫ কিলোমিটার। বাংলাদেশ অংশে এর দৈর্ঘ্য ১১৫ কিলোমিটার। কাউনিয়া উপজেলার চর গুনাই গ্রামের মিজানুর রহমান মিজান বলেন, বর্তমান সরকার বাহাদুর যদি দ্রুত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে তাহলে দুই কোটি মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হবে। পাশাপাশি ৪০ বছর থেকে তিস্তা পাড়ের মানুষের চাওয়া পাওয়া পূরণ হবে। বানভাসী আলতাফ হোসেন বলেন, তিস্তার পানি আশার ফলে আমাদের ফসলি জমি নষ্ট হচ্ছে। আমরা শুনেছি সরকার তিস্তা নদী খনন করবে। তারাতাড়ি নদী খনন হলে কৃষি জমি গুলোতে একাধিক ফসল চাষ আবাদ করতে পারবো। ছাওলার চরে পানি বন্দী রমজান আলী বলেন, এই বছর চতুর্থ দফায় বেড়েছে রংপুরে তিস্তার পানি। প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চলের ঘর-বাড়িসহ ফসলি জমি। ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে পরিবার পরিজন নিয়ে। আবার পানি কমতে শুরু করলেও বেড়েছে তিস্তা নদী ভাঙ্গন। তারা আরো বলেন,নদীর গর্ভে বিলিন হচ্ছে একাধিক ফসলের আবাদি জমি। আমারা ত্রাণ চাই না। সরকারের কাছে আমারা চাই বাসস্থান। তাঁর ঐতিহাসিক এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে নতুন স্বপ্নের যাত্রায় ছুটছেন এ অঞ্চলের মানুষ। চলতি অর্থবছরেই তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন কাজের শুভ উদ্বোধন হবে বলে মনে করছেন তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের নেতারা। তিস্তাপারের লোকজন বলেন, তিস্তা প্রতিবছর চ্যুট চ্যানেল সৃষ্টি করে গতিপথ পরিবর্তন করছে। বর্ষাকালেও অনেক সময় তিস্তা শুকিয়ে যায়। এখানকার জেলে- মাঝিরাও তিস্তার মূলধারা চিনতে পারেন না। তিস্তার মূলধারাটি প্রবাহমান করে তুলতে ব্যাপক খননই হবে তিস্তা মহাপরিকল্পনার মূল কাজ। ব্যাপক খননের মাধ্যমে তিস্তার মূলধারা পুনরুদ্ধার করা গেলেই পানি দ্রুত সাগরে নামতে পারবে। খননের ফলে যে পরিমান মাটি পাওয়া যাবে তা দিয়ে নদীর দুই ধারে ১৭৪ কিলোমিটার ভূমি গঠিত হবে। পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুল হক সুমন বলেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে স্বার্বিক ভাবে উত্তরবঙ্গের মানুষ লাভবান হবে। মৎস্য থেকে শুরু করে কৃষি নির্ভর অর্থ্যনীতি বেগবান হবে। উত্তরবঙ্গ লাভবান হলেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানী বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণায় তিস্ত পাড়ের জনপদে আনন্দের জোয়ার বইছে। আমরা আশা করি সরকার তার এই মেয়াদ কালে তিস্তা মহাপরিকল্পনা উদ্বোধন করবেন।
এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার বলেন, ‘ ব্যাপক খননের মাধ্যমে তিস্তার দুই পাড়ে পুনরুদ্ধারকৃত ১৭৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে আমরা ইকোপার্ক, ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন করতে পারবো। আধুনিক কৃষি,মৎস্য খামার ও জনবসতি গড়তে পারবো। স্যাটেলাইট টাউন গড়ে তুলতে পারবো। তিস্তা খননের ফলে ব্রম্মপুত্র দিয়ে যমুনার সঙ্গে সারা বছর একটি নৌ-কানেক্ট্রিভিটি সচল থাকবে।’তিস্তা পানি বন্টন চুক্তি ছাড়া তিস্তা মহাপরিকল্পনা কতোটা কার্যকর হবে – এমন প্রশ্নের জবাবে কবির বিন আনোয়ার বলেন, ” প্রবাহমান পানির মাত্র আট শতাংশই আমরা ব্যবহার করতে পারি। বাকি পানি সাগরে পতিত হয়। তিস্তা মহাপরিকল্পনার মৌলিক বিষয়টি হবে বর্ষা মৌসুমের পানি ধরে রেখে পরবর্তীতে প্রয়োজন অনুসারে তা ব্যবহার করা। তিনি বলেন, “বৈশিক মন্দার কারণে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কমে গেলেও আমরা চুপ করে বসে থাকবো না।পদ্মা সেতুর মতো নিজেদের টাকায় ফেইজ বাই ফেইজ আমরা তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজ সমাপ্ত করবো। শুধু ঘোষণাই নয়,এই প্রকল্প প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা বাস্তবায়ন করে দেখাবো।
পানি উন্নয়ন বোর্ড অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোঃ মাহবুবর রহমান জানান, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বিষয়ে এখনো কোন সরকারি ভাবে নির্দশনা পাইনি। তবে আগে থেকেই আমাদের একটা এষ্টাডি চলছে। ১১৫ কিলোমিটার তিস্তা কোথায় ভাঙ্গন আছে এগুলো নিয়ে কাজ চলমান আছে। ৮ থেকে দশ হাজার কোটি টাকার যে তিস্তা মহাপরিকল্পনা, তা বাস্তবায়ন হলে উদ্ধার হবে একশ ৭৪ বর্গকিলোমিটার জমি। চিলমারী বন্দরের সঙ্গে যুক্ত হবে তিস্তার দুই পাড়ের স্যাটেলাইট শহর। এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত দিয়ে তিস্তা মহাপরিকল্পনা উদ্বোধনের অপেক্ষায় তিস্তাপাড়ের মানুষ।